এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আদর করে সবাই ঘরে সাদা বিড়াল, ছাই রঙের বিড়াল বা বাদামী বিড়াল পুষলেও কালো বিড়াল সাধারণত কেউ পোষেন না। কারণ বেশীরভাগ মানুষই কালো বিড়াল কে অশুভ মনে করেন। দুর্ভাগ্যের প্রতীক মনে করেন।
এই কুসংস্কৃতি কেবল আমাদের দেশেই নয় বরং পুরো বিশ্বেই কালো বিড়ালকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক মনে করা হয়। এমন কি অনেক দেশের মানুষ মনে করেন চলতি পথে কালো বিড়াল দেখলে বিপদ সুনিশ্চিত।
কিন্তু, শুধুমাত্র গায়ের রঙের জন্যই কি কালো বিড়ালকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক বলা হয়? নাকি এর আড়ালে রয়েছে কোন দুর্ভাগ্যজনক অতীত?
এর রয়েছে এক অদ্ভূদ ইতিহাস। কয়েক হাজার বছর আগের সময়। তখন মিশর দেশে সব রঙের বিড়ালই সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করত। যেখানে বিড়াল হত্যা করলে মৃত্যু দন্ডাদেশের মত ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতে হত।
কয়েক সহস্রাব্দ পরে, খ্রিস্টানিয় স্থানীয় পৌতলিক রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য উৎখাত করে পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ধারনা করা হয়, প্রত্যেক দেব দেবীর একটি করে পৌতলিক প্রতীক থাকে যার সাথে দেব দেবীরা যোগাযোগ করেন অতি দ্রুত। যেমন, দেবী ডায়নার পৌতলিক প্রতীক ছিলো বিড়াল।
১২৩৩ খ্রিষ্টাব্দে, পোপ গ্রেগরী নবম, একটি কালো বিড়ালে কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন এবং ঘোষণা দেন, শয়তানের একটি অবতার হল এই কালো বিড়াল।
পোপের প্রতি নিষ্ঠা প্রমান করতে উৎসুক খ্রিষ্টানরা সব কালো বিড়ালকে ধরপাকড় শুরু করে দেয় এবং গ্রাম্য অনুষ্ঠানে কালো বিড়াল কে জীবিত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে মারে। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো যে ১৪ শতকের দিকে ইউরোপের বেশ কিছু অংশে কালো বিড়াল বিলুপ্ত প্রায় হয়ে গিয়েছিলো।
পরবর্তী কয়েক শতাব্দীতে এই ধারনা পোষণ করা হয় যে স্বাভাবিকভাবেই কালো বিড়াল সব শয়তানের নেতৃত্ব দেয় এবং ডাইনীরা পৃথিবীতে কালো বিড়ালের ছদ্মবেশ নিয়ে আসে।
অন্যরা আবার বলতে শুরু করে যে একটি কালো বিড়াল সাত বছর ছদ্মবেশ নিয়ে থাকে এবং তারপর ই তার ডাইনী রুপ দেখায়।
এমনকি এই ধারনার কারনে তৎকালীন সময়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার জন্য একটি কালো বিড়ালের পালক হওয়া ই যথেষ্ট ছিলো!
যথেষ্ট হাস্যকর হলেও সত্য যে আজ অবদি এই কালো বিড়ালের কুসংস্কার নিজেদের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই করেনি।
২০১৩ সালে Colonado State University এর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণ বিড়াল চেয়ে, কালো বিড়ালের ৪-৬ দিন বেশি সময় লাগে কোন পালনকারী খুঁজে পেতে। শুনতে খারাপ লাগলেও ৭০ শতাংশ কালো বিড়ালের জন্য কোন আশ্রয়দাতা মিলে না।
এমন কি গবেষকরাও নিশ্চিত বলতে পারবেন না ঠিক কি কারনে, আশ্রয়প্রাপ্ত মালিকদের কাছে কালো বিড়াল কম আকর্ষণীয়।হতে পারে, পুর্ববর্তী সেই কুসংস্কারের দায় আজো তাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
কালো বিড়াল আমাদের দুর্ভাগ্যের প্রতীক নয় বরং তাদের নিজেদের ই দুর্ভাগ্যের প্রতীক।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে