এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, চারি দিকে বারুদ, রক্ত, হত্যা। অস্থির এক সময়, আগ্রাসন, জয়-পরাজয়। তারই মধ্যে সবার অলক্ষ্যে ফুটেছিল ছোট্ট একটা প্রেমের গল্প। ঠিক রূপকথার মতো।
ইংল্যান্ডে আলাপ হয়েছিল টগবগে সেনা জওয়ান নরউড থমাস এবং তরুণী জয়েস মরিসের। কিন্তু সেই দামাল সময়ের মাত্র দু’মাস পরেই প্যারাট্রুপার নরউডকে চলে যেতে হয় অন্যত্র। সেই বিচ্ছেদ।
তার পরে পৃথিবীর আর্থসামাজিক ভিত্তিটাই পাল্টে গিয়েছে। অক্ষশক্তি থেকে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন, পুঁজিবাদ থেকে শুরু করে একাধিক মেরুকরণ—সময় এগিয়েছে তরতর করে। কিন্তু সেই বারুদের পোড়া গন্ধে হারিয়ে যাওয়া দুটো মাসকে পুঁজি করে এত দিন অপেক্ষা করেছেন নরউড এবং জয়েস।
জীবনের উপান্তে এসে ফের মিলিত হবেন তারা। এর পিছনে রয়েছে আর একটা রূপকথা।
আমেরিকার ভার্জিনিয়া বিচ-এর বাসিন্দা নরউডের প্রেমের গল্প মাসদুয়েক আগে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে লোকমুখে। বৃদ্ধ, অসুস্থ নরউডকে তার প্রেমিকার সঙ্গে মিলিয়ে দিতে এর পরে তোড়জোড় শুরু করেন এলাকাবাসীই। সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় খোঁজ পাওয়া যায় জয়েসের। স্কাইপি-তে যোগাযোগ করানো হয় দু’জনের।
৭০ বছর পরে... দু’প্রান্তে তখন নস্ট্যালজিয়া আর আবেগের বান ডেকেছে। কথা হল ঘণ্টাদু’য়েক। দু’জনে দু’জনকে কথা দিলেন, ‘‘দেখা হবে।’’
কিন্তু কীভাবে? নরউডের কাছে অত টাকা নেই যে, তিনি অস্ট্রেলিয়া যাবেন। এলাকাবাসী বললেন, ‘‘কোন সমস্যা নেই’’ উঠতে শুরু করল চাঁদা। এখনও পর্যন্ত সাড়ে সাত হাজার ডলারের বেশি জোগাড় হয়ে গিয়েছে। পুরো ঘটনা জানানো হয় এয়ার নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষকে। তারা জানিয়ে দিয়েছেন, যাতায়াতের ভাড়়াটা তাদের তরফে উপহার।
নরউড এখন বুঝি গাইছেন, ‘‘অল মাই ব্যাগস আর প্যাকড, আই অ্যাম রেডি টু গো...’’। তবে এ গান আর বিচ্ছেদের নয়। জেট প্লেন তাকে নিয়ে যাবে সেখানে, যেখান থেকে একদিন এই রকম একটি উড়োজাহাজই উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল অন্যত্র। নরউড নামবেন সেখানে, যেখানে থমকে রয়েছে সময়। থমকে রয়েছে দু’হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রেম...সেই দুটো মাস...আর একটা ভ্যালেন্টাইন্স ডে...
৯৩ বছরের নরউড থমাস চললেন অস্ট্রেলিয়ায়। আসছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে। বিশ্বযুদ্ধের আগুনে যে প্রেম পুড়ে ছারখার হয়েছিল, তা-ই আবার এই বিকেলে ভোরের প্রথম ফুল হয়ে ফুটেছে...
২২ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি