এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের মাত্রাটা বেশি হলেও নারীদের হার্ট অ্যাটাক হয় কিছুটা দেরিতে। আরো বেশি বয়সে৷ তবে নারীদের ক্ষেত্রে এমটা নাকি ঘটে নাটকীয়ভাবে তা সহজে বোঝা যায় না৷ তাই নারীর হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে এ নিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে-
১.খাওয়া-দাওয়া
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাওয়া-দাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যকর খাবার যে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষেজ্ঞ ডা. বেথ অলিভার বলেছেন, ‘প্রতিদিন, প্রতিবেলায় বিভিন্ন রঙের ফল ও সবজি এবং যথেষ্ট পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খান৷ মাংসের পরিবর্তে খান মাছ৷ তার সঙ্গে পানি, আপেল ও বিভিন্ন বাদাম বেশি করে খান আর কম খান চিনি, কফি বা চিনিযুক্ত পানীয়৷
২. ব্লাডপ্রেশার ও কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখা
প্রতিটি নারীর উচিত নিয়মিত ব্লাডপ্রেশার মাপা এবং কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখা, বিশেষ করে যাঁদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি৷ এছাড়া প্রতি দু’বছর অন্তর শরীরের পুরো চেকআপ করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এর সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হবে, শরীরের ওজন যাতে ঠিক থাকে, এমনটাই বলেন বিশেষজ্ঞরা৷
৩. ৩০ মিনিট ব্যায়াম বা হাঁটাচলা
হার্ট সুস্থ রাখার মূলমন্ত্র ব্যায়াম অথবা খেলাধুলা৷ তবে দেখা যায় চাকরি, সন্তান, সংসার– এসব নানা কারণে মহিলাদের নিজের দিকে নজর দেবার সময় থাকে না৷ ফলে অবহেলিত হয় শরীরচর্চার দিকটা৷ অথচ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিন ৩০ মিনিট জোড়ে জোড়ে হাঁটলেই যথেষ্ট উপকার হয়৷ এ কথা বলেন আরেক মার্কিন ‘কার্ডিওলজিস্ট’ ডা. আন মেকলাফলিন৷
৪. পেটের চর্বি কমানো জরুরি
হার্টের অসুখের ক্ষেত্রে শরীরের অন্যান্য অংশের চর্বির তুলনায় পেটের চর্বি অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়, বলেন বিশেষজ্ঞরা ৷ মেয়েদের ক্ষেত্রে পেটের এই অতিরিক্ত চর্বি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়৷ তাই কোমরের মাপ ৮৯ সেমিটারের বেশি হলে তা হার্টে চাপ পড়ে বা হৃদপিণ্ডের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়৷ তাই এক্ষেত্রে দিনে কয়েক মিনিট সময় বের করে শুধুমাত্র পেটের ব্যায়াম করলেও উপকার পেতে পারেন নারীরা৷
৫. ধূমপান এবং মদ পান
ধূমপান ও মদ পান পশ্চিমা বিশ্বের নারীদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হলেও আমাদের দেশে মোটেই তা নয়৷ যদিও আধুনিক যুগের অনেক মেয়েই আজকাল ধূমপান করে থাকে৷ ধূমপান নারীদের হার্ট অ্যাটাকের জন্য বড় ঝুঁকি এবং ধমনি সংক্রান্ত অসুখের জন্যও বিপজ্জনক৷ দিনে এক গ্লাসের বেশি মদ্যপান করলে তা নারীদের রক্তচাপ এবং হৃদপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটায়৷ কাজেই হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে নারীদের ধূমপান ও মদ পান না করাই শ্রেয়৷
৬. পারিবারিক রোগ
যাদের পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের আরো বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন৷ কারণ তাদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি থাকে৷ তাই নিয়মিত চেকআপের সময় আপনার ডাক্তারকে এ বিষয়টি অবশ্যই জানানো প্রয়োজন৷
৭. শ্বাসকষ্ট এবং পা ফুলে যাওয়া
কোনো নারীর নিয়মিত শ্বাসকষ্ট বা পা ফুলে গেলে অবশ্যই তাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে৷ যাদের হৃদপিণ্ড দুর্বল, তাদের রক্তচাপ বেড়ে গেলে তা নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত গড়াতে পারে৷ শ্বাসকষ্ট, কাশি, ক্লান্তি, পা ফুলে যাওয়া, হাঁটতে কষ্ট হওয়া, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ইত্যাদি হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখানো উচিত৷
৮. সুস্থ হৃদপিণ্ড, সুস্থ পরিবার
আমাদের দেশের নারীরা স্বামী, সংসার আর সন্তানের মঙ্গল নিয়েই ব্যস্ত৷ নারী বা মা একটি সংসারের চালিকা শক্তি৷ তিনি অসুস্থ হলে সংসারে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়৷ তাই সংসারকে সচল রাখতে নারীদের নিজের হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে হবে, নজর দিতে হবে নিজের দিকে৷ তবেই গড়ে উঠবে সুস্থ পরিবার, সুস্থ সমাজ৷
৯. হার্ট সুস্থ রাখতে হাসির বিকল্প নেই!
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে হাসির বিকল্প নেই৷ তাই দিনে অন্তত একবার জোরে জোরে প্রাণ খুলে হাসুন – উপদেশ বিশেষজ্ঞদের৷ বিষণ্ণতা বিভিন্ন অসুখের জন্ম তো দেয়ই, এমনকি কোনো অসুখ সারতেও দেরি হয়৷ তাই হাসিখুসি আর আনন্দে থাকার চেষ্টা করুন৷