মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:৪৮:২১

যে কারণে এক মাসে দু’পূর্ণিমা!

যে কারণে এক মাসে দু’পূর্ণিমা!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বেশিদিন দূরে নয় খুব শিগগিরই মিলন ঘটবে বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহের।  চলতি মাসের ৩০ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশে এ মিলন ঘটবে বলে জানা গেছে।

ওইদিন মহাকাশে এত কাছাকাছি এ দুই গ্রহ অবস্থান করবে যে দেখে মনে হবে তারা যেন একে অপরকে ছুঁয়ে রয়েছে।  গত বছর শীতকালের পর থেকে বৃহস্পতি-শুক্র প্রতি সপ্তাহে রাতের আকাশে একসঙ্গে দেখা দিচ্ছে।  চলতি মাসের শেষে একই সরলরেখায় এত কাছাকাছি এরা অবস্থান করবে যা কয়েক বছরে মাত্র একবার দেখা যায়।

 এদিকে ২০১৫ সালের ৩০ জুন  ঘটতে চলেছে লিপ সেকেন্ড।  অর্থাৎ ৩০ জুন দিনটির মেয়াদ ১ সেকেন্ড বেশি হবে।  নাসার গদ্দার্দ স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের তরফ থেকে ড্যানিয়েল ম্যাকমিলান জানিয়েছেন, পৃথিবীর ক্রমশ কমতে থাকা দৈনিক অর্থাৎ আহ্নিক গতির সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য এই জুন মাসে অতিরিক্ত ১ সেকেন্ড যোগ করা হবে৷

ফলে আগামী ৩০ জুন রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের পরই পয়লা জুলাইয়ের সূচনা হবে না৷ আরো এক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হবে বিশ্বের সর্বত্রই।

কো-অর্ডিনেটেড ইউনিভার্সাল টাইম বা ইউটিসি এবং অ্যাটমিক টাইম একই রাখতে ইউটিসিতে ১ সেকেন্ড যোগ করা হবে৷ জুন মাসে সাধারণত ৮৬,৪০০ সেকেন্ড থাকে৷ এবার তা হবে তার থেকে ১ সেকেন্ড বেশি।

সাধারণত ঘড়িতে ২৩:৫৯:৫৯–এর পরই 00:00:00 অর্থাৎ পরের দিন হয়। কিন্তু ৩০ জুন ২৩:৫৯:৫৯ –এর পর হবে ২৩:৫৯:৬০।  তার পরে হবে 00:00:00 অর্থাৎ পরের দিন ১ জুলাই।

তবে ব্যাপারটি এই প্রথম ঘটছে না৷ ১৯৭২ সালে প্রথম লিপ সেকেন্ড যোগ করা শুরু হয়৷

মহাকাশে বৃহস্পতি-শুক্র কাছাকাছি অবস্থানের বিষয়ে নাসার বিজ্ঞানী ড. টনি ফিলিপস জানান, আগামী ৩০ জুন সূর্য ডোবার কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহকে খুবই কাছাকাছি অবস্থান করতে দেখা যাবে।  আকাশ পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে আসার আগেই এ বিরল দৃশ্য দেখা যাবে।

চাঁদ, শুক্র, বৃহস্পতি ও রেগুলাস নক্ষত্র একই সরলরেখায় অবস্থান করছে। কিছুদিন পরই চাঁদ দূরে সরে যাবে এবং বৃহস্পতি ও শুক্র খুব কাছাকাছি অবস্থান করবে।  তাদের এ অবস্থান থাকবে ৩০ জুন থেকে ০২ জুলাই পর্যন্ত। জুলাইয়ের ২ তারিখ ও ৩১ জুলাই আকাশে দেখা যাবে পূর্ণিমা।

যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতি বিজ্ঞানী ড. রড্রি ইভানস জানান, যখন এক মাসে দু’বার পূর্ণিমা দেখা যায় তখন তাকে ‘ব্লু মুন’ বলা হয়।  তবে এ ঘটনা প্রতি ১৮ মাস পর পর কিংবা আরো বেশি সময়ের ব্যবধানে ঘটে থাকে।  

বিজ্ঞানের ভাষায়, এক মাসের মধ্যে দু’টি পূর্ণিমা হলে দ্বিতীয়টিকে বলা হয় ‘ব্লু মুন’।  কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন জানিয়েছেন, এর আগে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ‘ব্লু মুনে’র দেখা মিলেছিল।  সেবার দ্বিতীয় পূর্ণিমাটি পড়ে ছিল ৩১ ডিসেম্বর।  

মধ্যরাতে আংশিক চন্দ্রগ্রহণও হয়েছিল।  পরের ‘ব্লু মুনে’র দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো তিন বছর।  ২০১৫-এর জুলাইয়ে।

কেন এক মাসে দুবার পূর্ণিমা?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতি ৩৬৫ দিন বা ১২ মাসে (বিজ্ঞানের ভাষায় একটি সৌর বছর) ১২টি পূর্ণিমা হয়। সাধারণত একটি পূর্ণিমা থেকে অন্য পূর্ণিমার ফারাক হয় গড়ে সাড়ে ২৯ দিন।  এভাবে হিসেব করলে ১২টি পূর্ণিমা হতে সময় লাগে ৩৫৪ দিন (বিজ্ঞানের ভাষায় একটি চান্দ্রবছর)।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এর ফলে সৌর বছর (সাধারণ ক্যালেন্ডারে এটাই অনুসরণ করা হয়) থেকে চান্দ্রবছরের ১১ দিন ফারাক হয়।  সেই হিসাবের ফারাকের ফলেই প্রতি তিন বছর অন্তর এক মাসে দু’টি পূর্ণিমা দেখা যায়।  এভাবে প্রতি ১৯ বছরে গড়ে ৭বার ‘ব্লু মুনের’ দেখা মিলতে পারে।

এক বছরে দু’টি ‘ব্লু মুনের’ নজিরও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি এবং মার্চ মাসে দু’টি করে পূর্ণিমা ছিল।  তবে সেবার ফেব্রুয়ারি মাসে কোনো পূর্ণিমাই ছিল না।  এ ঘটনাও ফের ঘটবে।  ২০১৮ সালে জানুয়ারি এবং মার্চ মাসে।

ইতিহাস বলছে, ‘ব্লু মুনের’ ধারণাটি এসেছে কৃষকদের পঞ্জিকা থেকে।  সে সময় চাষের কাজ হত চান্দ্রমাস অনুযায়ী।  প্রতি ঋতুতে (তিন মাসে) তিনটি পূর্ণিমার নামকরণও করা হত।  যেমন, গ্রীষ্মের প্রথম পূর্ণিমা, দ্বিতীয় পূর্ণিমা ইত্যাদি।

কোনো ঋতুতে চারটি পূর্ণিমা পড়ে গেলে নামকরণের সুবিধার জন্য অতিরিক্ত পূর্ণিমাটিকে ‘ব্লু মুন’ বলা হত। এখন সেটাই সামান্য বদলে গিয়ে, কোনও মাসে দু’টি পূর্ণিমা পড়ে গেলে দ্বিতীয়টিকে ‘ব্লু মুন’ বলা হয়।

‘ব্লু মুন’ মোটেই নীল নয়।  সম্পূর্ণ প্রচলিত শব্দ।  তবে চাঁদের নীলচে হয়ে যাওয়ার কথাও শোনা যায়।  ১৮৮৩ সালে ইন্দোনেশিয়া এবং ১৯৫০-৫১ সালে সুইডেন ও কানাডায় ‘নীল’ চাঁদের দেখা মিলেছিল।

বিজ্ঞানীদের দাবি, সেটাও আসলে বিজ্ঞানের খেলা।  ১৮৮৩ সালে ঘুম ভেঙেছিল ইন্দোনেশিয়ার কারাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির।  অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আশপাশের বিশাল এলাকা ছাই আর ধুলোয় ঢেকে গিয়েছিল।  

চাঁদের আলো সেই ধুলো-ছাইয়ের মধ্যদিয়ে প্রতিসৃত হওয়ার ফলেই নীলচে দেখাত।  দাবানলের ফলে সুইডেন এবং কানাডায় এই একই ঘটনা ঘটেছিল।
সঞ্জীববাবু বলেন, ‘ব্লু মুনের সঙ্গে চাঁদের নীল দেখানোর কোনো সম্পর্ক নেই। কথাটা নেহাতই চলতি হয়ে গেছে’।  সূত্র : ইন্টারনেট
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে