অধ্যাপক এম এ ফয়েজ, ডাঃ খালিসা আফরোজঃ আরবী নবম মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা রোজা রাখেন। রোজার সময় সূর্য্যােদয় এর পূর্বে থেকে (সেহরী) সূর্য্যাস্ত পর্যন্ত (ইফতার) সময়ে খাবার, পানিয়, তামাক সেবন থেকে বিরত থাকা হয়। চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল বলে রোজা প্রতি বৎসর ১১ দিন করে আগিয়ে আসে ও ৩৩ বৎসরে ঋতুর একি সময়ে ঘুরে আসে। রোজার সময় মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়- পরিমান, ধরণ উভয়ই।
কি ধরণের খাবার খাবেন?
ইফতার ও সেহরী দুটি প্রধান খাবার স্বাস্থ্য সম্মত ও পুষ্টিকর হওয়া ভাল। বছরের অন্যান্য সময়ের ন্যায় শর্করা, আমিষ, চর্বি জাতীয় মিশ্রিত খাবারের সাথে শাক-সবজি, ফল-মূল, দুধ, খেঁজুর থাকা প্রয়োজন। এসব সমন্বিত খাবারের মাঝে পর্য্যাপ্ত পরিমানে ক্যালরী ছাড়া ও বিভিন্ন মাইক্রো নিউটিয়েন্ট পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক ইত্যাদি থাকে। পর্য্যাপ্ত পরিমান পানি পান করা আবশ্যিক, বিশেষ করে এ বছরের মত গরমের সময়। সরবত, ডাব, জুস, স্যুপ খেতে পারেন যাতে পরিমিত লবণ ও থাকে।
বছরের অন্যান্য সময়ের ন্যায় অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া, তেল মসলা ও চর্বিযুক্ত খাবার যেমন পেয়াঁজু, বেগুনী, বুটভূনা, হালিম, কোলা জাতীয় পানিয় ও রাস্তার পাশে বেশীর ভাগ রেষ্টুরেন্ট গুলোর খাবার স্বাস্থ্য সম্মত নয়।
সারাদিন রোজা রাখার পর এক সাথে অনেক খাবার খাওয়া ঠিক নয়।
রমজানে সুস্থ্য মানুষের কি ধরণের অসুবিধা হতে পারে?
খাবার জনিত কারণে পেটের পীড়া হওয়া ছাড়াও রক্তে গ্লুকোজ কমা, রক্তচাপ কমা, পানি শূন্যতা হয়ে দূর্বলতা, অবসাদ, খিটখিটে মেজাজ, মাথা ব্যথা, মাথা ঘুরানো, মনযোগ কমে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। বিশেষ করে এসব অসুবিধা দিনের শেষের দিকে হয়।
সাধারণ অসুখ থাকলে কি করনীয়?
উচ্চ চাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধের মাত্রা সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ মেপে দেখা প্রয়োজন যাতে কম বা বেশী রক্তচাপ কোনটাই না হয় এবং প্রয়োজনে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ঔষধ সমন্বয় করা যায়।
ডায়াবেটিস এর ঔষধ কমানো বা সমন্বয় করার প্রয়োজন হতে পারে। ইনসুলিন যাঁরা নেন তাঁদের ইনসুলিন দিয়ে ইফতারের মূল খাবার খাওয়া প্রয়োজন। মাঝে মাঝে রক্তের গ্লুকোজ মাপা প্রয়োজন।
রোজা রাখা অবস্থায় ঔষধ নেওয়া যায় কিনা?
অসুস্থ রোগীদের জন্য, গর্ভবতী মহিলা, দুধদানকারী মা, মাসিক স্রাবের সময় রোজার বিষয়ে ধর্মীয় শিথিলতা আছে। সম্ভব হলে রোজার সময় (সেহরী থেকে ইফতার) ঔষধ ব্যবহার না করা উচিত। কিছু ঔষধ আছে যেমন শ্বাস কষ্টের জন্য ইনহেলার, চোখের ঔষধ ব্যবহারে নিষেধ নেই।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে রোজার কারণে শরীরে বিভিন্ন ‘মেটাবলিক’ পরিবর্তন হয় তবে শরীরে খুব বেশী মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয় না। অনেক গুলো ঔষধ যাদের খেতে হয় রোজায় এসব সঠিক ব্যবহারে অসুবিধা হতে পারে। সারাদিনে পানি শূন্যতার কারণে সুস্থ্য ব্যক্তির তেমন কোন দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া হয় না বলে প্রতীয়মান।
অধ্যাপক এম এ ফয়েজ
প্রাক্তন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন
স্যার সলিমুল্লাহ, ঢাকা মেডিকেল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও
প্রাক্তন অধ্যক্ষ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ; ডীন, মেডিসিন অনুষদ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহা-পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ও
ডাঃ খালিশা আফরোজ
ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে