এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বিরল এক ঘটনার সাক্ষী কলকাতা। শেক্সপিয়র সরণিতে একটি ফ্ল্যাটে এতদিন ছিল ভৌতিক পরিবেশ। ৬ মাস ধরে মৃত দিদির কঙ্কাল আগলে রেখেছিলেন দাদা। পোষা কুকুরের কঙ্কালও সযত্নে রাখা ছিল। বুধবার রাতে সেখান থেকেই উদ্ধার হয় ওই ব্যক্তির বৃদ্ধ বাবার অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ। গোটা ঘটনায় তাজ্জব পুলিশ ও প্রতিবেশীরা। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম এ খবর ফলাও করে প্রচার করেছে।
বুধবার রাতে শেক্সপিয়র সরণির ওই ফ্ল্যাট থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হয় বাড়ির গৃহকর্তা অরবিন্দ দের মৃতদেহ। পুলিশ ও দমকলের কর্মীরা ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ঢুকতেই তাদের নাকে আসে একটা বিকট দুর্গন্ধ। শৌচাগারের বাথটাবে পাওয়া যায় এই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ৭৭ বছর বয়সী অরবিন্দ দে'র অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ।
বেডরুমে তখন বসেছিলেন অরবিন্দ বাবুর ছেলে ৩২ বছর বয়সী পার্থ দে। তার পাশেই বিছানায় শায়িত অবস্থায় রাখা একটি মানুষের কঙ্কাল। পাশেই একটি কুকুরেরও কঙ্কাল রাখা ছিল। কঙ্কালগুলোর পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল কিছু শুকনো খাবার।
ঘরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানোর সময় থমকে যান পুলিশ কর্মীরা। চারপাশে অন্য কোনো মানুষ না থাকলেও যেই ঘরেই তারা যাচ্ছেন, কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে ফিসফিস করে কথা
বলার শব্দ। পরে দেখা যায় ওই ফ্ল্যাটের প্রতিটি ঘরে, এমনকী শৌচাগার ও রান্নাঘরেও রয়েছে লুকানো সাউন্ড সিস্টেম। সেখান পেন ড্রাইভের মাধ্যমে এক মহিলার কিছু মন্ত্রোচ্চারণ ও গান বাজানোর ব্যবস্থা করা আছে।
রীতিমতো ভৌতিক এ ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে যায় গোটা এলাকায়। ওই ফ্ল্যাটের একমাত্র জীবিত সদস্য পার্থ দে-কে জেরা করে উঠে এসেছে আরো মারাত্মক তথ্য। পার্থবাবু জানিয়েছেন, গত বছর অাগস্ট মাসে মৃত্যু হয় তাদের পোষা কুকুরটির।
কিন্তু আদরের পোষ্যটির সত্কার না করে সযত্নে রেখে দেয়া হয় ফ্ল্যাটের বেডরুমে। পোষ্যের শোকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে, চরম হতাশায় ভুগতে শুরু করেন তার দিদি দেবযানী দে। তিনমাস অনশন করায়, গত বছরই ডিসেম্বর মাসে মৃত্যু হয় নামি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের গানের শিক্ষিকা দেবযানীর।
কিন্তু দেবযানীকেও কাছ-ছাড়া হতে দেননি ভাই পার্থ। বেডরুমেই বিছানায় শুইয়ে রাখা হয় দেবযানির মৃতদেহ। পার্থর দাবি, তিনি গত ছয় মাস ধরে দিদিকে খাইয়েছেন, আগলে রেখেছেন। তার বিশ্বাস, ওই ঘরেই রয়েছে দিদির আত্মা।
জানা গেছে, স্ত্রীর মৃত্যুর পর বছর খানেক আগে তথ্য ও প্রযুক্তি সংস্থার চাকরি ছেড়ে দেন পার্থ দে। পুলিশের অনুমান, অরবিন্দ বাবু গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। তার মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও দমকলে খবর দেয়া না হলে, অরবিন্দ বাবুর দেহও হয়তো ওই ফ্ল্যাটে রেখে দেয়া হত বলে ধারণা পুলিশের। দেবযানী দে'র কঙ্কালটি কিছু কাপড়-চোপড়ে জড়িয়ে রাখা ছিল। তাতে কোনো ওষুধ দিয়ে 'মমি'-র মতো কোনো ব্যবস্থা করা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এতদিন পাড়া প্রতিবেশীরা কেন কোনও দুর্গন্ধ পাননি, তা নিয়ে ধন্ধে পুলিশ। ওই পরিবারের প্রতিটি মানুষেরই মানসিক সমস্যা ছিল, না কি শুধু পার্থবাবুই মানসিক ভারসাম্যহীন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মনোবিদরা। বেনজির এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মানুষ।
তারা জানিয়েছেন, গত মাসেই পার্থবাবুর জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে তাদের বাড়িতে কিছু আত্মীয়-স্বজনও এসেছিলেন। তারাও কীভাবে কঙ্কালের উপস্থিতি টের পাননি তাও একটা বড় প্রশ্ন পুলিশের কাছে। গোটা ঘটনায় রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। সূত্র : এই সময়