এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : এপ্রিলে একটু ঘুরে এলাম দিল্লীতে। ঢাকা থেকে কলকাতা ৩৮০ কি.মি হবে। সময় লাগলো ১৮ ঘন্টা। প্রথমে ঢাকা থেকে বাসে বেনাপোল ও এরপর বর্ডার পার হয়ে বনগাঁও থেকে শিয়ালদাহ ট্রেনে। ঢাকা থেকে কলকাতা শিয়ালদাহ পর্যন্ত যেতে খবর হয়ে গেছে গরমে। এরপর শিয়ালদাহ থেকে ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’ করে নিউ দিল্লী। দুরত্ব ১৪০০ কি.মি, সময় লাগলো ১৬ ঘন্টা। কোন কষ্ট অনুভূতি হলো না, খুবই আরামদায়ক। এমনি ভারতে এমন কয়েকটি রেললাইন রয়েছে, যার উপর দিয়ে গেলে সময় কোথা দিয়ে কেটে যায় তা বোঝাই যায় না। কলকাতা ২৪/৭ সংবাদ মাধ্যমের সহযোগিতায় এমটিনিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি তেমন কিছু মনোমুগ্ধকর যাত্রা।
১. জম্মু-উধমপুর রেলপথ: কাশ্মীর রেলওয়ে ভারতের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেল প্রজেক্ট। একদিকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, অন্যদিকে বরফে মোড়া পাহাড়। তাছাড়া এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি রেলযাত্রীদের রোমাঞ্চ জাগায়। এই রুটে রয়েছে ২০ টি টানেল ও ১৫৮ টি ব্রিজ। ব্রিজের উপর থেকে দেখা যায় অসাধারণ সুন্দর নদী আর উপত্যকার ছবি।
২. কাংড়া উপত্যকা রেলপথ: কাংড়া উপত্যকা রেলওয়েটি উপ হিমালয় এলাকা দিয়ে গিয়েছে। পাঞ্জাবের পাঠানকোট থেকে শুরু হয়ে হিমাচল প্রদেশ অবধি গিয়েছে রেললাইনটি। ১৬৪ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে এটি। একাধিক উপত্যকা, নদীর উপর দিয়ে পথ। ১০ ঘণ্টা কোথা দিয়ে চলে যাবে বোঝাই যাবে না। আশপাশের সৌন্দার্য দেখতে দেখতে সময় যে কখন পার হয়ে যায় সত্যিই ভাবা যায় না।
৩. গোয়া রেলপথ (ভাস্কো-ডা-গামা থেকে লোন্দা জংশন) : শাহরুখ-দীপিকার ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ সিনেমায় দেখেছেন জায়গাটি। গোয়া বলতেই আমরা বুঝি শুধু সুন্দর সব সমুদ্র সৈকত। কিন্তু, আরও একটা দিক রয়েছে যেটা কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যায় না। এই রেলপথে দেখা যায় ঘন জঙ্গল, সবুজে ঘেরা গ্রাম আর ঝর্ণা। পশ্চিমঘাট পর্বতের বাঁক দিয়ে গিয়েছে এই রেলপথ। এই পথেই পড়ে দুধসাগর ওয়াটারফলস, এটি ভারতের অন্যতম উঁচু ঝর্ণা।
৪. হিমালয়ান কুইন (কালকা-সিমলা): একমাত্র রেলপথ যেটা গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছে। ক্রমশ উঁচুর দিকে উঠে গিয়েছে এই রেলপথ। ১৯০৩ সালে তৈরি হওয়া এই রেললাইন একি হেরিটেজ। এই লাইনে রয়েছে ১০২ টি টানেল, ৮৬৪ টি ব্রিজ। প্রথম প্রথম একটু ভয় লাগতে পারে কিন্তু মনকে শক্ত রাখবেন। এখনো পর্যন্ত বড় কোন দূর্ঘটনার কথা জানা যায়নি এই পথে। মানে নো টেনশন, ডু ফুর্তি।
৫. জয়পুর-জয়সলমীর: রাজস্থানের এই রেলপথে যাওয়ার সময় পাওয়া যাবে মরুভূমির এসেন্স। রাজস্থানের রাজধানী শহর জয়পুর থেকে ট্রেন ছুটে যায় মরু শহরের দিকে। পরপর থর মরুভূমির বালিয়াড়ি চোখে পড়বে। মাঝে থাকবে রঙিন সব ঘর। উটের চলাচল, সব মিলিয়ে ছবির মত দৃশ্য। আর যদি সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত ভাগ্যে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই।
৬. মন্ডপম-রামেশ্বরম : দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের শেষ প্রান্তভূমি পক প্রণালীতে একটি দ্বীপের আকারে গড়ে উঠেছে রামেশ্বরম। নীল সমুদ্রের উপর দিয়ে সেতু। আর সেই সেতুই রেলপথ। তামিলনাড়ুর মন্ডপম থেকে পামবন দ্বীপ পর্যন্ত যে সেতুটি তৈরি হয়েছে সেটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। আপনি যদি রামেশ্বরমের তীর্থযাত্রী নাও হন, তাহলেও আপনি এই রেলপথের প্রেমে পড়তে বাধ্য।
৭. এনারকুলাম-ত্রিবান্দম : কেরলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর থেকে ভালো রেলপথ আর হতে পারে না। ট্রেনের টিকিট কাটুন আর একযাত্রায় দেখে নিন কেরলের পুরো প্যাকেজ। ব্যাকওয়াটার, প্রিস্টিন লেক, নারকেল গাছের সারি, সবুজে ঘেরা গ্রাম সবই দেখতে পাবেন আপনি। কেরলের ব্যাকওয়াটারে যেভাবে ছোট ছোট দ্বীপ বানিয়ে মানুষজন বসবাস করছেন, সেই দৃশ্য সত্যিই উপভোগ।
৮. নীলগিরি রেলওয়ে : দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে নীল পাহাড়ের ভিতর দিয়ে যখন ট্রেন নিয়ে যাবে আপনাকে, তখন একটু হলেও বুক কেঁপে উঠবে আপনার। ১১০ বছর ধরে ট্রেন চলছে এই পথে। স্টিম ইঞ্জিন আপনাকে ৪৬ কিলোমিটার নিয়ে যাবে সাড়ে চার ঘণ্টায়। উটির পাহাড়ের বাঁক দিয়ে ট্রেন যখন ঘুরবে, তা আলাদা অ্যাডভেঞ্চারের অনুভূতি দেবে। চোখে পড়বে চা বাগানের গালিচাও।