শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯, ০১:২৯:২৯

নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিবারের শেষ পরিণতি কী হয়েছিল?

নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিবারের শেষ পরিণতি কী হয়েছিল?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : সিরাজউদ্দৌলা তার নানা নবাব আলীবর্দী খানের কাছ থেকে ২২ বছর বয়সে ১৭৫৬ সালে বাংলার নবাবের ক্ষমতা অর্জন করেন। তার সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হন।

রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে। পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর মীরজাফর রাজধানীতে পৌঁছে নবাবকে খুঁজে না পেয়ে চারদিকে লোক পাঠান। 

১৭৫৭ সালের ৩ জুলাই সিরাজউদ্দৌলা মহানন্দা নদীর স্রোত অতিক্রম করে এলেও তাতে জোয়ার-ভাটার ফলে হঠাৎ পানি কমে যাওয়ায় নাজিমপুরের মোহনায় এসে তার নৌকা চরে আটকে যায়।

তিনি নৌকা থেকে নেমে খাবার সংগ্রহের জন্য একটি মসজিদের কাছে বাজারে আসেন। সেখানে কিছু লোক তাকে চিনে ফেলে অর্থের লোভে মীর কাশিমের সৈন্যবাহিনীকে খবর দেয়। 

কথিত আছে, এক ফকির এখানে নবাবকে দেখে চিনে ফেলে। ওই ফকিরকে নবাব এক সময় শাস্তি দিয়েছিলেন। ফলে সেই ফকির নবাবের খবর জানিয়ে দেয়।

মীর কাশিমের বাহিনী এসে সিরাজউদ্দৌলাকে বন্দি করে রাজধানী মুর্শিদাবাদে পাঠিয়ে দেয়। বন্দি হওয়ার সময় নবাবের সাথে ছিলেন তার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা বেগম এবং চার বছরের কন্যা উম্মে জহুরা। 

পরদিন ৪ জুলাই মীরজাফরের আদেশে তার ছেলে মীরনের তত্ত্বাবধানে মুহম্মদী বেগ নবাবকে হত্যা করে। নবাবের মৃত্যুর পর স্ত্রী লুৎফুন্নেসা এবং তার শিশুকন্যাকে মীর জাফরের ছেলে মীরনের নির্দেশে ঢাকায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল। 

সিরাজের পতনের পূর্ব পর্যন্ত ষড়যন্ত্রকারীরা ঘষেটি বেগমকে ব্যবহার করলেও পতনের পর আর তাকে কোন সুযোগই দেওয়া হয়নি। এ সময় তারা তাদের মা শরফুন্নেসা, সিরাজের মা আমেনা, খালা ঘষেটি বেগম, সিরাজের স্ত্রী লুৎফুন্নেসা ও তাঁর শিশুকন্যা সবাইকে ঢাকার জিঞ্জিরা প্রাসাদে বন্দি করে রাখে।

ঢাকার বর্তমান কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা প্রাসাদে তারা বেশ কিছুদিন বন্দি জীবন যাপন করার পর মীরনের নির্দেশে ঘষেটি বেগম ও আমেনা বেগমকে নৌকায় করে নদীতে ডুবিয়ে মারা হয়। ক্লাইভের হস্তক্ষেপে শরফুন্নেসা, সিরাজের স্ত্রী লুৎফুন্নেসা এবং তার শিশুকন্যা রক্ষা পান। 

পরবর্তীতে তাদের মুর্শিদাবাদে আনা হয়। ইংরেজ সরকারের দেওয়া সামান্য বৃত্তির ওপর নির্ভর করে তাদের জীবন ধারণ করতে হয়। সিরাজের মৃত্যুর দীর্ঘ ৩৪ বছর পর লুৎফুন্নেসা ১৭৯০ সালে মারা যান।

মীর জাফর ও মীরন পরাজিত নবাব সিরাজকে হত্যার পর আমেনা এবং পরিবারের অন্যান্য নারীদের কয়েকটি নিকৃষ্ট নৌকায় চড়িয়ে অত্যন্ত অপমানজনকভাবে ও অবহেলার সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগরে পাঠিয়ে দেন। 

‘সিয়ারুল মুতাখখেরিন’র লেখক গোলাম হোসাইন তাবাতাবাই লিখেছেন, ‘সিরাজ পরিবারকে জাহাঙ্গীরনগর পাঠানোর কিছুদিন পর মীরন জাহাঙ্গীরনগরের শাসনকর্তা যশরথ খানকে লিখিত নির্দেশ দেয়, যাতে তিনি দুজন হতভাগ্য বয়স্কা মহিলাকে (ঘষেটি বেগম ও আমিনা) হত্যা করেন।’

কিন্তু শাসনকর্তা যশরথ খান এ নারী ও তাদের স্বামীদের কাছে তার উন্নতি ও অন্নের জন্য ঋণী ছিলেন। তাই তিনি মীরনের এই ঘৃণ্য নির্দেশ পালন করতে অসম্মতি জানান। 

পরে ঢাকার জিঞ্জিরা প্রাসাদে সিরাজের মা আমেনা এবং খালা ঘষেটি বেগম দীর্ঘদিন বন্দি থাকার পর তাদের পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে