মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:১৯:৩৭

দশজন পুরুষ, একজন জয়া!

দশজন পুরুষ, একজন জয়া!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : একজন জয়াদেবী, যিনি বিহারের আর পাঁচজন সাধারণ মেয়ের চেয়ে একেবারেই আলাদা।  জীবনটা যেভাবে শুরু হয়, শুরুটা সেভাবেই হয়েছিল জয়াদেবীর।  দশজন পুরুষ যা পারেনি তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন জয়া।

মাত্র বারো বয়সে বিয়ে।  ষোড়শী হতে না হতেই এক কন্যা-সন্তানের জন্ম। কিন্তু জীবনটাকে গতানুগতিকতায় বইতে দেননি এই অদম্য নারী।  বরাবরই চেয়েছেন কিছু না কিছু করতে, যা তাকে আর পাঁচজনের থেকে আলাদা করে চেনাবে।  জয়াদেবীর সেই সদিচ্ছাই তাকে দিয়েছে আলাদা স্বীকৃতি, তিনি আজ ‌‘সবুজ সাথী’।

জল ধরো জল ভরো, সে তো সে-ই কবেই শুরু করেছিলেন এই সবুজ সাথী। তার দেখাদেখি, তার থেকে দেখে-শুনে একে একে অনেকে।  সেই ধরে রাখা বৃষ্টির জলেই সারাবছর সুজলা সুফলা বিহারের সেই গ্রাম, যেখানে নিবাস জয়ার।

নিজের সঙ্গেই বিহারের একটা গ্রামে যে তিনি সবুজ বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন, তা মোটেও সহজ ছিল না।  মাওবাদীদের নিধেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সারি সারি গাছ বসিয়েছেন।  সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে এক লাখ ছাড়িয়েছে গাছগাছালি।

তৈরি হয়েছে বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য জলাধার।  মাওবাদীদের হুমকি তার কাছে নতুন ছিল না।  একসময় এই মাওবাদীদের হুমকির মুখেই তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।  বাধাবিপত্তি আরো ছিল।  কিন্তু কোনো বাধাকেই ভ্রুক্ষেপ করেননি কখনো।

জয়াদেবীর এই ‘সবুজ সাথী’ হয়ে ওঠার পথে বড় ভূমিকা রয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক নার্সের।  স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে গিয়ে সেই নার্সের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তার।  তিনিই জয়াদেবীকে বুঝিয়েছিলেন একা লড়াই করে বেশিদূর এগোনো সম্ভব নয়।  

তার পরামর্শেই বিহারের সারাধি গ্রামে জয়া গড়ে তোলেন সেল্ফ হেল্প গ্রুপ। সালটা ১৯৯৭।  মূল উদ্দেশ্যই ছিল মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলা।  যেই কথা সেই কাজ।

জয়াদেবীর কথায়, মাওবাদীদের দয়াদাক্ষিণ্যেই আমাদের এই আদিবাসীদের বেঁচে থাকতে হত।  এদিক ওদিক হলেই অত্যাচার করতো।  আমি এই অবস্থাটার আমূল পরিবর্তন চেয়েছিলাম।  চেয়েছিলাম, আর্থিকভাবে গ্রামের সব মানুষকে সাবলম্বী করে তুলতে, যাতে মাওবাদীরা মাথার ওপর ছড়ি ঘোরাতে না পারে।

এই জয়াদেবীই গ্রামের আর পাঁচজন মহিলার সঙ্গে কথা বলে তাদের শিখিয়েছেন কীভাবে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে হয়।  শিক্ষার পাঠ দিয়েছেন তাদের।  স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের।  ব্যবস্থা করে দিয়েছেন রেশনকার্ডের।  তাদের নিয়ে লড়াই করেছেন আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায়।  আবার সোচ্চার হয়েছেন কখনো নারী নিগ্রহের ঘটনায়

তার এই কাজের সূত্রেই প্রতিবেশী এক গ্রামের সামজসেবী কিশোর জয়সওয়ালের সঙ্গে পরিচয় হয়।  তার থেকেই জানতে পারেন বৃষ্টির জল ধরে রাখার কৌশল।  নিজের গ্রামে ফিরে দেরি করেননি।  অন্যদেরও শেখান সেই কৌশল।  জয়ার আগ্রহে গ্রামের সবার স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি হয় প্রথম জলাধার। গ্রামে এমন কাজ দেখে অভিভূত নাবার্ড।  এ সংস্থার সহযোগিতাতেই পরে আরো ছটি জলাধার তৈরি হয়েছে।

শুধু বৃষ্টির জলের মুখাপেক্ষী না হয়ে করেলি পাহাড়ের ওপর থেকে সমতলে জল নামিয়ে এনেছেন।  বসেছে ৮০০ ফুট জলের পাইপলাইন।  সেই পাহাড়ি জলেও দিব্য চাষ হচ্ছে।

আজ গোটা গ্রামেই সবুজের বিপ্লব।  প্রচুর ফলনে আত্মবিশ্বাসী গ্রামের চাষিরা। ফিরছে সচ্ছলতা।  গ্রামের ‘সুবজ সাথী’ জয়াদেবী আজ তাই সবার নয়নের মণি।  পরিবর্তনের কাণ্ডারি।  তথ্যসূত্র : এই সময়

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে