শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩, ১১:০৫:০৯

লিচু খাবেন, তবে ভুলেও যা করবেন না!

লিচু খাবেন, তবে ভুলেও যা করবেন না!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : গ্রীষ্মকালীন ফল আম, জাম, কাঁঠালের মতোই প্রিয় একটি ফল লিচু। সুস্বাদু আর রসালো হওয়ায় গরমে মৌসুমি এই ফলের চাহিদা সব সময়ই বেশি থাকে। তবে আপনি কি জানেন, এই লিচুই আপনার প্রাণনাশের কারণ হতে পারে।

গ্রীষ্মকালীন এ ফলটির নানা উপকারিতা থাকলেও বেশি লিচু খাওয়া মোটেও শরীরের জন্য সুখকর নয়, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, লিচু পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও বেশি লিচু খেলে এর ক্ষতিকর দিক মারাত্মক। যা সম্পর্কে সবারই জানা প্রয়োজন।

যেমন লিচুতে শর্করার মাত্রা বেশি। ফলে বেশি লিচু রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ডায়াবেটিসের রোগী তো বটেই, সাধারণ মানুষকেও লিচু খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

লিচুর ক্ষতিকর দিকের একটি হলো এই ফল সাধারণত খালি পেটে খেতে নেই। এতে হজমের গোলমাল হতে পারে। অনেকক্ষেত্রে খালি পেটে লিচু খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে।

এই ফল রক্তচাপ কমাতে পারে। তবে বিপজ্জনকভাবে রক্তচাপ কমলে ঝাপসা দৃষ্টি, মাথা ঘোরা, ঠান্ডা, বমি বমি ভাব, অগভীর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং চরম ক্লান্তি দেখা দেয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। খালি পেটে লিচু খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে।

যারা লো প্রেশারের রোগী তাদের তাদের বেশি মাত্রায় লিচু খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত লিচু খাওয়া অনেক সময় লো প্রেশারের রোগীর বুক ধড়ফড় সমস্যার সৃষ্টি করে। যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, তাদের লিচু খাওয়ার সময়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ পরিমাণের বেশি লিচু খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীর গ্লুকোজের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে।

পুষ্টিবিদদের মতে, ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ ক্যালোরি থাকে। বেশি লিচু খেলে তা ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে মেদবহুল মানুষের বেশি লিচু খাওয়া উচিত নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, ব্যক্তিভেদে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লিচু খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যা হবু মায়ের শারীরিক জটিলতা যেমন ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা, মৃত সন্তানের জন্মদান এবং অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়িয়ে তুলতে পারে অনেকটাই।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশে কিছু এলাকায় শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসাবে লিচু থেকে বিষক্রিয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সমীক্ষা বলছে, ভারতের বিহার রাজ্য এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক শিশুর মৃত্যুর কারণ এটি।

মৃত্যুর কারণ হিসেবে সমীক্ষাটি খুঁজে পেয়েছে একটি অবাক করা তথ্য। লিচুতে থাকা হাইপোগ্লাইসিন নামে একটি রাসায়নিক উপাদান শরীরে শর্করা তৈরি রোধ করে। তবে সব ক্ষেত্রে নয়। খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খাওয়া অথবা আগের দিন রাতে না খেয়ে থাকা এবং সকালে ঘুম থেকে উঠেই লিচু খাওয়া শিশু ও ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তাই এভাবে যে কেউ লিচু খেলে তা মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অবস্থায় লিচু খেয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। প্রাণনাশের কারণ হিসেবে অপরিপক্ক লিচু ও লিচু রোগ প্রতিহত করতে কৃষকের অজানা কীটনাশকের প্রয়োগকেও দায়ি করা হয়েছে।

তাই লিচু যেন আপনার মুত্যুর কারণ হয়ে না ওঠে তার জন্য অবশ্যই নিশ্চিত করুন আপনার কেনা লিচু যেন অপরিপক্ক ও কীটনাশকমুক্ত হয়। সেই সঙ্গে চেষ্টা করুন খালি পেটে লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে।

এই নির্দেশনা মেনে একজন সুস্থ মানুষ সারাদিনে সর্বোচ্চ ৮ টি লিচু খেলে সুস্থ ও নিরাপদ থাকবেন। তবে শিশু ও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই লিচুর পরিমাণ ৩ টির অধিক না হওয়াই ভালো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বেশি সতর্কতা মেনে চলতে এই লিচুর পরিমাণ একসঙ্গে না খেয়ে সারাদিনে অল্প অল্প করে খেলে সবচেয়ে নিরাপদ থাকা যাবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে বেশি লিচু দিয়ে জুস তৈরি করে খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, এভাবে লিচু খেলে শরীরে বেশি পরিমাণে লিচু প্রবেশ করার সুযোগ পায়। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, বিবিসি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে