এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ভাবা যায়, একটা বয়সের পর চোখের সামনে নেমে আসতে থাকবে অন্ধকার। ক্রমশ চলে যেতে থাকবে দৃষ্টি। শেষ পর্যন্ত অন্ধত্ব। তখন একমাত্র লাঠিই ভরসা। আর যাদের দৃষ্টি তখনও চলে যায়নি তাদের কাঁধই ভরসা সেই সব মানুষদের। অলৌকিক হলেও এটাই সত্য।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর গ্রাম প্যারানের মানুষ ৫০ বছর পার হতেই ক্রমশ অন্ধ হয়ে যায়। এমনই ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষ করে এই গ্রামের পুরুষরা বেশি অন্ধত্বের শিকার হন। এই রোগ জন্মগত। কিন্তু কেউ জানে না কেন এমন হয়। চিকিৎসা পৌঁছায় না এই গ্রামে। সব রকম যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপের মতো পেরুর এই পাহাড়ি গ্রামের যন্ত্রণার জীবন যাত্রা ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে।
১. সব জায়গা থেকে বিচ্ছিন্ন পেরুর এই পাহাড়ি গ্রামে বাস করে ৩৬০ জন মানুষ। যাদের মধ্যে ৬০ জনের বেশি পুরুষ অন্ধত্বের শিকার। মহিলারাও রয়েছেন সেই তালিকায়। অন্ধদের গ্রাম নামেই এখন পরিচিত প্যারান।
২. জন্মগত এই রোগের নাম রেটিনাইটিস পিগমেনটোসা। যেখানে চোখের ‘টানেল ভিশন’ নষ্ট হয়ে যায়।
যার শিকার এই গ্রামের মানুষ। ক্রমশ অন্ধত্বের সংখ্যা বাড়ছে এই গ্রামে।
৩. ৩ হাজার ফিট উচ্চতায় অবস্থিত এই গ্রামের ৭৫ শতাংশ মানুষ অন্ধত্বের শিকার। সাতটি পরিবার মিলে এই গ্রাম তৈরি করেছিল। যাঁরা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল এই রোগ।
৪. এই গ্রাম কখনও ডাক্তারকে চোখে দেখেনি। কয়েক বছর আগে হঠাৎই নতুন রাস্তা তৈরি হয় সেখানে। একটি মাইন সংস্থা সোনা-রুপোর খোঁজে হাজির হয় সেখানে। তখন সেই সংস্থার কর্মীদের জন্য ডাক্তার আসা শুরু হয় ওই গ্রামে।
৫. সেই সময় ডাক্তার জানিয়েছিলেন, এই রোগ জন্মগত। এক্স ক্রোমোজোমের সমস্যা থেকেই এই অন্ধত্ব তৈরি হয়। যেসব ‘মা’এর এই সমস্যা রয়েছে তাদের পুত্র সন্তান জন্ম নিচ্ছে অন্ধত্ব নিয়ে। এই রোগের কোনও চিকিৎসা নেই বলেও জানিয়েছেন ডাক্তার।
৬. এই গ্রামের এক মেয়ের অন্য গ্রামে বিয়ে হয়েছিল। হঠাৎ চোখের দৃষ্টি চলে যেতে থাকে তার। অন্ধ স্ত্রীর সন্তান চাননি তার পরিবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কন্যা সন্তান হয়। এই রোগে আক্রান্ত মহিলাদের ছেলে সন্তান হলে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি। কন্যা সন্তান হওয়া সে সমস্যা হয়নি।
৭. পুরো গ্রামের সবাই একই রোগে আক্রান্ত। তার ফলে এই গ্রামের মানুষদের সঙ্গে অন্য কোনও জায়গার মানুষের সম্পর্ক তৈরি হয় না। পেরুতে এই গ্রাম পরিচিত অন্ধত্বের জন্যই। তাই বিয়েও হয় নিজেদের গ্রামের মধ্যেই।
২৮ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি