এ বছর যে জিনিসগুলো ঘটলো না
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বিদায় নিচ্ছে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে আরেকটি বছর। আর উকি দিতে চলেছে নতুন বছরের সূর্য। কিন্তু এরইমধ্যে এই পৃথিবে অনেক কিছুই ঘটেগেল। তবে এমন কিছু বিষয়ও রয়েছে যেগুলো এ বছর ঘটার কথা ছিল কিন্তু ঘটলোনা। এবছরের পুরোনো দিনের দিকে এক বার ফিরে তাকলেই দেখা যায় সে সব বিষয়গুলো। তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক যে বিষয়গুলো ২০১৫ তেও ঘটলো না!
১) পৃথিবী ধ্বংস হল না : এ বারই পৃথিবী ধ্বংস হবে। এই হল। এই গেল বলেও হতে হতে হল না। সেই কবে থেকে শোনা যায় পৃথিবী এবার ধ্বংস হবে। ২০১২ সালে খবরটা এতও জোরালো হল হলিউড একেবারে ঝক্কাস একটা সিনেমাও বানিয়ে দিল। তবে ১২ গেল, ১৩ গেল, ১৪ গেল এই গুজবের কোন নজিরই দেখা গেলনা। গুজবটা কোমর বেঁধে নেমে পড়বে ১৫তে। না, তাও হলোনা। তবে ১৫-তে এসেও দুইবার শোনা গেল 'এই তো কাল, পরশু ধ্বংস, তার আগে তৈরি হয়ে নিন'। যাক বাবা এবছরটাও বেঁচে নেওয়া গেল। পৃথিবীটা এখনও পৃথিবীতেই থাকল।
২) সালমানের বিয়ে এ বছরও হল না : সেই কবে থেকে মিডিয়া কানের কাছে শুধু ঘ্যান ঘ্যান করেই যাচ্ছে বিয়ে, বিয়ে, বিয়ে। কিন্তু কোথায় কি! সালমানের বিয়ের দাঁত এখনও উঠল না। ৫০ বছর পেরিয়ে গেল তবু ব্যাচেলার বদনাম ঘুঁচল না তার জীবনে। সেই গুজবেই আটকে থাকল ভাইজানের বিয়ে। তবে প্রতিবারের মত এবারও সবাই বলছেন, পরের বছর মানে ২০১৬-তে ভাইজান বিয়ে করবেনই। আসলে হিট অ্যান্ড রানের মামলার ঝামেলা মিটে গেছে, হবু বৌদি মানে রোমানিয়ান গার্লফ্রেন্ড লুলিয়া ভানতুরও ডোলি সাজিয়ে বসে আছে। শুধু ভাই এখনও বাজরাঙ্গি হয়ে বসে, 'তেরে নাম' মুখে নিয়ে 'দিলওয়ালে' হতে পারেননি।
৩) আন্ডার ওয়াল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিম এখনও ধরা পড়লেন না : ৬০ বছরের জন্মদিনটা করলেন একেবারে তাক লাগিয়ে। আর লুকিয়ে বা চুপিয়ে নয় পাকিস্তানেই যে তিনি রয়েছেন সেটাও প্রমাণ হয়ে গেল। তবু অধরাই রয়ে গেলেন তিনি। ভারতের 'মোস্ট ওয়ান্টেড' অপরাধী। ক্ষমতায় এলেই তাকে খপ করে ধরে জেলে মধ্য দেয়া হবে এবং ফাঁসিতে ঝোলানো হবে, এমন প্রুতিশ্রুতি দিয়ে দেশের মসনদে বসেছেন এক গুজরাটি। তবে দাউদের তাতেই বা কি আসা যায়। এখনও জন্মদিনে ছুরি দিয়ে কেক কাটছেন, আর বন্দুক দিয়ে সন্ত্রাসের রাজ্য শাসন করছেন।
৪) সুদিন আর এলো না : বাবা এই 'সুদিন' কথাটা এতবার শুনেছি যে কানও মাঝে মাঝে বলত আমি মুখ হয়ে গিয়েছি। সেই বিখ্যাত 'সুদিন' ২০১৫-তে এসেও আমাদের কারও মালুম হল না। না, না, আপনাকে কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক, অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদ হতে হবে না। তাতে সুদিন আনা যায় কি না সেটা জানি না। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম, চাকরিবাকরির অবস্থা, কালবুর্গি হত্যা, শাসক দলের নেতাদের বাচনভঙ্গি দেখে স্পষ্ট বলে দেওয়া যায় 'সুদিন' এখনও সেই খারাপ দিনের রাস্তাতেই ঘুমোচ্ছে।
৫) ফেসবুকে 'ডিসলাইক' এখনও মানুষ করতে পারল না : একটু কিছু হলে সেই কবে থেকে 'লাইক' করে করে পাগল হয়ে যাচ্ছে মানুষ। মোটা ফুফু, রোগা কাকার পাশে চুড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকা কোনও মেয়ের ছবিতেও 'লাইক'। প্রেমিকার পোস্টেও 'লাইক', প্রেমিকার বান্ধবীর পোস্টেও 'লাইক'। মৃত্যুতেও 'লাইক', জন্মেও লাইক। বন্যায় 'লাইক', ঝড়েও 'লাইক'। এত 'লাইক' দিতে দিতে মানুষ এবার ক্লান্ত। মানুষ জন্মগত ইনোভেটিভ, অল্পতে বোরিং হয়ে গিয়ে নতুন কিছু করতে চায়। আর তাই এবার 'লাইক' নয় 'ডিসলাইক'। পছন্দ না হলেই মানুষ নাক উঁচিয়ে ডিসলাইক দেবে এটাই তো ভাইরাল হওয়ার কথা। জেলাসি থেকে 'ডিসলাইক', চাপা ভাললাগা থেকে 'ডিসলাইক', রাগাতেও 'ডিসলাইক', জ্বালাতে 'ডিসলাইক'। তবু এত চেঁচামেচির পরেও জুকারবার্গ এখনও ফেসবুকের বাটুনে ডিসলাইক আনলেন না।
৬) মঙ্গলে এখনও একটা ঘরও তৈরি হল না : বছরের শুরুতে এক সংস্থা রেশন কার্ড পর্যন্ত করে দিল। জায়গা-জমি কেনাকেটার চুক্তিপত্রও নেটে দেওয়া হল। মানুষ তাতে ফর্মও পূরণ করলো। কিন্তু কোথায় কি। মানুষ এখনও পৃথিবীতেই বসে আছে (না না শুধু বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য বলছি না)। মঙ্গল এখনও জঙ্গলের মতই বাস অযোগ্য হয়ে রয়েছে।
৭) জীবনটা বদলে গেল না : ২০১৪ সালের ডিসম্বরের ৩১ তারিখ যে স্বপ্নটা দেখে ছিলাম আমরা সবাই। সেটা পূর্ণ হল না। নিষ্ঠুর জগতের নির্মম সত্যিগুলো আমাদের ইচ্ছা, স্বপ্ন, ভাললাগাগুলোকে চেপেই রেখে দিল। জীবনটা রয়ে গেল সেই চেনা ছকেই। তবে এজন্যই বোধহয় জীবনটা এত সুন্দর। আবার এ বছর ৩১ তারিখ ঘুমাতে যাব সেই স্বপ্ন চোখে নিয়ে যে জীবনটা ২০১৬-তে বদলে যাবে। দেখা যাক কী হয়...
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�