এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ঘরে ইঁদুর ঘুরতে দেখলেই মারার জন্য হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তা নিয়েই দৌড়াদৌড়ি। কত তাড়াতাড়ি সেটাকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা বা খাবারের টোপ দিয়ে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা।
তার কারণ ইঁদুর মানেই আপনার কাছে 'অনিষ্টকর' একটা প্রাণী, ওরা ঘরের সবকিছু কেটেকুটে টুকরো টুকরো করে দেবে। তা যতই গণেশের বাহন হোক, কোনো মার্জনা নেই। কিন্তু জানেন কি, এই ইঁদুরকে ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে কতটা ভালো ওরা স্নিফার হতে পারে?
সেটাই করে দেখিয়েছে আফ্রিকার এনজিও APOPO। এর মধ্যেই একশ'র বেশি ইঁদুরকে তারা স্নিফারের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যাতে সহজেই তারা মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা মাইন উদ্ধার করতে পারে। এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এই সময়।
ল্যান্ডমাইন নিষ্ক্রিয় করতে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী যখন কাঁড়িকাঁড়ি টাকা খরচ করছে, তখন আফ্রিকার এই NGO-এর প্রশিক্ষকরা দেখিয়ে দিয়েছেন, ইঁদুরকে দিয়ে সেই কাজটাই কত সহজে করিয়ে নেয়া যায়।
আফ্রিকার তানজানিয়ায় APOPO-এর রিসার্চ সেন্টারে এখনো পর্যন্ত ১৫০ ইঁদুরের প্রশিক্ষণ হয়েছে। সেসময় ওদের খেতে দেয়া হয় চিনেবাদাম ও কলা। প্রশিক্ষিত এই ইঁদুররা নিষ্ক্রিয় করেছে ১৭,৫০০টি ল্যান্ডমাইন।
জানা গেছে, এক একটা ইঁদুরকে প্রশিক্ষণ দিতে সময় লাগে নয় মাস। ইঁদুরের বয়স যখন ছয় সপ্তাহ, তখনই রিসার্চ সেন্টারে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে প্রথমে ক'টা দিন সময় দেয়া হয়। কারণ ছোট ইঁদুরগুলো মায়ের সঙ্গে ঘুরতেই অভ্যস্ত।
এরপর ধাপে ধাপে চলে স্নিপারের প্রশিক্ষণ। এক একটা ইঁদুরের পেছনে প্রশিক্ষণের জন্য খরচ হয় ৪ হাজার ২০০ পাউন্ড। ভারতীয় অর্থে ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকার মতো।
প্রশিক্ষকরা জানান, গন্ধ চেনার বিশেষ ক্ষমতা আছে ইঁদুরের। তা কাজে লাগিয়েই এদের স্নিফার হিসেবে তৈরি করা হয়। এর জন্যই TNT-এর গন্ধ ধরতে পারে। এই TNT যেকোনও ল্যান্ডমাইনে বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
মাটির নিচে TNTিএর অস্তিত্ব পেলে, তারা তত্ক্ষণাত্ পায়ে করে সেখানে আঁচড়াতে থাকে, কয়েক সেকেন্ড ধরে, এমনভাবেই সংকেত দেয় ইঁদুরকুল।
কেউ কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, কেন ইঁদুর দিয়ে ল্যান্ডমাইন নিষ্ক্রিয়করণের কাজটি করানো হবে? আফ্রিকার ওই ট্রেনিং স্কুলের প্রশিক্ষকরা জানান, ইঁদুরের ওজন খুবই কম হয়। আকারে সবচেয়ে বড় ইঁদুরের ওজনও দেড় কেজির বেশি নয়।
ফলে ইঁদুরের শরীরের চাপে মাইন বিস্ফোরণের সম্ভাবনা নেই। উপরন্তু মাইন চিহ্নিত করা থেকে সেটা নিষ্ক্রিয় করে ফেলা, সবকিছুতেই এরা দক্ষ।
শুধু আফ্রিকাতেই নয় ভবিষ্যতে আমেরিকায় বা ভারতের মাওউপদ্রুত অঞ্চলেও যদি মাইন-বিশেষজ্ঞ ইঁদুর আনা হয়, বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে