শুক্রবার, ০১ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৪:৫৭:১৩

ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও জেলায় প্রথম স্থান অধিকারী শামিম এখন পাগল

ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও জেলায় প্রথম স্থান অধিকারী শামিম এখন পাগল

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: হাটে-ঘাটে, রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। বড় বড় চুল, দাড়ি, গোঁফ। এসবে ধুলা-ময়লা ভরা। ক্লিষ্ট মুখমণ্ডল। পরনে নোংরা ছিন্ন বস্ত্র। মানসিক ভারসাম্যহীন। মাদকাসক্তি মানুষের জীবনে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এর জ্বলন্ত প্রমাণ রেজাউল করিম শামীমের (৩৪) এই অবস্থা। তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামে। ওই গ্রামের সাইদুর জামান ও শিউলি বেগম দম্পতির ছেলে তিনি। আজকের শামীমকে দেখে কেউ বিশ্বাস করবেন না বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে এবং রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। শুধু তাই না, দুটো পরীক্ষায়ই জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। কিন্তু, এরপর আর তাঁর পড়াশোনা এগোয়নি। চাকরির কারণে তাঁর বাবা ছিলেন কুড়িগ্রামে ও মা ইউপি সদস্যের কারণে প্রায় সময় বাড়িতে থাকতেন না। শামীম একা বাড়িতে থাকতেন। তিনি যখন নবম শ্রেণিতে ওঠেন তখন একদিন বন্ধুদের সঙ্গে ধূমপান করেন। আস্তে আস্তে গাঁজা, ফেনসিডিল নেশায় জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে সেখান থেকে ফিরে আসতে পারেননি। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করা হয়েছে। কিন্তু ভালো হয়ে ওঠেনি। ১৯৯৭ সালের কথা। কুড়িগ্রামের রৌমারী সিজি জামান হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে শামীম। হঠাৎ করে একদিন পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়নি মেধাবী ছাত্রটা। কেন্দ্রজুড়ে শিক্ষকদের তৎপরতা। পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, শামীম কোথায়? প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকরা ছুটে গেলেন তার বাড়িতে। গিয়ে দেখেন সকাল ১১টা পার হচ্ছে অথচ শামীম ঘুমাচ্ছে। সেদিনের দৃশ্য দেখে চোখে জল ফেলেছেন প্রধান শিক্ষক। জল এসেছে অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরও। ওই বছর শামীমের আর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হয়নি। এসব তথ্য জানান ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হযরত আলী। উপজেলার হাটবাজার, জনবহুল এলাকা ও রাস্তায় দেখা মেলে মেধাবী সেই শামীমের করুণ ছবি। বাড়ি ছেড়ে খাওয়া-ঘুমানো খোলা আকাশের নিচে। তবে সে এখনো প্রমিত ভাষায় কথা বলেন, সঙ্গে চলে চা, সিগারেট। আবার কারো কথা শোনেন না তিনি। গত কয়দিনে তাঁর অবস্থা আরো খারাপ হয়। রেজাউল করিমের মামা ইউপি সদস্য শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘তাকে কোনোভাবে ঘরে রাখা যায় না। অনেক চিকিৎসার পর যখন সুস্থ হয়নি তখন পরিবারের লোকজন তার আশা ছেড়ে দেয়। এরপর থেকে রাস্তাঘাটে থাকা শুরু করে।’ শামীমের করুণ অবস্থা দেখে স্থির থাকতে পারেননি এসএসসি ১৯৯৭ ব্যাচের বন্ধুরা। তাঁর বন্ধুরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একমত হয়ে অর্থ সংগ্রহের পর গত ২৪ ডিসেম্বর তাঁকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠান। বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ঠিকানা ক্লিনিকে চিকিৎসা চলছে তাঁর। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পুরোপুরি সুস্থ হতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগতে পারে। এতে প্রতি মাসে ব্যয় হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো। ফেসবুক ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রৌমারী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি হারুন-অর রশীদ প্রথমে উদ্যোগ নেন। তাঁর পকেটের টাকায় ঢাকায় পাঠান। ঢাকায় তাঁদের বন্ধু ডা. জুম্মন, দৈনিক সমকালের সহকারী সম্পাদক শেখ রোকন, গাজীপুরের টঙ্গীর একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মুছা মিয়া, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের রৌমারী শাখার কর্মকর্তা মামুন খালিদ মিরনসহ অনেকে অর্থ দিয়ে চিকিৎসা চালাচ্ছেন। এ খবর পেয়ে তাঁর আরো অনেক বন্ধু সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক এন্ডোক্রাইন ও মেটাবলিক রোগ গবেষণা ও পুনর্বাসন সংস্থার (বারডেম) ওষুধ বিশেষজ্ঞ ডা. জুম্মন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শামীমের মানসিক সমস্যা রয়েছে। আগে কিভাবে চিকিৎসা হয়েছে জানি না। এবার আমরা আশাবাদী, পুরোপুলি ভালো হয়ে যাবে।’ রৌমারী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোমদেল হক বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনে মেধাবী ছেলেটার এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক আগেই তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করার দরকার ছিল। দেরিতে হলেও তার বন্ধুরা যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে, তা খুবই প্রশংসনীয়। তাকে সুস্থ করে তুলতে আমি সবার সহযোগিতা কামনা করছি। একই সঙ্গে যে মাদকের কারণে একটা মেধাবী ছাত্রের অপমৃত্যু ঘটল সেই মাদক বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চাচ্ছি।’-কালের কণ্ঠ ১ লা জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে