সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৬:৪৭:৪০

মহাকাশে ফুটলো প্রথম ফুল জিনিয়া!

মহাকাশে ফুটলো প্রথম ফুল জিনিয়া!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বহু সাধ্যসাধনার পর অবশেষে মহাকাশে প্রথম ফুল ফোটাতে সক্ষম হল মানুষ৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস ) থেকে তার ছবি টুইটারে আপলোড করেছেন নাসার মহাকাশচারী স্কট কেলি৷ ওই মহাকাশ স্টেশনে এক বছর পূর্ণ করতে চলা কেলি মজা করে ছবির তলায় লিখে দিয়েছেন , 'হ্যাঁ! মহাকাশে প্রাণের অন্যান্য ধরনের প্রকাশও রয়েছে!'  জিনিয়া নামের ফুলটি হল কমলা রঙের - যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলে পাওয়া যায়৷ ঘটনার গুরুত্ব এখানেই যে, জিনিয়া স্যালাদে ব্যবহার করে খাওয়া যায়৷ অর্থাৎ, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল তথা স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে বহুদূরে মহাকাশে অনেক কম মহাকর্ষে (মাইক্রোগ্র্যাভিটি) বা মেরু অঞ্চলে কোনও অভিযান চালাতে গেলে, কৃত্রিম পরিবেশে ফলানো এই ধরনের ফুল-ফল বা শাক-সব্জি অভিযাত্রীদের দারুণ কাজে আসবে৷ মঙ্গলগ্রহে বসতি স্থাপনের সম্ভাবনাকেও বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করবে এ ধরনের গবেষণা৷ টাইমস অপ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।

২০১৪ সালের মে মাসে মহাশূন্যে স্থাপন করা হয় আইএসএস-কে৷ ওই মহাকাশ স্টেশনের 'ভেজি' ল্যাবেই জিনিয়া ফুলটি ফুটিয়েছেন কেলিরা৷ এ জন্য গবেষকরা লাল, নীল ও সবুজ এলইডি-কে সালোক সংশ্লেষের জন্য বিকল্প উত্স হিসেবে৷ পৃথিবীতে ফোটা জিনিয়ার সঙ্গে ফুলটির বিশেষ কোনও পার্থক্য নেই৷ শুধু পাপড়ির ধারগুলি ভিতরের দিকে মোড়া৷ সেটা হয়তো কম মহাকর্ষ টানের মধ্যে ফোটার কারণে হয়েছে৷ আগে এই মহাকাশ ল্যাবে পালং এবং আরুগুলা শাক ফলিয়েছিলেন গবেষকরা৷ যদিও প্রথম প্রচেষ্টাটা ব্যর্থ হয়েছিল৷ এরপর ইচ্ছে রয়েছে চীনা বাঁধাকপি এবং (২০১৮ সালের মধ্যে) টম্যাটো ফলানোর৷ 'পালংয়ের থেকে জিনিয়া কিন্তু অনেকটাই আলাদা৷ আলো ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের প্রতি জিনিয়া গাছ অনেক বেশি সংবেদনশীল৷ এটা বাড়তেও বেশি সময় নেয়৷ ৬০ থেকে ৮০ দিন লাগে৷ মহাকাশের কৃত্রিম পরিবেশে এই গাছ ফলিয়ে তাতে ফুল আনাটা খুবই কঠিন৷ টম্যাটো ফলানোর আগে এই সাফল্যটা জরুরি ছিল৷ আমাদের অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হল', বললেন ভেজি-র প্রোজেক্ট ম্যানেজার ট্রেন্ট স্মিথ৷

তবে এক সময় জিনিয়া ফুলটি ফোটানোর এই পরীক্ষা প্রায় ব্যর্থ হতে চলেছিল৷ কারণ, গাছগুলির ভিতরে জলের চাপ ল্যাবের কৃত্রিম পরিবেশের বায়ুর চাপ থেকে বেশি হওয়ায়, পাতা থেকে জল বেরিয়ে আসছিল৷ ল্যাবে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশিহওয়ায় ওই জল পাতার চারিদিকের ধার বরাবর ফোঁটারআকারে জমা হচ্ছিল৷ সেগুলো শুকোতে ফ্যান চালানো হয়৷ তাতে আবার হিতে বিপরীত হয়৷ দু'টি গাছ শুকিয়ে মারা যায়৷ তবে অন্য গাছগুলি বেঁচে যায়৷ শুধু তাই নয়, গত ৮ জানুয়ারি দিকে সেগুলিতে নতুন করে বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা দেয়৷ কুঁড়িও বাহির হতে দেখা যায়। অবশেষে সবাইকে অবাক করে দিয়েফোটে জিনিয়া৷

নাসার হিউম্যান রিসার্চ প্রোগ্র্যামের ডেপুটি এলিমেন্টগবেষক আলেক্সান্দ্রা হুইটমায়ারের কথায়, 'ভবিষ্যতে বিভিন্ন অভিযানে এ ধরনের গাছের গুরুত্ব ক্রমেই বাড়বে, কারণ সেক্ষেত্রে অভিযানের সদস্যের সঙ্গে পৃথিবীর স্বাভাবিক পরিবেশের যোগাযোগ খুবই কম থাকবে৷ অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলের গবেষণা স্টেশনগুলিতেও সমীক্ষা চালিয়ে দেখাগিয়েছে, চার দেওয়ালের মধ্যে খুব কম পরিবেশগত উদ্দীপনারসাহায্যে ফলানো এই ধরনের গাছ কতটা গুরুত্বপূর্ণ৷ এগুলো থেকে পাওয়া তাজা খাদ্য অভিযাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যেরজন্যও প্রয়োজনীয়৷'
১৮ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে