রাসেল পারভেজ : নানা ভবিষ্যদ্বাণী করে বিশ্ববাসীকে নাড়িয়ে দেয়া এক রহস্যময়ী নারীর নাম বাবা ভাঙ্গা। একাধিকার পৃথিবী ধ্বংসের তারিখ ঘোষণা করে আলোচনায় আসা এই নারীকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই।
বাবা ভাঙ্গা। নামটি নিয়ে অনেকের সংশয় আছে। বাবা ও ভাঙ্গা শব্দ দুটির প্রয়োগ আছে দক্ষিণ এশিয়ায়। কিন্তু এমন শব্দ দিয়ে তার নাম হলো কীভাবে তা নিয়েও রহস্য থেকে গেছে। অবশ্য জানা গেছে, শৈশবে তার নামের প্রথম অংশ ভ্যানগেলিয়া থেকে পরে ভাঙ্গা হয়েছে। কিন্তু নামের প্রথম অংশ বাবা এলো কোথা থেকে তা জানা যায়নি। তারপরও বাবা ভাঙ্গা নামেই বিশ্বজুড়ে পরিচিত এই অধ্যাত্মিক নারী।
১০৫ বছর আগে ১৯১১ সালের ৩১ জানুয়ারি ওসমানীয় সাম্রাজ্যের (বর্তমান মেসিডোনিয়া) স্ট্রুমিকা শহরের অদূরে এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাবা ভাঙ্গা। তবে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন বুলগেরিয়ার ব্লাগোয়েভগ্রাদ প্রদেশের রুপাইটি গ্রামে। ১৯৯৬ সালে ৮৫ বছর বয়সে এই গ্রামেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিশ্বের বহুল আলোচিত এই নারী।
বাবা ভাঙ্গা পরলোকে পাড়ি দিলেও তার ভবিদ্বাণী থেকে গেছে, যা নিয়ে থেকে থেকে উদ্বেগের ঝড় ওঠে মানুষের মনে। তিনি ৩০৩৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেছেন। যে কারণে আগামী ১ হাজার বছর তিনি হয়তো মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
এই অন্ধ নারী ভবিষ্যতের পূর্বাভাসে ইউরোপ ধ্বংস হওয়ার কথা বলেছেন। অবশ্য ইউরোপ ধ্বংস বলতে এই মহাদেশে ২০১৬ সালেই মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।
বাবা ভাঙ্গা তার ভবিদ্বাণীতে বলেছিলেন, ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের উপকূলে বিরাট বিপর্যয় হবে। সে বছর সুনামি হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে স্টিলের পাখি (উড়োজাহাজ) হামলা করবে। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এই দুই ক্ষেত্রে বাবা ভাঙ্গার কথা প্রমাণিত হলেও পৃথিবী ধ্বংসের বিষয়ে তার পূর্বানুমান কাজে আসেনি।
শৈশব থেকে আমৃত্যু রহস্য
পৃথিবীর গতিপ্রকৃতি ও মনুষ্য চরিত্রের ওপর যার এতটা দখল, তাকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকবে এটিই স্বাভাবিক। আধ্যাত্মিক ক্ষমতার এই নারী এখন এতটা আলোচনায় এসেছেন ঠিকই কিন্তু তার শৈশব ছিল ঝঞ্জাময়। এক দুর্ঘটনায় ছোটবেলায় চোখের জ্যোতি হারান তিনি।
বাবা ভাঙ্গা শারীরিক সমস্যা নিয়ে ভূমিষ্ঠ হন। তার বাঁচা না-বাঁচা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন তার বাবা-মা ও পরিজন। জন্মের পর বাবা ভাঙ্গা অনেক সময় ধরে কাঁদেননি। যে কারণে ধরে নেওয়া হচ্ছিল তিনি হয়তো বাঁচবেন না অথবা বোবা হবেন। কিন্তু সব সংশয় কেটে গেল যখন তিনি কেঁদে উঠলেন।
অর্থাৎ জন্ম থেকেই রহস্য নিয়ে এসেছেন বাবা ভাঙ্গা। তিনি কেঁদে উঠার পর এক দাইমা পথে দৌড়ে যান এবং অপরিচিত লোকদের নাম দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন রেওয়াজ ছিল হয়তো এমন। নবজাতকের নাম দিত কোনো আগুন্তুক পথচারী।
শেষ পর্যন্ত বাবা ভাঙ্গার নাম রাখা হয় ভ্যানগেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা। বিয়ের পর নতুন নামে পরিচিত হন। নতুন নাম হয় ভ্যানগেলিয়া গুস্টেরোভা। শিশু অবস্থা থেকেই তিনি রোগা ছিলেন। সেই সঙ্গে ছিলেন পারিবারিক ভাঙনের শিকার। অল্প বয়সে তার মা মারা যান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পক্ষে যুদ্ধ করায় তার বাবা গ্রেফতার হন। পরে ছাড়া পান এবং দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
কষ্টের দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়েছে বাবা ভাঙ্গাকে। ছোটবেলায় ঘটে যায় তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক ও বিস্ময়কর ঘটনা। হঠাৎ উদ্দাম এক ঝড় এসে তাকে উড়িয়ে নিয়ে ফেলে দেয় কোনো এক মাঠে। বেশকিছু দিন তার খোঁজ ছিল না। অবশেষে তার সন্ধান মেলে। অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাকে। চোখ-মুখ বালি দিয়ে ঢাকা ছিল। কিছুটা চিকিৎসা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তার চোখ নষ্ট হয়ে যায়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মেনে নিয়ে নতুন করে পথচলা শুরু করেন বাবা ভাঙ্গা।
সংসারে অভাব-অনটনের কারণে দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৯২৫ সালে জেমুন শহরে একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন বাবা ভাঙ্গা। সেখানে তিনি ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেন। পিয়ানো বাজানো, বুনন, রান্না-বান্না ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর শিক্ষাগ্রহণ করেন তিনি। এ সময় আবার তার পরিবারে বিপদ নেমে আসে। তার সৎমা মারা যান। তখন ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনার জন্য বাড়ি ফিরে যান তিনি। সবার খেয়াল রাখার জন্য তাকে পরে অনেক পরিশ্রম করতে হয়।
ছোট ভাইবোনদের নিয়ে হাড় ভাঙা পরিশ্রমের কারণে টিকে ছিলেন বাবা ভাঙ্গা। কিন্তু ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময়ে বুকের রোগে আক্রান্ত হন তিনি। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, তিনি হয়তো অল্প সময়ের মধ্যেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবেন। কিন্তু সেবারও তিনি প্রাণে বেঁচে যান এবং দ্রুত সেরে ওঠেন, যা চিকিৎসকের ভাষায় ছিল ‘অত্যাশ্চর্য’।
এরপর শুরু হয় তার দৈবাৎ বাণী দেওয়া। সোভিয়েত ইউনিয়নের নামিদামি যোদ্ধা এমন কি বুলগেরিয়ার জাররাও তার কাছে ভবিষ্যদ্বাণী শুনতে আসতেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার বাণী কাজে লেগে যায় এবং সোভিয়েত মুল্লুকে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৪২ সালে দিমিতার গুস্তেরোভ নামে এক বুলগেরীয় সৈন্যের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৬২ সালে তার স্বামী মারা যায়। এরপর একাকী সময় কাটিয়েছেন তিনি। যদিও ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তার কাছে বহু লোক আসত, তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে।
মানুষের ভাগ্য গণনা থেকে এক সময় তিনি বিশ্বের নানা ইস্যু নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে থাকেন। এ সম্পর্কে অন্য এক লেখায় জানাব, আশা রাখছি। -রাইজিং বিডি
২৮ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম