সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০২:৫৬:৩২

জানলে বিস্মিত হবেন, এটিই পৃথিবীর একমাত্র সমুদ্র যার কোনও তীর নেই!

 জানলে বিস্মিত হবেন, এটিই পৃথিবীর একমাত্র সমুদ্র যার কোনও তীর নেই!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: সাগর আছে কিন্তু তার কোনও তীর নেই। ব্যাপারটা কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতোই অবাস্তব মনে হয়। কিন্তু জানলে বি'স্মি'ত হবেন, সত্যিই আছে এ রকম সাগর। না অন্য কোনও গ্রহে নয়, আছে এই পৃথিবীতেই। 

প্রকৃতির এই অনবদ্য সৃষ্টি লু'কিয়ে আছে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে। তীর না থাকা সাগরটির নাম ‘সারগ্যাসো সাগর’। সাগরটি দৈর্ঘ্যে ৩২০০ কিলোমিটার এবং প্রস্থে প্রায় ১১০০ কিলোমিটার। সারগ্যাসো সাগরই পৃথিবীর একমাত্র সমুদ্র, যার কোনও তীর নেই।

তীরের বদলে সারগ্যাসো সাগরটিকে ঘি'রে আছে আটলান্টিক মহাসাগরের চার ধ'রনের স্রোত। সারগ্যাসো সাগরের পশ্চিমে আছে গালফ স্ট্রি'ম, উত্তরে আটলান্টিক কা'রে'ন্ট, পূর্বে ক্যানারি কা'রে'ন্ট এবং দক্ষিণে নর্থ-ইকুয়েটোরিয়াল কা'রে'ন্ট। এই চারটি স্রো'ত চ'ক্রাকারে ঘু'রে চ'লেছে অবি'রাম। চারটি স্রোতের মাঝে থাকা সারগ্যাসো সাগরের পানি স্থির ও প্রবাহহীন। তাই উ'ত্তা'ল আটলান্টিক মহাসাগরের সব চেয়ে শান্ত অঞ্চল এই সারগ্যাসো সাগর।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১০৯০ খ্রিস্টাব্দে আলমোরাভিদ সাম্রাজ্যের সুলতান আলি ইবন ইউসুফ একটি জাহাজ পাঠিয়ে ছিলেন এই এলাকায়। জাহাজে ছিলেন বিখ্যাত মানচিত্র-নির্মাতা মুহাম্মদ আল-ইদ্রিসি। তিনি সাগরটির মানচিত্র নির্মাণ করেছিলেন।

সারগ্যাসো সাগরকে র'হ'স্যের খনি বলে বর্ণনা হয়েছিল অনেক বিখ্যাত উপন্যাসে। চতুর্থ শতাব্দীর লেখক রাফাস ফেস্টাস অ্যাভেনিয়াসের লেখাতে এই সাগরের উল্লেখ পাওয়া যায়। উইলিয়াম হোপ হজসনের লেখা উপন্যাস ‘দ্য বোট অব দ্য গ্লেন ক্যারিগ’, ভিক্টর অ্যাপেলটনের লেখা ‘ডন টার্ডি ইন দ্য পোর্ট অব লস্ট শিপস’, জুলে ভার্নের লেখা ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’ উপন্যাস ছাড়াও আরও অসংখ্য উপন্যাস ও গল্পে সারগ্যাসো সাগরের কথা লেখা আছে।

সাগরটির নাম সারগ্যাসো দিয়েছিল পর্তুগিজরা। সাগরের বুকে তারা দেখেছিল সারগাসম নামে সামুদ্রিক শৈবালটির অস্বাভাবিক প্রাচুর্য। তাই তারা শৈবালটির নামেই সাগরটির নাম দিয়েছিল সারগ্যাসো। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধ'রে জাহাজের নাবিকদের কাছে মূর্তিমান বি'ভী'ষি'কা হয়ে আছে সারগ্যাসো সাগরটি।

সাগরটির কোনও কোনও জায়গায় শৈবালের স্ত'র এতোই পু'রু হয়, যে সেখান দিয়ে জাহাজ চলাচল করতে পারে না। এছাড়া পানির স্রো'ত না থাকায় স্রো'তের সাহায্যও পায় না জাহাজ। ওইসব জায়গা দিয়ে জাহাজ চা'লাতে গেলে জাহাজের প্রপেলারে শ্যাওলা জ'ড়িয়ে প্রপেলার ব'ন্ধ হয়ে যায়। একই জায়গায় আ'ট'কে থাকে জাহাজ। উ'ন্ম'ত্ত বাতাসের ঝা'পটায় দুলতে শুরু করে। ছোট বোট হলে ডু'বে যায়।

শোনা যায়, একবার একটি ইউরোপীয় জাহাজ সারগ্যাসো সাগরে ঢু'কে পড়েছিল। জাহাজে ছিল প্রচুর ঘোড়া। ঘোড়াগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বিক্রির উদ্দেশ্যে। কিন্তু সারগ্যাসো সাগরে ঢো'কার পর রু'দ্ধ হয়েছিল জাহাজের গতি। জাহাজ আ'ট'কে গিয়েছিল শ্যাওলায়। জাহাজের ওজন কমিয়ে এলাকা ছে'ড়ে পা'লিয়ে যাওয়ার জন্য সব ঘোড়া পানিতে ফে'লে দিয়েছিল নাবিকরা।

কিন্তু আটলান্টিকের মাঝে কী করে এসেছে এতো শৈবাল! আসলে সারগ্যাসো সাগরটিকে চারদিক থেকে ঘি'রে রাখা পানির স্রো'তই বয়ে নিয়ে এসেছিল সামুদ্রিক শৈবাল। সেগুলো জমা করেছিল সারগ্যাসো সাগরের বুকে। এখনও প্রতিনিয়ত জমা করে চ'লে'ছে। এভাবেই সারগ্যাসো সাগর একদিন হয়ে উঠেছিল ‘শৈবাল সাগর’। শৈবালের ফাঁ'দে পড়ে পানি হয়ে উঠেছিল স্রো'তহী'ন ও শান্ত।

৩৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজু'ড়ে থাকা সারগ্যাসো সাগরের পানি অস্বা'ভাবিক রকমের স্ব'চ্ছ। পানির রঙ ঘন নীল। উজ্জ্বল দিনে পানির নীচে ২০০ ফুট পর্যন্ত দৃ'ষ্টি চলে যায়। আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে সবচেয়ে লবণা'ক্ত অঞ্চলও এই সারগ্যাসো সাগর।

সারগ্যাসো সাগরে দেখতে পাওয়া যায় জৈববৈচিত্রের প্রাচুর্য্য। খাদ্যের বিপুল সম্ভার এবং শ্যাওলার আ'ড়ালে লু'কিয়ে থাকা সুবিধাজনক বলে বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক প্রাণী বাস করে এই সারগ্যাসো সাগরে। ডিম পাড়ার সময় আটলান্টিকের বিভিন্ন জায়গা থেকে সারগ্যাসো সাগরে চলে আসে আমেরিকান ও ইউরোপীয় ইলের দ'ল।

তবে মানুষের জন্যেই আজ প্লাস্টিকের ডা'স্টবি'ন হয়ে উঠেছে সারগ্যাসো সাগর। দূ'ষ'ণ ছ'ড়া'চ্ছে সারগ্যাসো সাগর থেকে চারদিকের জলস্রো'তে। এর ফলে আটলান্টিক মহাসাগরজুড়ে ছ'ড়ি'য়ে পড়ছে দূ'ষ'ণ।

তবে আশার কথা, পর্তুগালের স্বশাসিত আজোর দ্বীপপুঞ্জ, বারমুডা, মোনাকো, ব্রিটেন ও আমেরিকাকে নিয়ে ২০১৪ সালের ১১ মার্চ গড়ে উঠেছে ‘সারগ্যাসো সি কমিশন’। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও স্বে'চ্ছাসে'বী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে ‘সারগ্যাসো সি কমিশন’ ঝাঁ'পিয়ে পড়েছে সারগ্যাসো সাগরকে বাঁ'চাতে। সূত্র: দ্য ওয়াল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে