শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৪:৪০

মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাঠগড়ায় তোলা কে বা কারা এই গাম্বিয়া?

মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাঠগড়ায় তোলা কে বা কারা এই গাম্বিয়া?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : রোহিঙ্গা ওপর গণহ'ত্যা চালানোর দায়ে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইজেসি) মিয়ানমারের বি'রু'দ্ধে মামলা করে বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে গাম্বিয়া। বর্তমানে নেদারল্যান্ডসের হেগে আইজেসিতে ৩ দিনব্যাপী সেই মামলার গ'ণশু'না'নি চলছে।

কিন্তু কে বা কারা এই গাম্বিয়া? বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই প্রথমবারের মতো এই নামের সঙ্গে পরিচিত হলো। ফলে সম্পূর্ণ অপরচিত গাম্বিয়ার ব্যাপারে তাদের কৌতূহলের শেষ নেই। এরই মধ্যে মিয়ানমার ছাড়াও তৃতীয় দেশ হিসেবে আর কোথাও রোহিঙ্গাদের একটি অংশ পুনর্বাসন করার ক্ষেত্রে একধরনের আগ্রহও পোষণ করেছে গাম্বিয়া।

রোহিঙ্গাদের প্রতি গাম্বিয়ার এমন আত্মীয়তাবো’ধ কেন? এখন এরকম আরও নানান প্রশ্ন মানুষের মনে। মিয়ানমার এশিয় দেশ হলেও গাম্বিয়া পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। পশ্চিম আফ্রিকা শুনলেই যেমন সাহারা মরুভূমির কথা মনে আসে, উষর, অ'নু'র্বর জনপদের কথা মনে পড়ে, কিংবা চোখে ভেসে ওঠে অ'ন্ধ'কার জ'ঙ্গ'লের ছবি, গাম্বিয়া মোটেই তেমন নয়। সত্যি বলতে কী বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক দিক দিয়েই মিল রয়েছে এ দেশের। বাংলাদেশের মতো গাম্বিয়াও নদীমাতৃক আর কৃষিভিত্তিক এক জনপদ! 

গাম্বি নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে ছোট দেশের নাম গাম্বিয়া। নদীর নাম থেকেই এসেছে এ দেশের নাম। নদীর মতোই লম্বাকৃতির এ দেশটির মোট আয়তন মাত্র সাড়ে দশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মতো। এর দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার আর সর্বোচ্চ প্রস্থ ৫০ কিলোমিটার। দেশের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া গাম্বি নদী গিয়ে মিলেছে আটলান্টিক মহাসাগরের নীল জলরাশির সঙ্গে। ২০১৩ সালের আ'দ'মশু'মা'রি অনুসারে গাম্বিয়ার জনসংখ্যা ১৮ লাখ ৫৭ হাজার।

কৃষিপ্রধান এ দেশের মূল শস্য চীনাবাদাম। এছাড়া বিশাল একটি অংশের পেশা মাছ ধরা। তা বাদে পর্যটন খাত থেকে আয় করে দেশটি। পর্যটকরা অজস্র পাখপাখালি ছাওয়া গাম্বি নদীর সৌন্দর্য, আর আটলান্টিকের বেলাভূমিতে ঘুরে বেড়াতে এ দেশকে বেছে নেয়। এসবই গাম্বিয়ার আয়ের অন্যতম উৎস। কিন্তু সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক দিকে দিয়ে গাম্বিয়া দু'র্ব'ল এক দেশ। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র। 

গাম্বিয়ার রাষ্ট্রীয় নাম গাম্বিয়া ইসলামি প্রজাতন্ত্র। এর রাজধানী বন্দরশহর বাঞ্জুল। এখানকার ৯৫.৭ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। পাশাপাশি আছে রোমান ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের খ্রিস্টানরা।

আফ্রিকার অন্য অঞ্চলের মতো গাম্বিয়ারও রয়েছে উ'ত্থা'নপ'ত'নময় দীর্ঘ এক ইতিহাস। আছে সোনালি সময় আর র'ক্তপা'তের স্মৃতি। নবম-দশম শতাব্দীতে এ অঞ্চলে আরব ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটে। দশম শতাব্দীতে মুসলিম বণিকরা পশ্চিম আফ্রিকায় বেশ কিছু বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে। ট্রান্স-সাহারান বাণিজ্য রুটে এ অঞ্চল থেকে সোনা ও হাতির দাঁত রফতানি করা হতো। সেই থেকেই ইসলামি অনুশাসনের আওতায় আসে গাম্বিয়া।

১৫ শতকের দিকে দাস, আইভরি, স্বর্ণের এক স্বর্গরাজ্য হিসেবে পর্তুগিজ উপনিবেশে পরিণত হয় সেনেগালসহ গাম্বিয়ার এ অঞ্চল। পরবর্তীতে নানা সময়ে এ অঞ্চলে আ'ধিপ'ত্য বিস্তার নিয়ে ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে র'ক্তক্ষ'য়ী ল'ড়া'ই চলতে থাকে। শেষমেশ ১৯ শতকে এটি ব্রিটিশ উ'প'নি'বেশে পরিণত হয়। এ বিশাল কালপর্বে বহুবার গাম্বিয়াবাসীর র'ক্তে ভেসে গেছে গাম্বি নদী। এ জনপদে নেমে এসেছে অনেক র'ক্তা'ক্ত গোধূলি। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে গাম্বিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।

১৯৭০ সালে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় গাম্বিয়া। কিন্তু এভাবে বেশিদিন যায় না। ১৯৮১ সাল থেকেই সরকার হ'টা'নোর উদ্দেশ্যে একের পর এক ক্যু ও ষ'ড়য'ন্ত্র চলতে থাকে দেশটিতে। শেষমেশ ১৯৯৪ সালে সামরিক অ'ভ্যু'ত্থা'নের মাধ্যমে তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে অ'পসা'রণ করে ক্ষ'ম'তা দ'খ'লে নেন সামরিক জা'ন্তা ইয়াহিয়া জাম্মেহ। 

দীর্ঘ ২২ বছর পর ২০১৭ সালে একনায়ক ইয়াহিয়া জাম্মের শাসন থেকে মুক্ত হয় এ দেশ। ইয়াহিয়ার শাসনামলেও একের পর এক নৃ'শং'সতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এ দেশকে। সামরিক ওই জা'ন্তার বি'রু'দ্ধে অনেক মানুষকে বিচার ব'হির্ভূ'তভাবে হ'ত্যার অভিযোগ রয়েছে। ক্ষ'ম'তাচ্যু'ত হওয়ার পর বি'চা'রের ভ'য়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। বর্তমানে তার বি'রু'দ্ধে মামলা চলছে দেশটিতে।

২০১৭ সালে ইয়াহিয়াকে পরা'জিত করে অ্যাদামা ব্যারো গাম্বিয়ার তৃতীয় রাষ্ট্রপতি হন। সেই সরকারেরই অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আবু বকর এম তাম্বাদু। এই তাম্বাদুই গাম্বিয়ার হয়ে মিয়ানমারের বি'রু'দ্ধে রোহিঙ্গা গ'ণহ'ত্যার মামলা করেছেন। 

গাম্বিয়াবাসীর র'ক্তে যেমন বহুবার গাম্বি নদী উ'প'চে উঠেছে। একইভাবে মিয়ানমারে নি'পী'ড়িত রোহিঙ্গাদের র'ক্তেও বারবার লাল হয়েছে নাফ নদীর পানি। দুই নদীতেই বয়ে গেছে র'ক্তের লা'ল স্রো'ত। গাম্বি থেকে নাফ যেন একই সূত্রে বাঁধা। সেই সহানুভূতি থেকেই যেন বহু দূরের এক দেশ হয়েও রোহিঙ্গাদের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ করেছে গাম্বিয়া। আর তাই তো মিয়ানমারের বি'রু'দ্ধে রোহিঙ্গা গণহ'ত্যার মামলা করে প্র'তিবা'দ জানিয়েছে তারা। 

তাদের একটাই দাবি- স্ট'প জে'নো'সা'ইড। বর্তমান দুনিয়ার দেশগুলো যখন পরস্পরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কূ'টনৈ'তিক ফা'য়দা তুলতে ব্য'তিব্য'স্ত, ঠিক তখন অর্থনৈতিকভাবে দু'র্ব'ল হয়েও আইজেসিতে দীর্ঘসূত্রতায় ভরা ব্যয়বহুল এক মামলা করেছে গাম্বিয়া। কেবলমাত্র সৎ সাহসে ভর দিয়েই মিয়ানমারের নৈতিক ভি'ত কাঁ'পিয়ে দিয়েছে তারা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে