সকালটা ছোটদের, বিকেলটা বৃদ্ধদের
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: প্রায় দশ বছর আগে শিম্পাঞ্জি বাবুর সঙ্গিনী মারা গিয়েছে। অনেক চেষ্টাতেও নতুন সঙ্গিনী জোটেনি। ব্যথা ভুলে একা থাকতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে সে। একমাত্র আনন্দ দর্শকদের সামনে থাকার সময়টুকুই। কিন্তু চলতি মৌসুমে বাবুর দর্শকদের সামনে থাকার সময়ে পড়েছে বাধা। এখন তাকে দুপুর একটার আগে আর বের করা হচ্ছে না। তার পরিবর্তে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দর্শকদের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত থাকছে বছরখানেক আগে ভারতের বাগুইআটি থেকে উদ্ধার হওয়া তিনটি নাবালক শিম্পাঞ্জি।
নাবালক শিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে কেন বাবুকে সকাল থেকে দর্শকদের সামনে আনা যায় না? চিড়িয়াখানার পশু বিশেষজ্ঞরা জানান, কোনও বন্য প্রাণী নিজের আধিপত্যে ভাগ বসানো পছন্দ করে না। বাবুও এই মানসিকতা থেকে নাবালক শিম্পাঞ্জিগুলিকে আক্রমণ করতে পারে। তাই তাদের এক সঙ্গে দর্শকদের সামনে ছাড়ার ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়।
চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, দর্শকদের সামনে হাজির করা না হলেই অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে বাবু। মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে বৃদ্ধ শিম্পাঞ্জিটির। কখনও বা খাবার ছুড়ে ফেলছে, কখনও ভেংচি কাটছে চিড়িয়াখানার কর্মীদের। কখনও আবার অভিমানে দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে চুপচাপ মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকছে। আচমকাই শুরু করে দিচ্ছে দাপাদাপি। বাবুর পরিচর্যাকারীরা জানান, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খাঁচার সামনে কোনও দর্শক দেখতে না পাওয়ায় বাবুর মেজাজ খুব খারাপ থাকে। তাকে স্নান করাতে, খাওয়াতে কালঘাম ছুটে যায়।
চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, ১৯৯৮ সালে বাবুকে চেন্নাই থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল। সাতাশ বছরের বৃদ্ধ বাবু (শিম্পাঞ্জিদের গড় আয়ু ৩০) গত কয়েক বছর ধরে চিড়িয়াখানার অন্যতম ‘ক্রাউড পুলার’। বৃহস্পতিবার বছরের শেষে দিনেও সবচেয়ে বেশি ভিড় বাবুকে দেখার জন্যই হয়েছিল বলে জানান কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, সারা বছরই বাবুর খাঁচার সামনেই দর্শকদের ভিড় বেশি থাকে। দর্শকরাও তাকে কোনও কারণে না দেখতে পেলে আক্ষেপ করেন।
আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘বাবু এখন বার্ধক্যে পৌঁছে গিয়েছে। তার বিশ্রাম প্রয়োজন। তাই তাকে আর সারা দিন দর্শকদের সামনে ছাড়া যাবে না।’’
পশুরোগ বিশেষজ্ঞেরাও জানিয়েছেন, সাধারণত ৩০ বছরের মতো আয়ু শিম্পাঞ্জিদের। তবে চিড়িয়াখানায় যত্ন, নিয়মিত খাবার চিকিৎসা মেলায় সেই মেয়াদ কয়েক বছর বে়ড়ে যায়।
তবে চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, তিন নাবালক শিম্পাঞ্জির দুটো পুরুষ, এক জন মহিলা। এরাও খুব দুষ্টু। প্রতি দিন সকালে দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে তিন জন একে অপরের কাঁধে হাত রেখে মাঠে নামে। তাতেও আনন্দ পান দর্শকেরা। তবে বৃদ্ধ হলেও সকলের কাছে বুড়ো বাবুর আবেদন যে অন্যরকম তা এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন সবাই।
সূত্র: আনন্দবাজার
১ লা জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের রাসেল
�