ডা. হুমায়ুন কবীর হিমুঃ বেশ কয়েকদিন ধরেই প্রচন্ড মাথাঘোরার সমস্যায় পড়েছেন আকমান হোসেন। ব্যাংকের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা তিনি। এত বেশি মাথা ঘোরে যে অফিসেই যেতে পারছেন না। এদিকে অফিসেও তার জন্য আটকে আছে অনেক কাজ। গত বছরও এমনটাই হয়েছিল তার। চিকিৎসকের পরামর্শ মত ভালই ছিলেন তিনি। এ বছর আবার এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ চিত্র হরহামেশাই দেখা যায়। একটু বয়স হলেই মাথাঘোরার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। মাথাঘোরা বা ভারটাইগো হল এমন একটি অবস্থা যেখানে মনে হয় আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই ঘুরছেন বা তার চারপাশ ঘুরছে। মাথা তুলতেই পারেন না অনেকেই। সাথে থাকে বমি বমি ভাব ও বমি। অনেকের ক্ষেত্রে ঘাম দিতে পারে। চোখের নড়াচড়াও বেশ অসংলগ্ন হতে পারে।
কারণ : মাথাঘোরার অনেকগুলো কারণ আছে।
১. বিনাইন প্যারোক্সিসমাল পজিশনাল ভারটাইগো (বিপিপিভি)। এটি খুব মারাত্মক নয়। চিকিৎসায় এটি পুরোপুরি ভাল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ করে মাথা কোন একদিকে ফেরালে বা মাথা শুধু একটি নির্দিষ্ট দিকে ফেরালে মাথা ঘোরা শুরু হয়ে যায়।
২. অন্ত:কর্ণের প্রদাহ : সাধারণত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার অন্ত:কর্ণে সংক্রমণের ফলে মাথাঘোরা দেখা দিতে পারে। এতে হঠাৎ করেই মাথাঘোরা শুরু হয়। এর পাশাপাশি শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে।
৩. মেনিয়ার্স ডিজিজ : এটিও কানের একটি রোগ। তিনটি উপসর্গ থাকে একসাথে। মাথাঘোরা, কানের মধ্যে ভো ভো শব্দ করা ও শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়া। এ রোগে আক্রান্তরা কিছু দিন পুরোপুরি সুস্থ থাকেন।
৪. অ্যাকোয়েস্টিক নিউরোমা : এটি স্নায়ুর টিউমার। এছাড়াও সেরেবেলার রক্তক্ষরণ, মাল্টিপল স্কে¬রোসিস, মাথায় আঘাত, মাইগ্রেনেও হতে পারে মাথাঘোরা।
চিকিৎসকের প্রয়োজন যখন : বেশিরভাগ মাথাঘোরাই মারাত্মক নয়। যদিও মাথাঘোরার কারণে স্বাভাবিক কাজকর্মে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। তারপরও মাথাঘোরা দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ মাথাঘোরার পেছনে কিন্তু মারাত্মক কিছু কারণও আছে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখবেন কি কারণে মাথাঘোরার সমস্যা দেখা দিয়েছে। মাথাঘোরার সাথে তীব্র মাথাব্যথা, একটি জিনিস দুটি দেখা, হাঁটতে সমস্যা হওয়া, কথা জড়ানো বা স্পষ্ট না হওয়া, শারীরিক দূর্বলতা দেখা দিলে দেরি না করে সাথে সাথে হাসপাতালে নিতে হবে।
মাথাঘোরার চিকিৎসা সহজলভ্য। বিনাইন প্যারোক্সিসমাল পজিশনাল ভারটাইগো হলে সাধারনত ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। তবে যদি সমস্যা খুব বেশি হয় তাহলে প্রোমেথাজিন, মেক্লিজিন সেবন করা যেতে পারে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মত। মাথাঘোরা শুরু হলে এসব ওষুথধ সেবন না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই ভাল। কারণ এতে করে চিকিৎসকের পক্ষে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়। ওষুধ সেবন করে চিকিৎসকের কাছে গেলে আসল রোগ নির্ণয় করতে সময় লাগে। বিপিপিভি আক্রান্তদের জন্য কিছু ফিজিওথেরাপি আছে। ভেস্টিবুলার রিহেবিলিটেশন এক্সাসাইজ যা এপলি ম্যানুভার নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে একটি টেবিলে বসানো হয়। মাথা কোন একদিকে কাত করে তাকে টেবিলের প্রান্তে মাথা নিচু করে শোয়ানো হয়। এভাবে মাথাঘোরা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত রাখা হয়। মাথাঘোরা বন্ধ হলে আবার টেবিলে বসানো হয়। এবার মাথা অন্যদিকে কাত করে শুয়ে রাখা হয়। অন্ত:কর্ণের প্রদাহের কারণে মাথাঘোরা হলে এন্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন পড়ে। মেনিয়ার্স ডিজিজ-এ আক্রান্তদের জন্যও চিকিৎসা আছে। তবে তাদের লবণ কম খেতে হবে।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে