বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৬:১৬:১৪

রাষ্ট্র নায়ক থেকে ফাঁসির মঞ্চ

রাষ্ট্র নায়ক থেকে ফাঁসির মঞ্চ

জুবায়ের রাসেল: সাদ্দাম হোসেন। ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। যার নামের সঙ্গে মিশে আসে ইতিহাস। ওঠা আর নামা-জীবনের দুটি দিকেই চূড়ান্ত বিন্দুতে পৌঁছানোর ‘সৌভাগ্যবান’ মানুষটির নাম সাদ্দাম হোসেন। একটা সময় তিনি ছিলেন ইরাকের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি। এক নাগাড়ে শাসন করেছেন প্রায় চার দশক। এই ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়ককে জীবনের চরম দিনগুলোতে মার্কিন সেনাবাহিনীর হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। তবুও বাঁচতে পারেন নি তিনি। শেষ পর্যন্ত ফাঁসির মাধ্যমে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। জন্ম: ক্ষমতাধর এই মানুষটির পুরো নাম সাদ্দাম হোসেন আবদুল মাজিদ আল তিকরিতি। তিনি ১৯৩৭ সালের ২৮ শে এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। আর ইরাক শাসন করেন ১৬ ই জুলাই ১৯৭৯ থেকে ৯ এপ্রিল ২০০৩ পর্যন্ত। জীবন ইতিহাস: সাদ্দাম হোসেন ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে জেনারেল আহমেদ হাসান আল বকরের উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন। সেই সময় তিনি দৃঢ়ভাবে সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যকার বিরোধের অবসান ঘটান এবং একটি নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করেন। পরে তিনি ইরাকের রাষ্ট্রপতি ও বাথ পার্টির প্রধান হিসেবে আরব জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ধর্ম নিরপেক্ষ ও আধুনিক ইরাক গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি তার অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছানোর জন্য এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন। এসময়ই সাদ্দাম ইরানের সাথে ৯ বছরের যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন (১৯৮০-১৯৮৮)। ইরাক-ইরান যুদ্ধের পরে ১৯৯১-এ সাদ্দাম উপসাগরীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন। সাদ্দাম তার মতে ইরাকের স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধের সকল পক্ষকে নির্মুল করার উদ্যোগ নেন। আর এর বিরোধী পক্ষে ছিল উপজাতীয় ও ধর্মীয় গোত্র গুলো, যারা স্বাধীনতা দাবি করছিল। যেমন, ইরাকি শিয়া মুসলমান, কুর্দি, ইরাকি তুর্কি জনগন। শেষ জীবন:২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে কতিপয় আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে। তারা এই যুক্তি দেখিয়ে আক্রমণ করে যে, সাদ্দাম ব্যাপক ধ্বংসাত্বক জীবানু অস্ত্র তৈরি করছেন (যদিও যুদ্ধ পরবর্তি সময়ে এমন কোন অস্ত্রের হদিস পাওয়া যায় নাই)। মূলত তখন তিনি ক্ষমতাচূত হয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে বেড়ান ইরাকের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে। লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল মাটির তলার বাঙ্কারে। তবুও তার শেষ রক্ষা হয়নি। ১৩ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে আমেরিকান সেনাদের কাছে ধরা পড়েন তিনি। সাদ্দাম ওই সময় কাকুতি-মিনতি করছেন, তাঁকে যেন গুলি করে মারা না হয়! বিশ্বজুড়ে সমালোচনার আশঙ্কায় মার্কিন প্রশাসন তাঁকে ওই ভাবে না মেরে গ্রেফতার করে। পরে তার বিচার হয়েছিল মার্কিন আদালতে। আর সেই বিচারের শুনানিও ঘটা করে অনেক দিন ধরে চালানো হয়েছিল। সেই মামলায় এমনকী, সাদ্দামকে তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনে সওয়ালও করতে দেওয়া হয়েছিল। তার পর তাঁর সাজা হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড। তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল আজকের দিনেই(ইরাকি সময় সকাল ৬.০৬ মিনিটে)। লেখক: সাংবাদিক ও নির্বাহী পরিচালক ‘আলোর মিছিল’-সৃজনশীল মানুষগড়ার আন্দোলন। ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪ ডটকম/জুবায়ের রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে