রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৯:২৪:৪৯

রক্তে রাঙা এই হ্রদে নামলেই 'পাথর' হয়ে যায় পশু-পাখিরা!

রক্তে রাঙা এই হ্রদে নামলেই 'পাথর' হয়ে যায় পশু-পাখিরা!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : হ্রদে নামলেই ‘পাথর’ হয়ে যাচ্ছে পশুপাখি। ঘটনাটি শুনতে অবাক লাগলেও এমন একটি হ্রদ রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার উত্তর প্রান্তে। হ্রদটির নাম নেট্রন। এটি লবণাক্ত হ্রদ বলে পরিচিত।

৫৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে ও ২২ কিলোমিটার প্রস্থ এ হ্রদটিতে এওয়াসো নায়গ্রো নদীর পানি এসে পড়ে। এ ছাড়া আশপাশের বেশ কয়েকটি উষ্ণ প্রস্রবণের পানিও এ হ্রদটিতে পড়ে। ফলে বিভিন্ন খনিজে সমৃদ্ধ এ হ্রদের পানি।

হ্রদটি নিয়ে বহু অনেক কল্প-কাহিনী শোনা গেলেও কোনোদিনই প্রামাণ্য কিছু মেলেনি। ২০১১ সালে নিক ব্রান্ডট নামে এক ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফার নেট্রন হ্রদের সামনে গিয়ে চমকে গিয়েছিলেন। হ্রদের পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল অসংখ্য পশুপাখির দেহ। 

ব্রান্ডট জানান, সেগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনো পাথরের মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এর পেছনের রহস্য জানতে শুরু হয় গবেষণা। পরে জানা যায়, সোডিয়াম কার্বোনেট এবং সোডার পরিমাণ অত্যধিক বেশি এ হ্রদের পানিতে। প্রচুর সোডিয়াম ও কার্বোনেট যুক্ত ট্র্যাকাইট লাভা দিয়ে প্রায় ২৬ লাখ বছর আগে প্লিসটোসিন যুগে তৈরি হয়েছে নেট্রন হ্রদের তলদেশ।

পরীক্ষায় আরও জানা যায়, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক ক্ষারধর্মী (পিএইচ ১০.৫)। ত্বককে পুড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। যা পশুপাখির পক্ষে অসহনীয়। বছরের বেশির ভাগ সময় হ্রদের পানির তাপমাত্রা থাকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। আর তলদেশে পড়ে থাকে পানির মতো তরল লাভা।

সোডিয়াম ও কার্বোনেটের জন্য হ্রদে জন্ম নেয় সায়োনোব্যাকটিরিয়া নামে অণুজীব। এ অণুজীবের শরীরে লাল রঞ্জক থাকে। ফলে হ্রদের পানি রক্তের রঙের হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ রঙেই আকৃষ্ট হয়ে পশুপাখি হ্রদে নামে। কিন্তু পানির অতিরিক্ত ক্ষারধর্মীর জন্য সেগুলোর মৃ'ত্যু হয়।

নেট্রন হ্রদের পানি ক্ষারধর্মী হলেও এ হ্রদই পূর্ব আফ্রিকার লেসার ফ্লেমিঙ্গোদের সবচেয়ে বড় এক প্রজনন ক্ষেত্র। প্রায় ২৫ লাখ লেসার ফ্লেমিঙ্গো এ হ্রদে দেখতে পাওয়া যায়। কারণ এ হ্রদের অগভীর পানিতে পাওয়া যায় প্রচুর নীলাভ-সবুজ শৈবাল। এ শৈবাল খেয়েই তারা বেঁচে থাকে এবং বংশবৃদ্ধি করে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, হ্রদের এ ক্ষারধর্মীর সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে এ ফ্লেমিঙ্গোরা। ফলে নেট্রন হ্রদের পানিতে ফ্লেমিঙ্গোদের জমাট দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে