এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: মানুষ মাত্রই মরণশীল। মহান আল্লাহর এসৃষ্টি জগতের প্রতি জীবকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। ঠিক তেমনি ভাবে মানুষকেও একদিন এই দুনিয়া ছেড়ে চিরবিদায় নিতে হবে। তবে তার পূর্বে মহান আল্লাহর সৃষ্টিকুলের এমন কিছু সুন্দর সৃষ্টি আছে তা আমরা অনেকেই জানি না। তার মধ্যে কিছু মাহান আল্লাহ নিজেই সৃষ্টি করেছেন। আর কিছু তার সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ট সৃষ্টি মানব জাতিই তৈরি করেছেন। আর তা যদি মৃত্যুর আগে একবার দেখার সুযোগ পান তাহলে আপনি অত্নতৃপ্ত হবেন। সে জন্য মৃত্যুর আগেই যতটা সম্ভব দু’চোখ ভরে দেখে নিতে হবে সুন্দর এ পৃথিবীকে৷ বিশ্বের যে কয়েকটি জায়গা পর্যটকদের সবচেয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকে, সম্প্রতি তারই একটি তালিকা তৈরি করেছে ‘লোনলি প্ল্যানেট’৷
১. কাবা, কাবাঘর, কাবা শরীফ:
একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত, যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। আসলে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে। ইসলাম ধর্ম মতে কাবা কে সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে মনে করা হয়। এটি মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পরে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ পরেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ করেন। আর মহান অাল্লাহ কাবার তাওয়াফতে ফরজ করেছেন। যাহা মুসলমানদের জন্য হজ হিসেবে নির্দারণ করা হয়েছে।
অবস্থান এবং বাস্তবিক কাঠামো:
কাবা একটি বড় পাথরের কাজ করা কাঠামো যার আকৃতি প্রায় একটি ঘনক এর মত। কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকা'আব অর্থ ঘন থেকে। এটি কাছের পাহাড়ের গ্রানাইট দ্বারা তৈরি যা দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২৫সেঃমিঃ (১০ ইঞ্চি) মার্বেল পাথরের ভিত্তির উপর যা বাইরের দিকে ৩০সেঃমিঃ (১ ফুট) বাড়িয়ে আছে। কাঠামোতে জায়গার পরিমাণ প্রায় ১৩.১০ মিঃ (৪৩ ফুট) উচ্চতা, পাশাপাশি ১১.০৩ মিঃ X ১২.৬২ মিঃ চারটি কোন কম্পাসের প্রায় চার বিন্দু বরাবর মুখ করা। কাবার পূর্ব কোনা হচ্ছে রুকন-আল- আসওয়াদ" (কাল পাথর অথবা "আল-হাজারুল-আসওয়াদ"), একটি উল্কাপিন্ডের অবশেষ; উত্তর কোনা হল "রুকন-আল-ইরাকী" (ইরাকী কোণ); পশ্চিমে রয়েছে "রুকন-আল-সামী" (পূর্ব-ভূমধ্য সাগরীয় কোণ) এবং দক্ষিণে "রুকন-আল-ইয়ামানী" ('ইয়েমেনী কোণ')।
কাবা শরীফের গিলাফ:
কাবা কালো সিল্কের উপরে স্বর্ণ-খচিত ক্যালিগ্রাফি করা কাপড়ের গিলাফে আবৃত থাকে। কাপড়টি কিসওয়াহ নামে পরিচিত; যা প্রতিবছর পরিবর্তন করা হয়। কালেমা শাহাদাত এ কাপড়ের মধ্যে সুতা দিয়ে লিখার কাঠামো তৈরি করা হয়। এর দুই তৃতীয়াংশ কোরানের বাণী স্বর্ণ দিয়ে এম্রোয়ডারি করা হয়।
২. আংকোর ভাট, কম্বোডিয়া:
বিশ্বের অন্যতম ভ্রমণ-পত্রিকা ‘লোনলি প্ল্যানেট’ তালিকার প্রথম স্থানে রেখেছে কাম্বোডিয়ার উত্তরে সিয়েম রিপ শহরের আংকোর ভাটকে৷ দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত এই মন্দির বা মন্দিরগুচ্ছটি আজ একটি ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ বা বিশ্ব ঐতিহ্য৷ আদতে বিষ্ণু মন্দির হলেও, হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে এখানে৷ চারিদিকে পরিখা বিশিষ্ট বিশাল এই স্থাপনার অসাধারণ ভাস্কর্য তাই আজও আপনাকে চমকে দেবে, জাগাবে শিহরন৷
৩. গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, অস্ট্রেলিয়া:
অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূল বরাবর প্রায় ১,৮৬০ মাইল জুড়ে বিস্তৃত এই গ্রেট বেরিয়ার রিফ৷ এটি একাধারে একটি ন্যাশনাল পার্ক এবং হেরিটেজ সাইট৷ এখানে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রবাল প্রাচীর, হাজারো রকমের বাহারি মাছ আর সাদা তিমিসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী৷
৪. মাচু পিচু, পেরু:
পেরুর ভুবন বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মাচু পিচু পঞ্চদশ শতাব্দীর ইনকা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ধ্বংসাবশেষ৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার আদিবাসী মানুষদের ভাষা কেচুয়ায় মাচু পিচুর অর্থ হলো প্রাচীন পর্বতচূড়া৷ ইনকা রাজা ইউপানকি ২৩৬০ মিটার উচ্চতায় মাচু পিচুর ওপর তৈরি করান এক পূর্ণাঙ্গ শহর৷ আর তারই ধ্বংসাবশেষ দেখতে এখনও সেখানে ছুটে যান দূর দূরান্তের মানুষ৷ প্রায় তিন হাজার সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠেন তারা৷
৫. গ্রেট ওয়াল অফ চায়না, চীন:
কথায় আছে, মহাশূন্য থেকেও দেখা যায় চীনের প্রাচীর বা গ্রেট ওয়াল অফ চায়না৷ তবে পৃথিবীর এই দীর্ঘতম প্রাচীর দেখে অবাক হননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বোধহয় কঠিন৷ ইঁট আর পাথর দিয়ে তৈরি এই প্রাচীর দৈর্ঘ্যে ২,৬৯৫ কিলোমিটার, উচ্চতায় ৪.৫৭ থেকে ৯.২ মিটার এবং প্রস্থে ৯.৭৫ মিটার৷ শোনা যায়, মাঞ্চুরিয়া আর মঙ্গোলিয়ার যাযাবর দস্যুদের হাত থেকে চীনকে রক্ষা করতেই তৈরি হয়েছিল এই গ্রেট ওয়াল অফ চায়না৷
৬. তাজ মহল, ভারত:
সাদা ধবধবে মার্বেল, আর তার ওপর রুবি, ফিরোজা, কোরাল, ক্যাটস আই, ব্লাড স্টোন দিয়ে অনন্যসুন্দর কারুকার্য৷ আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এই স্মৃতিসৌধের মতো রাজকীয় সমাধি, স্থাপত্যে রোম্যান্টিকতার এমন নিপুণ মুন্সিয়ানা আর বোধ হয় কোথাও নেই৷ মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মুমতাজ মহলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই সৌধটি নির্মাণ করেন৷ ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয়ে ১৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চলে তাজমহল তৈরির কাজ৷
৭. গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র:
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত একটি গিরিখাত৷ এর বেশিরভাগ অংশই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক-এর ভেতরে পরেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম একটি জাতীয় উদ্যান৷ গিরিখাতটির মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে কলোরাডো নদী৷ ৪৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১,৮০০ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট গ্র্যান্ড ক্যানিয়নকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে তার অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য৷
৮. কলোসিয়াম, রোম:
বিশ্বের সপ্তমাশ্চর্যের একটি হলো ইটালির রোম শহরে অবস্থিত কলোসিয়াম৷ এটা মূলত ছাদবিহীন একটি মঞ্চ, যেখানে কমপক্ষে ৫০ হাজার দর্শক বসে গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রতিযোগিতা, মানুষ ও প্রাণীদের নানা খেলা, প্রদর্শনী ইত্যাদি উপভোগ করতেন৷ এই কলোসিয়ামের কারণে রোম নগরীকে রক্ত আর হত্যার শহর বলেও ডাকা হতো এক সময়৷
৯. ইগুয়াসু জলপ্রপাত, আর্জেন্টিনা/ব্রাজিল:
কোনোদিন যদি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সীমান্তে বরাবর এগিয়ে যান, তখন দেখতে পাবেন এই জলপ্রপাত৷ ইগুয়াসু নদী যেখানে পারানা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে, তার ২৪ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এটি৷ পারানা মালভূমির ঢাল বেয়ে পাহাড়ি ঝর্ণাধারা নেমে এসে প্রায় ৭৩ মিটার নীচে পতিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার এই প্রাকৃতিক বিস্ময়৷ আকারে ইগুয়াসু কিন্তু নায়াগ্রা জলপ্রপাতের চাইতে বড়৷
১০. আলহামব্রা, স্পেন:
‘একগুচ্ছ পান্নার মাঝে যেন একটি মুক্তো’ – মুরিশ কবিরা এভাবেই বর্ণনা করেছেন গ্রানাডা শহরের শীর্ষ আকর্ষণ আলহামব্রার সৌন্দর্যকে! নবম শতকে দক্ষিণ স্পেনে নির্মিত একটি দুর্গের ভিত্তির ওপর এই দুর্গ-প্রাসাদের পত্তন ঘটান স্পেনের শেষ মুসলিম শাসকগোষ্ঠী, একাদশ শতাব্দীতে৷ বাইজেন্টাইন ও মুসলিম স্থাপত্যের পরম্পরায় তৈরি এ দুর্গ-প্রাসাদে স্থানীয় লাল মাটিতে ব্যবহার করা হয়৷ সে জন্যই এর নাম ‘আলহামব্রা’ বা ‘দ্য রেড’৷
১১. আয়া সোফিয়া, তুরস্ক:
ইস্তানবুলে অবস্থিত আয়া সোফিয়াকে তুর্কিরা বলেন হাজিয়া সোফিয়া বা সেন্ট সোফিয়া৷ ৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দে নব্য-খ্রিষ্টান জাস্টিন এটি প্রতিষ্ঠিত করেন৷ পরে, ১৯৩৪ সালে, আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্ক একে জাদুঘরে পরিবর্তিত করেন৷ সুলতান আহমেদ এলাকার মূল আকর্ষণই হচ্ছে আয়া সোফিয়া, যার জন্য প্রতিদিন হাজারো মানুষ জড়ো হন৷ ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনার তালিকায় স্থান পায় আয়া সোফিয়া৷
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/এমএস