এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: যে মানুষটি তার জীবনের অনেকটা দিন কাটিয়েছেন ডাক বিক্রি করে। সেই মানুষটি কয়েক বছরের ব্যবধানে হয়ে গেছেন পাঁচ হাজার কোটি টাকার মালিক। কোলকাতার বউবাজার এলাকার পুরানো চিনাপাড়ার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য যে স্কুল তৈরি হয়েছিল, সেই স্কুলের স্কুলের পাশে সারাদিন ডাক হাঁকিয়ে ডাব বিক্রি করতেন সোহরাব নামের ওই ব্যক্তি। অথচ কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি এখন বিএমডাব্লিউয়ে চলা ফেরা করেন। খবর-সংবাদ প্রতিদিন।
অদৃশ্য ম্যাজিকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওই মালিককে এখন ওই এলাকার মানুষ ‘ভাইজান’ নামেই চেনে। ‘ভাইজান'-এর আসল নাম যে মুহম্মদ সোহরাব হোসেন। তিনি ২০০৬-এ তৎকালীন শাসক বামফ্রণ্টের শরিকদল আরজেডির টিকিটে বিধানসভা ভোটে দাঁড়ানোর পর৷ জিতে সেবার বিধায়কও হয়েছিলেন তিনি। ২০১১-য় হেরে দ্রূত দল বদল করে যোগ দেন তৃণমূলে৷ এরপর থেকে খুব একটা নাম শোনা যেত না সোহরাবের৷
শোনা গেল বুধবার৷ ভোরে রেড রোডে বিদেশি মহার্ঘ্য গাড়ির ধাক্কায় এক বায়ুসেনার মৃত্যুর ঘটনায়৷
৯২ লক্ষ টাকা দামের যে ‘অডি কিউ ৭' এসইউভির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্পোরাল পদমর্যাদার আধিকারিক অভিমন্যু গৌড়ের, সেটির মালিক এই মুহম্মদ সোহরাবের বড় ছেলে আম্বিয়া৷ সে নিজেই দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি চালাচ্ছিল বলে ধারণা পুলিশের৷ পুলিশের সন্দেহকে আরও দৃঢ় করেছে ঘটনার পর থেকেই ছেলে আম্বিয়া-সহ গোটা পরিবারকে নিয়ে সোহরাব অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায়৷
কলকাতা-সহ রাজ্যের ফলবাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে যে মেছুয়া ফলপট্টি, তার মুকুটহীন সম্রাট এই সোহরাব৷ রাস্তার ধারে ডাব বিক্রি থেকে একদিন বসিরহাট থেকে ডাব এনে ভোররাতে ঠনঠনিয়ায় পাইকারি ডাবের হাটে ব্যবসা শুরু৷ তারপর আস্তে আস্তে ফলপট্টিতে. একছত্র আধিপত্য কায়েম৷ বর্তমানে ক্যালকাটা ফ্রুট মার্চেণ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সোহরাব মাংস, মাছ, সবজি প্রক্রিয়াকরণ থেকে বিদেশে রপ্তানির ব্যবসাও শুরু করেছিলেন৷ পাশাপাশি সদর স্ট্রিট, মারকুইস স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদওয়াই রোড-সহ বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক হোটেল কিনেছিলেন সোহরাব ও তাঁর দুই ছেলে আম্বিয়া ও সাম্বিয়া৷ শহরের অভিজাত শ্রেণির সঙ্গে নিত্য ওঠাবসা করা সোহরাব বসবাসের জন্য বেশ কয়েক কোটি টাকা দিয়ে জোড়াসাঁকো থানা এলাকায় ‘খাজা আবদুল ঘানি' নামে এক প্রাসাদোপম অট্টালিকা কিনেছেন৷
প্রতিপত্তি বাড়ার পাশাপাশিই রাজনীতির জগতে প্রবেশ৷ চতুর সোহরাব জানতেন রাজনৈতিক প্রভাব অনেক বন্ধ দরজা খুলে দেয়৷ অঙ্ক কষেই ২০০৫-এ শাসকপক্ষ বামেদের সঙ্গে ভিড়ে যান৷ ফ্রণ্টশরিক আরজেডির টিকিটে ২০০৬ সালে বড়বাজার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে জিতেও যান৷ ২০১১-য় হেরে গিয়ে আর দেরি করেননি৷ দ্রূত দল বদল করে যোগ দেন তৃণমূলে৷ এর মধ্যে সোহরাব নিজের প্রতিপত্তি রাজ্যের বাইরে ছড়িয়ে ফেলেন৷ দেশের অন্য রাজ্য ছাড়াও অফিস করেন আমেরিকাতেও৷
বাবার অগাধ পয়সা দেখেই ছোট থেকে বড় হয়েছে দুই ভাই আম্বিয়া ও সাম্বিয়া৷ দু'জনেরই পড়াশোনা দার্জিলিং-এর কনভেণ্ট স্কুল, ভাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই আম্বিয়ার বিদেশ ভ্রমণ ও বিদেশি গাড়ি কেনার প্রতি ঝোঁক৷ আর ছিল সুন্দরী নারীর প্রতি অদম্য টান৷ আমদানি-রপ্তানির ব্যবসার জন্য বছরের বেশিরভাগ সময়ই দেশের বাইরেই কাটাতে অভ্যস্ত আম্বিয়া৷ তাঁর নামেও কড়েয়া, পার্ক স্ট্রিট ও শেক্সপিয়র সরণি থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে৷ বেশিরভাগই মদ্যপ অবস্হায় নৈশক্লাবে ভাঙচুর করার অভিযোগ৷
কলকাতায় থাকলে সে বেশিরভাগ সময়ই নৈশক্লাবে কাটাত৷ ব্রাউন সুগারের মতো নেশাতেও আসক্ত ছিল বলে জানিয়েছে ঘনিষ্ঠরা৷ বিবাহিত আম্বিয়ার নর্ম্যসহচরীর তালিকা যত দীর্ঘ তার থেকেও লম্বা তার গ্যারেজে থাকা বিদেশি গাড়ির সংখ্যা৷ সবচেয়ে পছন্দের ছিল পর্শে৷ রয়েছে, অডি, মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, ফেরারি, রেঞ্জার রোভার, ল্যান্ড রোভারের মহার্ঘ বিদেশি গাড়ি৷ ভিড় ঠাসা রাস্তায় দ্রূতগতিতে বিদেশি গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রেখে উড়ে যাওয়া ছিল আম্বিয়ার প্যাশন৷ এক আত্মীয়ের কথায়, নতুন গাড়ি কিনে তা ছ'মাস থেকে এক বছর ব্যবহার করে দ্রূত সেই গাড়ি বিদেশে রপ্তানি করে দিত অম্বিয়া৷ পোশাক পাল্টানোর মতো গাড়ি বদল করে সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিত সে৷ বাবার খোলা দু'টি কোম্পানির ডিরেক্টর এই অম্বিয়া৷ মুসসাদ্দি বিজনেস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিতে রয়েছে অতিরিক্ত ডিরেক্টর পদে৷ এই কোম্পানির নামেই কেনা হয় দুর্ঘটনার কবলে পড়া গাড়িটি৷ এছাড়াও আরও পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আম্বিয়া৷
১৪ জানুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের/রাসেল