মোহাম্মদ ওমর ফারুক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সাবিরা মেহরিন সাবা। ছোট বয়স থেকেই বিজ্ঞান ভিত্তিক বই তার আগ্রহের বিষয়। তাই এমন কোনো বই পেলেই লুফে নেয় সে। আর এই বইগুলো পড়তে পড়তেই নানা ধরনের চিন্তা আসে তার মাথায়। সেই থেকেই এই ব্যতিক্রমী বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনী ধারণা। কি এই ধারণা?
‘গরীব মানুষদের শক্ত এবং ভাল ঘর-বাড়ি তৈরি করার জন্য কিছু ম্যাটেরিয়্যালস দিতে চাই। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এখানে ইনোভেশন বা উদ্ভাবনের ব্যাপারটা আসছে, কারণ আমরা আখের ছোবড়া দিয়ে তা তৈরি করবো। নির্মাণের জন্য আমরা ইট বা সিমেন্ট তৈরি করছি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে। এ কারণে এটা আমাদের কাছে নতুন একটা উদ্ভাবনী ধারণা। এ উদ্ভাবনের মাধ্যমে গরীব মানুষ যাদের কোনোভাবেই ব্যয়বহুল বা দামি ঘর-বাড়ি বা ইট, সিমেন্ট কেনার মতো সামর্থ্য নেই তাদের ভাল ঘর-বাড়ি তৈরি করার সুযোগ করে দেয়াটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য’ বলছিলেন সাবিরা মেহরিন।
সাবিরা ও তার দল প্রথমে গ্লোবাল ইনোভেশন থ্রু সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (জিস্ট)-এর টেক আই প্রতিযোগিতায় শীর্ষ ৩০ ফাইনালিস্টের মধ্যে স্থান করে নেন। এরপর বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের ধারণা দেয়ার জন্য শীর্ষ ১৫ জনের মধ্যে অন্যতম নির্বাচিত হন। এখন তার লক্ষ্য শীর্ষ তিনে পৌঁছানো। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত প্রতিযোগিতাটিতে অসাধারণ এ অর্জনের জন্য ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস সাবিরাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
সাবিরা বলেন, আমাদের উদ্ভাবনটি কতটা টেকসই সেই নিয়ে আমরা এখনও পরীক্ষা চালাচ্ছি। বুয়েটের কাছে পাঠিয়েছি টেস্ট করার জন্য যে এটা কতটুকু টেকসই হতে পারে। তবে ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখেছি যে এটা যথেষ্ট টেকসই। প্রায় পুরনো ইটের মতো শক্তি এতে থাকবে। সাবিরা জানান, সবসময়ই বিজ্ঞানের প্রতি একটা ভালবাসা ছিল তার। আর তার ইচ্ছা ছিল বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলোর প্রতি যে আগ্রহ আছে সেটা কোনোভাবে ব্যবসায় রূপান্তরিত করা যায় কি না। এজন্যই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উঠে ব্যবসা বিষয়ে পড়াশোনা করার লক্ষ্য ছিল। সেই আগ্রহ আর লক্ষ্যের সম্মিলিত রূপই এখন সাবিরার জন্য অসাধারণ সাফল্য নিয়ে এসেছে।
সাবিরা তার এ উদ্ভাবনের ব্যবসায়িক সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, আমরা এমনভাবে এ ধারণাটাকে সাজানোর চেষ্টা করেছি যেন এটা শুধু লাভের দিকটাই না দেখে বরং সমাজে ভাল ধরনের একটা ফলাফল বা ইমপ্যাক্ট সৃষ্টি করতে পারে। আমি চেষ্টা করছি সমাজের যেন উপকার হয় আর আমাদের ব্যবসাও ভাল হয়। তাদের এ ধারণাটা এর আগেও একটি প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিল বলে জানান সাবিরা। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনে আয়োজিত গ্লোবাল স্যোশাল এন্ট্রেপ্রেনিওরশিপ প্রতিযোগিতায় তারা ২য় পুরস্কার জিতেছিল। আর ওই প্রতিযোগিতায় তাদের দলটি ছিল কনিষ্ঠতম। গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিযোগিতায় এর আগেও একবার স্বীকৃতি থাকার কারণে এবারে দারুণ আশাবাদী তিনি। সাবিরা বলেন, এবার আমরা দেখেছি এটা বিভিন্ন জায়গায় গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আমরা মনে করি, আমরা যদি ঠিকভাবে আরও ভাল করে এই আইডিয়াটা উপস্থাপন করতে পারি তাহলে শীর্ষ তিনের মধ্যে যাওয়ার ইনশাল্লাহ চেষ্টা করবো। নিজেদেরকে দেখতে চাই সেখানে। আপাতত সাবিরা ও তার দলের মনোযোগ হলো জিস্ট-এর প্রতিযোগিতায় তাদের যে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে সেখানে।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো এ প্রশিক্ষণ থেকে যতটুকু সম্ভব শেখা। এরপর আমরা চেষ্টা করবো সেখানে কিছু বিনিয়োগকারী আছেন তাদের কাছে আমাদের আইডিয়াটা জানানো যেন শুধু বাংলাদেশের জন্য সীমাবদ্ধ না থেকে আমরা চাই অন্যান্য দেশেও যেন আইডিয়াটা বাস্তবায়ন করতে পারি।-ইত্তেফাক
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে