মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৫১:১২

বরের পা ধুয়ে দেয়া বিয়ে!

বরের পা ধুয়ে দেয়া বিয়ে!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বিয়ের ধুমধাম সর্বজনবিদিত।  আধুনিক ব্যস্ততার যুগেও রীতি মেনে বিয়ে করার প্রতিই ঝোঁক রয়েছে ছেলেমেয়েদের।  কারণটা হয়তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আনন্দে গা ভাসানো।  জোয়ারের প্রতিকূলে না হেঁটে স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়া।  কিন্তু বিয়ের বেশকিছু রীতি রয়েছে যা সত্যিই  হাস্যকর।

১. কন্যাদান হিন্দুমতে বিয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী আচার ‘কন্যাদান’। নিজের কন্যা, জামাইকে দান করেন মেয়ের বাবা।  কোথা থেকে এল এই কন্যাদানের রীতি? কারণ হিসেবে কথিত রয়েছে অনেক গল্প।  বলা হয়, কন্যাদানের অর্থ ‘কুমারী দান’।  নিজেদের যাবতীয় পাপস্খলনের জন্য বাবা-মা কুমারী দান করেন।  

আসলে মেয়ের যাবতীয় দায়ভার ঘাড় তেকে ঝেড়ে ফেলতেই আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কন্যাদানের রীতির প্রচলন করেছে বলে অনেকের ধারণা। আধুনিক যুগে অবিলম্বে এই প্রাচীন রীতি বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন যুক্তিবাদীরা।  তাদের মতে, মাতৃগর্ভে নয় মাস থাকার পর সেই বন্ধন কোনো রীতি দিয়েই ছিন্ন করা যায় না।  কন্যাদানে আপত্তি রয়েছে আরো একটি কারণে।  নারীবাদীরা প্রশ্ন তোলেন, বাবার অবর্তমানে কেন অন্য কোনো পুরুষ আত্মীয় কন্যাদান করবেন, অথচ মা করতে পারবেন না?

২. কাশীযাত্রা হিন্দু বিবাহের আরো একটি আচার নিয়ে প্রশ্ন তোলে আধুনিক সমাজ।  বিশেষত তামিলদের ক্ষেত্রে দেখা যায় এই রীতির ব্যবহার।  বরের কাশীযাত্রা।  নিয়ম রয়েছে, রীতি মেনে বিয়ের পর বর তার স্ত্রীকে ও সংসার জীবনকে অগ্রাহ্য করে, ছাতা মাথায়, হাতে লাঠি নিয়ে ধর্মের পাঠ নিতে তীর্থযাত্রায় যাওয়ার কথা বলবেন।  

তখন মেয়ের বাবা জামাইয়ের 'হাতে-পায়ে' ধরে তাকে আটকাবেন।  বর যাতে তার মেয়েকে ছেড়ে চলে না যান, সেজন্য তাকে অনুরোধ করবেন।  মেয়ে সুখ-দুঃখে তার বরের সঙ্গে থাকবে বলে অঙ্গীকার করবেন।  এতকিছুর পর মত বদলাবেন বর।  এই নাটুকে রীতির বিরোধিতা করে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বরই পড়াশোনা করতে যাওয়ার কথা বলবে, স্ত্রীকে ত্যাগ করে বিয়ে ভেঙে দেয়ার কথা বলবে? এই অধিকার কি মেয়েদের নেই।  তাহলে কেন এ নিয়ম মেয়েদের জন্য নয়?

৩. বরের পা ধুয়ে দেয়া হিন্দু মতে বিয়ের সময় বরের পা ধুয়ে দেয়ার রীতি রয়েছে।  কখনো স্বয়ং পাত্রী, কখনো তার বাবা-মা, আবার কখনো তার বোনকে বরের পা ধুয়ে দিতে হয়।  আগেকার দিনে খালি পায়ে অনেক পথ হেঁটে বিয়ে করতে আসতেন বর।  তাই হয়তো এই রীতির প্রচলন হয়েছিল। কিন্তু আজকের দিনে যেখানে গাড়িতে বা ঘোড়ায় চেপে বর আসেন, সেখানে এই রীতি একেবারেই ব্যাকডেটেড।

৪. গায়ে হলুদ হিন্দু বিবাহের একটা অত্যন্ত পরিচিত আচার গায়ে হলুদ।  বর কনের গায়ে হলুদ লাগানো নিয়ে যে আনন্দের পরিবেশ তৈরি হয় তা যথেষ্ট উপভোগ্য হলেও সমস্যাটা অন্য জায়গায়।  নিয়ম অনুয়ায়ী, বরের গায়ে ছোঁয়ানো হলুদই লাগাতে হবে কনের গায়ে।  এটা কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি, এই রীতির পেছনে উৎফুল্লতাও খুঁজে পেয়েছেন আধুনিক সমাজের যুক্তিবাদীরা।

৫. নাম পরিবর্তন ভারতবর্ষে বিয়ের পর মেয়েদের নাম পরিবর্তনের রীতির কথা কারো অজানা নয়।  স্বামীর পদবী গ্রহণই শুধু নয়, অনেক ক্ষেত্রে মেয়েটির নামও বদলে দিতে হয়।  স্বামীর নামের সঙ্গে জ্যোতিষের অঙ্ক মিলিয়ে রাখা হয় স্ত্রীর নতুন নাম।  নাম হলো একজনের অস্তিত্বের পরিচয়।
কাজেই নাম বদলের রীতিকে মেনে নিতে পারেন না অনেক মহিলাই।  আধুনিক যুগে অনেক মহিলাই বিয়ের পরও নিজের নাম অপরিবর্তিত রাখছেন। যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বদলানো উচিত এই নাম পরিবর্তনের রীতি।

৬. ব্যালেন্স করা বিহারে বিয়ের এক বিচিত্র রীতি মাথায় পাত্র রেখে ব্যালেন্স করা।  বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে পা রাখার সময় শ্বাশুড়ি বউয়ের মাথায় একটি পাত্র বসিয়ে দেন।  এরপর একটির ওপর আরেকটি পট বসতে থাকে। ওই অবস্থায় ব্যালেন্স করে বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে হয় বউকে। মাথা থেকে পাত্র পড়ে গেলেই তাকে অশুভ হিসেবে ধরা হয়।  আর পাত্র না পড়ার অর্থ সেই বউ ব্যালেন্স করে দায়িত্ব নিয়ে সংসার করতে পারবে।  অদ্ভূত!


৭. বিয়েতে ব্রাত্য মায়েরা বাঙালিদের মধ্যে ছেলে বা মেয়ের বিয়ে দেখার অধিকার নেই মায়েদের।  কথিত আছে, মায়ের দৃষ্টিতে ছেলে বা মেয়ের জীবনে শয়তানের ছায়া ঘনাতে পারে।  তাজ্জব, সন্তানের ক্ষতি করবে কিনা মায়ের দৃষ্টি?


৮. রেঁধে খাওয়াবে বউ বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে প্রথম দিন স্বামী ও অন্যান্য সবাইকে রান্না করে খাওয়াবে বউ।  এটাই প্রচলিত রীতি। অর্থাত্‍‌ সংসারে কার কোনটা কাজ সেটা প্রথম দিন থেকেই নির্দিষ্ট করে দেয়ার চেষ্টা।  রান্না করা মানেই তা মেয়েদের কাজ। কিন্তু সেই খাবার খাওয়ার অধিকার ছেলেদের।

৯. শাঁখা-পলা, মঙ্গলসূত্র বিয়ের প্রতীক শাঁখা-পলা, মঙ্গলসূত্র বা পায়ের আংটি।  আমাদের দেশের একেক প্রান্তে একেক নিয়ম।  বিয়ের পর বিয়ের প্রতীক হিসেবে মেয়েদের পড়তে হয় এসব, যা দেখে বোঝা যায়, মেয়েটি বিবাহিত।  কিন্তু অদ্ভূত ব্যাপার বিয়ের কোনও প্রতীক বহনের কোনো দায় নেই ছেলেদের। অথচ বিদেশে অনেক জায়গায় ছেলে-মেয়ে সবাইকেই বিয়ের পর পড়তে হয় ওয়েডিং ব্যান্ড।  সূত্র : এই সময়

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে