এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: সারা দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে গরু-পালন ব্যবসায় লাভের চেষ্টা চালাচ্ছে খামারীরা। আর ঠিক এই সময়েই ভারতীয় প্রাণিবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এক ধরনের ভাইরাসঘটিত রোগ আগামী দিনে গরুর অস্তিত্বের সঙ্কটের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাতে খামারীরা চরম বিপদের সম্মুখীন হওয়ার পাশাপাশি বিপদে পড়বে সমস্ত ভারতবর্ষ।
সম্প্রতি ভারতের বেলগাছিয়া প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই রোগের সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা সতর্কবাণী দিয়েছেন। রোগটি ভারতে ছড়িয়ে পড়ায় গরু-মোষের দুধ কমে যাচ্ছে। গর্ভাবস্থায় গবাদি পশুর বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, মার খাচ্ছে রফতানি ব্যবসাও। গ্রামীণ অর্থনীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বড় বাধা হয়ে উঠেছে ওই রোগ।
রোগটির পোশাকি নাম ‘ইনফেকসাস বোভাইন রাইনোট্রকিআইটিস’ (আইবিআর)। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এটি এক ধরনের ভাইরাসজনিত (বোভাইন হারপেজ ভাইরাস, বিএইচভি-১) রোগ। ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর স্টাডি অব অ্যানিম্যাল রিপ্রোডাকশন (পশ্চিমবঙ্গ শাখা)-এর সাধারণ সম্পাদক জহরলাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রোগটির জন্ম ১৯৫০ সালে।
তিনি আরো বলেন, এই মূহূর্তে ভারতে এই রোগটি চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। এর ফলে সমস্ত ভারতের গরু বন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে দেশের উন্নত গরুর সংখ্যা বাড়ার বদলে অসুস্থ হয়ে গিয়ে গরুর গর্ভধারণের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে শুরু করবে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে এর একাধিক নমুনা পাওয়া গিয়েছে।’’
‘আইবিআর’ রোগাক্রান্ত গরুর থেকে মানবশরীরেও সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বেঙ্গালুরু ভেটেনারি কলেজের অধ্যাপক ভি চন্দ্রশেখর মূর্তি। তাঁর কথায়, রোগাক্রান্ত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত দ্রব্য বা মাংস খেয়ে মানুষের কিডনি, ফুসফুস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শরীরের গাঁটে গাঁটে ব্যথা থেকে শুরু করে প্রচণ্ড জ্বর আসতে পারে। তা থেকে ঘটতে পারে মানুষের মৃত্যুও।
কী ভাবে ছড়ায় এই রোগ?
বিজ্ঞানীদের কথায়, রোগটা ছোঁয়াচে। খাদ্য-পানীয়ের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রজননের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে ওই বিপজ্জনক রোগ।
আক্রান্ত গরুদের লক্ষণ কী?
জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে গাঢ় সর্দি, মুখে ঘা, চোখ দিয়ে জল পড়া, পেটের বাচ্চা নষ্ট হওয়া ও গরুর দুধ কমে যাওয়া ইত্যাদি।
এই রোগ থেকে বাঁচতে উপায় কী?
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই রোগের কোনও ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। প্রাণীদের খামার দূষণমুক্ত রাখতে হবে। খামারের আশেপাশে আবর্জনা বা নোংরা জল জমতে দেওয়া চলবে না। নিয়মিত ফিনাইল ব্যবহার করতে হবে। প্রাণীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। ‘মার্কার’ ভ্যাকসিন এক বছরের মধ্যে বাজারে এলে এই রোগ প্রতিরোধে অনেকটাই কাজে আসবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
সূত্র: আনন্দবাজার
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/