এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: শুকশারি-র মতো বাড়ির ঘুলঘুলিতে ঘর বেঁধেছিল যে চড়ুই-দম্পতি, কোথায় যেন তারা হারিয়েছে! রোদ-সকালে বাড়ির উঠোনে চু-কিতকিত খেলত যে চড়ুইছানারা, তারাও তো আর আসে না! ঘর আছে, ঘুলঘুলি নেই। বাড়ি আছে, উঠোন নেই। এখন যদি কেউ ভাবে, রোজ পাখির ডাকে ঘুম ভাঙবে, কেউ যদি ভাবে, সবুজ শ্বাস নেবে, আরশির ফাঁক গলে আসা দিনশুরুর নরম আলো গায়ে মেখে, জানালা খুলে দেখবে, সবুজ বনানি- শহরের কংক্রিটের জঙ্গলে থেকে সে তো স্বপ্নই।
কিন্তু, সেই স্বপ্নকেই বাস্তব করে তুলেছেন এক দম্পতি। শহরের বুকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য। হ্যাঁ, অভয়ারণ্যই। সেখানে এশিয়ার হাতি আছে, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে, আছে রংবাহারি পাখিও। আবার সাপ খুঁজলে, তা-ও পাবেন।
শুরুটা করেছিলেন ৫৫ একর জমিতে। বাড়তে বাড়তে তা ৩০০ একরে। অরণ্য থেকে অভয়ারণ্য। আসলে, এটাই ছিল পামেলা ও অনিল মালহোত্রার স্বপ্ন। দুজনেই প্রকৃতিপ্রেমী। পশুপ্রেমীও। প্রকৃতির সম্পদকে সংরক্ষণ করতে আরও কারও ভরসায় না-থেকে, ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তারা তৈরি করেছেন বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য। সেখানে হায়না ঘোরে হায়নার মতো। চিতাবাঘ, বাংলার বাঘ, এশীয় হাতি সবাই নিরাপদ। চোরাশিকারির উত্পাত নেই। দম্পতির বাগান থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাবে, এমন সাহস কারও নেই। সেখানে জঙ্গল চিরে তিরতির বেগে নদী বয়ে গেছে। নুয়ে পড়া গাছের ডাল, নদীজল ছুঁয়ে খেলা করে। নদীর বুকে চুমুক দিয়ে তৃষ্ণা মেটায় বনের বাসিন্দারা।
তারা বলছেন, SAI, সেভ অ্যানিম্যালস ইনিশিয়েটিভ। যার নেপথ্যে থাকা দম্পতি আসলে NRI। কিন্তু, প্রবাসী হলেও নাড়ির টানকে উপেক্ষা করতে পারেননি ড. অনিল মালহোত্রা। বলছিলেন, হিমালয়ের কোলেই অভয়ারণ্য গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, আইনি বাধায় এক লপ্তে ১২ একরের বেশি জমি পাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই, উত্তর ভারত ছেড়ে তাদের নেমে আসতে হয় দক্ষিণে। কর্ণাটকের কোদাগু জেলায়। ৫৫ একর জমি পান। পুরোটাই ছিল কৃষকদের পরিত্যক্ত জমি। চাষবাস না-করে তারা ফেলে রেখেছিলেন। সেখানেই গড়ে তুলেছেন এই অভয়ারণ্য। ৫৫ একর থেকে ৩০০ একর। একসময়ের অনাবাদি জমি আজ সবুজে সবুজ। ঘন অরণ্য। আশপাশের পরিবেশটাই বদলে দিয়েছে সেই অভয়ারণ্য। পামেলা জানালেন, জীববৈচিত্র্যের কথা মাথায় রেখেই আমরা কোদাগুকে বেছে নিয়েছি।
শুরু থেকে সময়টা খুব কম নয়। ১৯৯১-এ প্রথম কেনা জমি। তার পর, ধীরে ধীরে সাজিয়ে তুলতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। তবে, প্রথম থেকে তিনটে শর্ত দিয়েছিলেন ওই দম্পতি। এখানে গাছ কাটা চলবে না। উত্পাত করতে মানুষের অনাগোনা নয়। চলবে না পশুশিকার। অক্ষরে অক্ষরে তা মেনেছেন অভয়ারণ্যের চারপাশে থাকা মানুষজন।
অরুণ বলছিলেন, পাখির ডাকে ঘুম ভাঙবে, এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। আজ পাখির ডাক শুনতে পাই। ওদের কিচির মিচিরে প্রাণবন্ত আমাদের প্রাণের অরণ্য। জানালেন, ৩০৫ প্রজাতির পাখি এখনও পর্যন্ত তাঁরা দেখেছেন। প্রাণীদের নজরে রাখতে ক্যামেরাও বসিয়েছেন। কোনও চোরাশিকারি ঢুকে পড়ল কি না, ওই ক্যামেরাতেই নজর রাখেন।
এই দম্পতির কথায়, লোকে মনে করে প্রাণীদের জন্য অরণ্য প্রয়োজন। কিন্তু, অরণ্যেরও সমান ভাবে প্রয়োজন রয়েছে বন্যপ্রাণীর। অরণ্য আশ্রয় দেয়, খাদ্য দেয়। আবার পশুপাখিরাও সাহায্য করে অরণ্যের বংশবৃদ্ধিতে। দু-পক্ষই পারস্পরিক নির্ভরশীল। এই পারস্পরিক নির্ভরতাতেই ঘন হচ্ছে জঙ্গল, দিনে দিনে বাড়ছে পশুপাখিও। -ইন্ডিয়াটাইমস
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে