সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:০০:১৩

সাপের কামড়ে মৃত্যু, জানাজা শেষে ঘটলো চাঞ্চল্যকর ঘটনা

সাপের কামড়ে মৃত্যু, জানাজা শেষে ঘটলো চাঞ্চল্যকর ঘটনা

নড়াইল: নড়াইলের লোহগড়া উপজেলায় সাপের কামড়ে একটি শিশুর মৃত্যু ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ডাক্তাররা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করলেও কবিরাজ শিশুটিকে বাঁচানোর স্বপ্ন দেখিয়েছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় রাত ৮ টা পর্যন্ত মৃত শিশুর পরিবারে চলেছে দৌঁড়ঝাঁপ। অথচ কাফনের কাপড় দিয়ে মোড়া শিশুর লাশ। জানাজা এবং কবর খোঁড়াও শেষ পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা  হয়েছে  কবরের মাচালের বাঁশ। কবরে লাশ নামানোর প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় নড়ে-চড়ে উঠলো শিশুটি। মুহুর্তেই দাফনে নিয়োজিত মানুষেরা ওই লাশ নিয়ে ছুটলো কবিরাজের উদ্দেশ্যে।

অথচ মঙ্গলবার সকালেই হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে বেঁচে নেই শিশুটি। কিন্তু কে শোনে কার কথা! এ্যাম্বুলেন্স এ করে শিশুটিকে নিয়ে তার আত্নীয়-স্বজনেরা পরিচিত এক কবিরাজের বাড়িতে রওনা হলো। এ ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সিংগা গ্রামে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া পৌরসভার সিংগা গ্রামের ওহিদুজজ্জামানের মেয়ে সিংগা মশাঘুণি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী নিতু ওরফে মিতু খানম (৯) কে গত সোমবার (৩ আগষ্ট) গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপে কামড় দেয়। তখন নিতুর মা-বাবা বুঝতে পারেননি যে, মেয়েকে সাপে কেটেছে। ধারণা করেছেন স্বপ্নে ভয় পেয়েছে সে।

তাই মঙ্গলবার (৪ আগষ্ট) সকালে নিতুকে নেয়া হয় ঝাঁড়-ফুঁকের জন্য স্থানীয় মসজিদের ইমামের কাছে। হুজুর পানি পড়া দেন। কিন্তু রাত থেকেই নিতুর শরীরে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে শিশুটি। তখন বাবা মায়ের খেয়াল হয় ঘরের যেখানে মেয়ে ঘুমিয়ে ছিল সেখানে সাপের গর্ত। খেয়াল হয় মেয়ের হাতে হালকা কামড়ের দাগ। তখনই তাদের ধারণা হয়ে যায় মেয়েকে সাপে কামড় দিয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে অচেতন অবস্থায় প্রথমে লোহাগড়া হাসপাতালে নিয়ে আসলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত  ঘোষণা করে।  

এরপর যথারীতি লক্ষ্মীপাশা পৌর কবরস্থানে তাকে কবর দেওয়ার প্রস্তুতি নেয় এলাকাবাসী। মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে মারকাজুল মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে লাশ কবরে নামানোর পূর্ব মূহুর্তে নিতুর শ্বাস-প্রশ্বাস লক্ষ্য করে উপস্থিত ব্যাক্তিরা। মুহুর্তেই তারা ওই লাশ নিয়ে ছুটে যান নড়াইল সদর হাসপাতালের দিকে। কিন্তু এমন সময় ওই পরিবারের পূর্ব পরিচিত সাতক্ষীরার এক কবিরাজ ফোনে নির্দেশ দেন বিকাল ৫টার আগে নিতুকে দাফন করা যাবে না এমনকি হাসপাতালেও নেয়া যাবে না। নিতু বেঁচে আছে। নির্দেশ দেয়া হয় দ্রুত কবিরাজের বাড়িতে নিযে যাবার। পরে অভিভাবকেরা মোবাইলে ওই কবিরাজের সাথে কথা বলে কবিরাজের কথা মতো শিশুটিকে এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে ওই কবিরাজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা সেলিম রেজা এমটি নিউকে জানান, ‘আমি হাসপাতাল এবং নিতুর পরিবারের সাথে কথা বলেছি, আসলে মেয়েটিকে মূলত আগের দিনই সাপে কেটে ছিল কিন্তু তারা হাসপাতালে নিয়ে আসে পরের দিন। ফলে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই (রাস্তায়) মেয়েটি মারা যায়। পরে লোহাগড়া হাসাপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তাররা মৃত ঘোষণা করেন। তবে এ ব্যাপারে নিতুর বাবা মুখ খুলছেন না বলেও জানান তিনি।  

এদিকে, মিতুর বেঁচে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাকে এক নজর দেখার জন্য সাধারণ মানুষ ভীড় জমায় কবর স্থানের সামনে। কবিরাজের বাড়িতে যাবার উদ্দেশ্যে রওনা হলেও পথিমধ্যে সন্ধ্যা ৭ টায় শিশুটিকে নেয়া হয় নড়াইল সদর হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের জানান, নিতুর অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে। ওই কথা শুনে তারা নিতুর লাশ নিয়ে আবার ফিরে আসে সেই কবরস্থানেই। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়।

গত মঙ্গলবার সকালে লোহাগড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডাক্তার নাজমুন নাহার (বুবলি) বলেন, এ ঘটনা আমি শুনেছি কিন্তু হাসপাতালে এমন কোন রোগী নিয়ে কেউ এসেছিলো তা আমার জানা নাই।

এদিকে, লোহাগড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক সুবাষচন্দ্র বিশ্বাস এমটি নিউজকে জানান, এ ব্যাপারে কোন কিছু আমার কানে আসেনি। তাছাড়া কারো নামে কোন ধরণের মামলাও হয়নি।

তবে পুরো ঘটনাকে গুজব উল্লেখ করে লোহাগড়া পৌর মেয়র নেওয়াজ আহম্মেদ ঠাকুর এমটি নিউজকে জানান, আসলে জানাজা শেষে লাশ নড়ে উঠার খবরটি সম্পূর্ণ গুজব। কারণ নড়ে উঠতে দেখার কোন প্রতক্ষ্যদর্শী নেই। কোন ব্যক্তি যে আসল ঘটনা দেখেছে সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে