রবিবার, ০৯ জানুয়ারী, ২০২২, ০৬:০০:১৭

৮৫ বছরের রতন টাটার প্রিয় বন্ধু কিন্তু কে এই তরুণ? জানলে চমকে উঠবেন!

৮৫ বছরের রতন টাটার প্রিয় বন্ধু কিন্তু কে এই তরুণ? জানলে চমকে উঠবেন!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : টাটা গোষ্ঠীর এক সময়ের মেরুদণ্ড রতন টানার ৮৫ বছরে পা দিয়েছেন গত ২৮ ডিসেম্বর। আর তার জন্মদিন পালন করছিলেন যিনি, তার বয়স ২৭ বছর। নাম শান্তনু নায়ডু। টাটা গোষ্ঠীর পঞ্চম প্রজন্মের এক কর্মী। আর এখন রতন টাটার প্রিয় বন্ধু।

শান্তনু রতনের অফিসের কাজে নিয়মিত সাহায্য করেন। আবার ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের কোথায় কোন হ্যাশট্যাগ দিতে হবে, কোন ইমোজির মানে কি, এ সব ব্যপারেও বন্ধুকে চোস্ত করে তোলেন সময় পেলেই। মধ্য আশির শিল্পপতির ইনস্টাগ্রাম অনুরাগী সংখ্যা যে এখন পাঁচ লক্ষ পার করেছে তা এই প্রশিক্ষণের দৌলতেই। বন্ধুর উৎসাহে রতন নিজেও নিয়মিত ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন।

কিন্তু কে এই শান্তনু? টাটা গোষ্ঠীর এক সময়ের চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার আলাপ হল কী ভাবে। টাটাদের সঙ্গে কি তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল? এমন অসমবয়সি দু’জন হঠাৎ প্রিয়বন্ধুই বা হয়ে উঠলেন কী ভাবে? পুণের বাসিন্দা শান্তনু এক জন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার। পড়াশোনা পুণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। টাটাদের পরিবারের সঙ্গে তাদের পরিবারের পুরনো জানাশোনা থাকলেও শান্তনুর পরিবারের কেউ কখনও রতন টাটার সঙ্গে সরাসরি কাজ করেননি।

শান্তনু টাটা এলেক্সিতে কাজ শুরু করেন এক জন জুনিয়র ডিজাইনার ইঞ্জিনিয়র হিসেবে। সেই সময় টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ছিলেন রতন টাটা। তার সঙ্গে বন্ধুত্ব তো দূর অস্ত্ নজরে পড়াও দিবাস্বপ্ন ছিল তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। তবে সুযোগ তৈরি হয়। সংস্থার জুনিয়র কর্মী। রাতের ডিউটিই থাকত বেশি। সদ্য স্নাতক হয়ে চাকরিতে যোগ দেওয়া ছেলেটি কাজের ফাঁকে রাস্তার কুকুরদের দেখভাল করতেন। 

সেই সময়েই শান্তনু খেয়াল করেন তার অফিস চত্বরে প্রায়ই কিছু কুকুর গাড়ি চাপা পড়ে মারা যায়। ঘটনাগুলি ঘটে মূলত রাতের দিকেই। স্বভাবে পশুপ্রেমী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ঠিক করেন এর সমাধান করবেন। প্রথমে পথচলতি গাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন শান্তনু। জানা যায়, রাতে গাড়ি চালানোর সময় কুকুরগুলিকে চট করে দেখতেই পান না চালকরা। ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে।

শান্তনু ঠিক করেন রাস্তার কুকুরদের আলো জ্বলা কলার পরানো হবে। যাতে রাতের অন্ধকারেও তাদের দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কলার বানাবে কে? কেই বা পরাবে? অফিসের কাজ সামলে একার পক্ষে এত কাজ করা সম্ভব নয়। তবে এই সমস্যারও সমাধান বের করে ফেলেন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার। রাস্তার কুকুরদের দেখভালের জন্য সমমনস্কদের নিয়ে তৈরি করে ফেলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘মোটোপজ’। এই ‘মোটোপজ’-ই জীবন বদলে দেয় শান্তনুর।

সংস্থা তৈরি হলেও টাকা ছিল না। কলার যে বানানো হবে তার জিনিস আসবে কোথা থেকে! বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছেঁড়া জিনস জোগাড় করে আনেন শান্তনুরা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তাতে জোড়া হয় অন্ধকারে জ্বলে এমন কাপড়। তৈরি হয় কলার। শান্তনুদের এই উদ্যোগ পুণের টাটা এলেক্সি কর্তৃপক্ষের নজর কাড়ে। সংস্থার নিউজলেটারে জায়গা করে নেয় ঘটনাটি। নজরে পড়ে তৎকালীন চেয়ারম্যান রতন টাটারও।

রতন নিজেও পশুপ্রেমী। তার সংস্থার এক কর্মীর এমন উদ্যোগের কথা জেনে রতন নিজেই যোগাযোগ করেন শান্তনুর সঙ্গে। তাদের কাজকর্মের বিশদ জানাতে বলেন। সেই শুরু। শান্তনুর সঙ্গে দেখা হয় রতন টাটার। তাদের সংস্থাকে অর্থ সাহায্য করেন রতন। তবে টাটা গোষ্ঠীর তরফে নয়। শান্তনুদের রতন সাহায্য করেছিলেন ব্যক্তিগত ভাবে। সম্পূর্ণ নিজের অর্থ থেকে। এর পরে ই–মেলে প্রায়শই কথা হতে থাকে দু’জনের। 

প্রথমে তাদের সংস্থার কাজ নিয়ে, পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিষয়ে ভাবনাচিন্তা বিনিময় এমনকি একটা সময়ে ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্নোত্তরের পর্যায়েও পৌঁছে যায় কথাবার্তা। তবে টাটার সঙ্গে সম্পর্কে এর পর কিছুদিন জন্য ছেদ পড়ে শান্তনুর। চাকরি ছা়ড়েন। উচ্চশিক্ষার জন্য পুণে থেকে আমেরিকায় পাড়ি দেন। ভর্তি হন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঘটনাচক্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন রতন টাটাও।

টাটার সঙ্গে সম্পর্কে ছিঁড়লেও দুই বন্ধুর যোগাযোগে ছেদ পড়েনি। শান্তনুর গ্র্যাজুয়েশনের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন রতন। সে দিনই শান্তনুকে তার সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেন। রতন টাটার ব্যক্তিগত বিজনেস অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন শান্তনু। গাঢ় হতে থাকে দুই অসম বয়সির বন্ধুত্ব।

রতনের যে বিষয়টি শান্তনুকে বিস্মিত করে, তা হল তার লক্ষ্যে স্থির থাকা। শান্তনুর কথায়, ‘‘উনি টানা কাজ করে যেতে পারেন। নন-স্টপ। নো ব্রেক।’’ রতনকে নতুন স্টার্টআপ সংস্থার ব্যাপারে নিত্য নতুন ধারণাও দেন শান্তনু। সেই সব ভাবনার বেশ কয়েকটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগও করেছেন রতন। এমনকি টাটা গোষ্ঠী কোন কোন নতুন ক্ষেত্রে নিজেদের ডানা মেলতে পারে সে ব্যাপারেও রতনকে নিয়মিত তত্ত্ব তলাশ দেন তাঁর বন্ধু তথা সহকারী শান্তনু। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে