এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বাড়ির উঠোনে শোয়ানো বালিকা বর্মণের মৃতদেহ। মাথার সামনে ক্রমাগত ঘুরে চলছে টেবিল ফ্যান। মৃতদেহকে ঘিরে বসে পাঁচ-ছ’জন ওঝা মন্ত্রোচ্চারণ করেই চলছে। ধোঁয়া,পাখার বাতাস আর মন্ত্রোচ্চারণের ঘটা দেখে ভিড়ে ঠাসা প্রতিবেশীদের চোখ একেবারে কপালে। ঘটনা শোনা গেল এক প্রতিবেশীর কথায়।
তিনি জানালেন, বৃহস্পতিবার ভাটোলের মালিবাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা উপেন্দ্র বর্মণের স্ত্রী বছর পঁয়ত্রিশের বালিকা বর্মণকে একটি বিষাক্ত সাপ কামড়ায়। সাপের বিশ নামানোর জন্য তড়িঘড়ি স্ত্রীকে নিয়ে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে উপস্থিত হন উপেন্দ্র বর্মণ।
কিন্তু ততক্ষণে বিষ অনেকটাই মিশে গেছেবালিকা বর্মণের রক্তে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তাররা বালিকাদেবীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার জেরে গভীরভাবে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তার স্বামী। অকালেই স্ত্রীয়ের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই হঠাৎই স্ত্রীকে বাঁচাতে চেয়ে চরম সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেললেন।
যেমনি ভাবা, তেমনি কাজ। ভোর তিনটা নাগাদ রায়গঞ্জ হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ রিলিজ করে বাড়ি নিয়ে চলে আসেন। এরপর রায়গঞ্জের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় পাঁচ-ছয় নামজাদা ওঝাকে নিজের বাড়িতে এনে হাজির করেন।
বাড়ির উঠোনে স্ত্রীর মৃতদেহ শুইয়ে রেখে ওঝারাও শুরু করে দেয় তাদের কীর্তি দেখাতে। গ্রামবাসীরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় মৃতদেহে পুনঃ-প্রাণ সঞ্চার দেখার জন্য। ওঝারা নিদান দিল, আজ গোটা দিনরাত যদি ঝাড়ফুঁক, তুকতাক চালিয়ে যাওয়া যায় তাহলেই বাঁচিয়ে তোলা যাবে বালিকা বর্মণকে।
ওঝাদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল, দেহে প্রাণ ফেরানো সম্ভব হবেই। ওঝাদের দাবি, এরই মধ্যে বালিকা বর্মণ এক গ্লাস দুধও খেয়ে ফেলেছেন। এ খবর দিয়েছে কলকাতা24।
ওঝাদের এমন সব কাণ্ড দেখে হতবাক স্বয়ং গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান রবিন হেমব্রম। তিনি জানান, এসব কুসংস্কার জেনেও পরিস্থিতির জন্য কিছুই বলা যাচ্ছে না।
শোকার্ত স্বামী উপেন্দ্র বর্মণ জানালেন, ডাক্তারবাবুরা পারবেন না তো কি হয়েছে? এ দুনিয়ায় মরা মানুষের বেঁচে ওঠার মতো ঘটনা তো কতই ঘটে থাকে। শোকার্ত স্বামী উপেন্দ্রর বিশ্বাসের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানবে চিকিৎসাবিজ্ঞান? আজ ম্যাজিক দেখার অপেক্ষায় গ্রামের মানুষ ।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে