রবিবার, ১৪ জুন, ২০২০, ০৮:৫৯:৪৭

যু'দ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ইসরাইলি যু'দ্ধবিমান ধ্বং'সের রেক'র্ড যে বাঙালি যো'দ্ধার

যু'দ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ইসরাইলি যু'দ্ধবিমান ধ্বং'সের রেক'র্ড যে বাঙালি যো'দ্ধার

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : সদ্যপ্রয়াত এই সেনা কর্মকর্তার যে সব কর্মকাণ্ড বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে গর্বিত করে সে সব ঘটনার কথা বর্তমান প্রজন্মের অনেকেরই অজানা।সাইফুল আজম পৃথিবীর ইতিহাসের একমাত্র যো'দ্ধা যিনি আকাশপথে ল'ড়াই করেছেন তিনটি ভিন্ন দেশের বিমানবাহিনীর হয়ে। আর একক ব্যক্তি হিসেবে আকাশপথের যু'দ্ধের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইসরাইলি যু'দ্ধবিমান ভূপাতিত করার অনন্য রেকর্ড গড়েছেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে একের পর এক ইতিহাস রচনা করে গেছেন এই বীর বাঙালি। পৃথিবীর ২২ জন ‘লিভিং ঈগলের’ অন্যতম ছিলেন এই বাঙালি বৈমানিক।

১৯৭১ সালের আগে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন সাইফুল আজম। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন।
পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালের জুন মাসে তৃতীয় আরব-ইসরাইল যু'দ্ধ শুরু হয়। যু'দ্ধে অংশ নিতে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ইরাকি বিমানবাহিনীতে বদলি হন সাইফুল আজম। পশ্চিম ইরাকে অবস্থান নিয়ে ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে যু'দ্ধ করছিলেন তিনি।

যু'দ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র ৫ দিনের মাথায় গাজা এবং সিনাইয়ের ক'র্তৃত্ব নিয়েছিল ইসরাইল। জুনের ৫ তারিখে সিরীয় বিমানবাহিনীর দুই-তৃতীয়াংশ শক্তি ধ্বং'স করে দেয় ইসরাইলি বিমান সেনারা।

তেমন কোনো প্র'তিরোধ ছাড়াই ইসরাইল পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেম তারা দ'খল করেছিল। দ'খল করেছিল সিরিয়ার গোলান মালভূমিও। তাদের সামনে বিন্দুমাত্র প্র'তিরোধ তৈরি করতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ। এ সময় ইসরাইলিদের যমদূত হয়ে জর্ডানে যান সাইফুল আজম।

৬ জুন আকাশ থেকে প্রচ'ণ্ড আ'ক্রমণে মিসরীয় বিমানবাহিনীর যু'দ্ধ-সরঞ্জাম গুঁ'ড়িয়ে দেয় ইসরাইলি বাহিনী। একই দিন বেলা ১২টা ৪৮ মিনিটে চারটি ইসরাইলি সুপারসনিক ‘ডাসল্ট সুপার মিস্টেরে’ জ'ঙ্গি বিমান ধে'য়ে আসে জর্ডানের মাফরাক বিমান ঘাঁ'টির দিকে। এবার তাদের লক্ষ্য জর্ডানের ছোট্ট বিমানবাহিনীকে নি'শ্চিহ্ন করে দেয়া।

সে সময় ইসরাইলি সুপারসনিকের বিরু'দ্ধে ল'ড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো সমকক্ষ বিমান আরবীয়দের ছিল না। তবু ইসরাইলিদের ঠে'কাতে মাফরাক বিমান ঘাঁ'টি থেকে 'হকার হান্টার’ জ'ঙ্গি বিমান নিয়ে বুক চিতিয়ে উড়াল দেন সাইফুল আজম।

আর সেই হকার হান্টার দিয়েই ক্ষিপ্রগতির দুটি ইসরাইলি সুপারসনিক ঘা'য়েল করে ফেললেন সাইফুল আজম। তার অব্যর্থ আঘা'তে ভূপাতিত হয় একটি ইসরাইলি ‘সুপার মিস্টেরে’। আরেক আঘা'তে প্রায় অকেজো হয়ে ধোঁ'য়া ছাড়তে ছাড়তে কোনো মতে পা'লিয়ে ইসরাইলি সীমানায় গিয়ে আছড়ে পড়ে আরেকটি বিমান।

সে দিন অকুতোভয় বৈমানিক সাইফুল আজমের অকল্পনীয় বীরত্বের কারণে ইসরাইলের পুরো পরিকল্পনাই ভে'স্তে যায়। উল্টো নিজেদেরই দুটো বিমান হারায় তারা। এমন বীরত্বের জন্য পুরস্কারস্বরূপ সাইফুল আজমকে ‘হুসাম-ই-ইস্তিকলাল’ সম্মাননায় ভূষিত করে জর্ডান সরকার।

সাইফুল আজমের কাছে ইসরাইলি বৈমানিকদের ধরাশা'য়ী হওয়া এটাই প্রথম। পরদিনই তার কৃতিত্বে ইরাকি বৈমানিক দলের কাছে চর'মভাবে প'রাজিত হয় ইসরাইলিরা। ৭ জুনে ইরাকের ‘এইচ-থ্রি’ ও ‘আল-ওয়ালিদ’ ঘাঁ'টি রক্ষা করার দায়িত্ব পড়ে এক ইরাকি বৈমানিক দলের কাঁধে। আর সাইফুল আজম সেই দলের অধিনায়ক।

সে দিন চারটি ‘ভেটোর বোম্বার’ ও দু’টি ‘মিরেজ থ্রিসি’ জ'ঙ্গি বিমান নিয়ে আ'ক্রমণ চালায় ইসরাইল। একটি ‘মিরেজ থ্রিসি’ বিমানে ছিলেন ইসরায়েলি ক্যাপ্টেন গিডিওন দ্রোর। দ্রোরের গু'লিতে নিহ'ত হন আজমের উইংম্যান। তার হা'মলায় ভূপাতিত হয় দুটি ইরাকি বিমান। পরক্ষণেই এর জবাব দেন আজম।

তার অব্যর্থ টার্গেটে পরিণত হয় দ্রোরের ‘মিরেজ থ্রিসি’। সে আঘা'তের পর বাঁ'চার উপায় না পেয়ে যু'দ্ধবন্দি হিসেবে ধ'রা দেন ক্যাপ্টেন দ্রোর। ওই যু'দ্ধবন্দির বিনিময়ে জর্ডান ও ইরাকের সহস্রাধিক সৈন্যকে মুক্ত করে ইসরাইল।

আরব-ইসরাইল যু'দ্ধের প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই সাইফুল আজম একটি অনন্য রেকর্ড তৈরি করেন। ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ভূপাতিত করেছেন সর্বোচ্চ তিনটি ইসরাইলি বিমান। যে জন্য ‘নাত আল-সুজাহ’ সামরিক সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।

শুধু আরব যু'দ্ধেই কৃতিত্ব দেখাননি সাইফুল আজম। এর আগে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যু'দ্ধে তার বীরত্বে আক্রা'ন্ত হয় একটি ভারতীয় ‘ফোল্যান্ড নেট’ জ'ঙ্গি বিমান। সে বিমান থেকে ভারতের ফ্লাইট অফিসার বিজয় মায়াদেবকে যু'দ্ধব'ন্দি হিসেবে আট'ক করা হয়।

সে সময় প্রশিক্ষকের দায়িত্বে থাকাকালীনই সেপ্টেম্বর পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রনের হয়ে ‘এফ-৮৬ স্যাবরজেট’ জ'ঙ্গি বিমান নিয়ে এ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। বিরল এই পারদর্শিতার স্বীকৃতিস্বরূপ সাইফুল আজমকে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা ‘সিতারা-ই-জুরাত’-এ ভূষিত করা হয়।

সাইফুল আজমই পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বৈমানিক যিনি চারটি দেশের বিমানবাহিনীর সৈন্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই চারটি দেশ হল পাকিস্তান, জর্ডান, ইরাক ও মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

এ ছাড়া আটটি ভিন্ন দেশের আট বাহিনীর বিমান পরিচালনা করেছেন আজম। যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, জর্ডান, ইরাক, রাশিয়া, চীন ও নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশের হয়ে বিমান চালিয়েছেন তিনি।

যু'দ্ধক্ষেত্রে অনন্য সব অর্জন আর ইতিহাস গড়া সাইফুল আজমকে ২০০১ সালে ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্স বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং ইগলস’-এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

কিংবদন্তি এই বীর বাঙালি আর নেই। রোববার সকালে ঢাকার মহাখালী ডিএসএইচওর তার নিজ বাস ভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দীর্ঘদিন তিনি নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ারভাইস মার্শাল ফখরুল আজম তার ভাই। তথ্যসূত্র: রোর মিডিয়া/ যুগান্তর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে