অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস : টেনশন. টেনশন... আর টেনশন। ছোট থেকে বড়, এ যেন এক ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কোনো কথা বললেই বলে- টেনশন, না হলে ডিপ্রেশন। টেনশন হলো সভ্য সমাজের এক অভিশাপ। ফলে সভ্যতার অন্যতম সংকট হলো এ টেনশন। এ টেনশন শব্দটি মেডিকেল ডিকশনারিতে যদি থাকে কোনো আপত্তি নেই কিন্তু মানুষের ডিকশনারিতে যদি থাকে তাহলে কি না হতে পারে একবার ভেবে দেখা দরকার। আবার এ ভাবনাও টেনশন সৃষ্টি করতে পারে। তাই সমাধান।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বাচ্চা থেকে বুড়ো যারা হাইপার টেনশনের শিকার হয়ে যাচ্ছে তার একমাত্র কারণ আধুনিকতা বা ব্যস্ততম জীবন। ঊনবিংশ শতাব্দী যদি বিশ্বের জন্য রেনেসাঁসের শতাব্দী হয়ে থাকে, বিংশ শতাব্দীকে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, ভয়, বিকারের শতাব্দী তথা হাইটেকের শতাব্দী বলা যেতে পারে। একবিংশ শতাব্দী নিয়ে এসেছে বিরাট অনিশ্চয়তা, প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা, অর্থনৈতিক ব্রেক এবং বিশ্বব্যাপী নানা সংকট। ক্যালিফোর্নিয়ার বিশিষ্ট টেনশন বিশেষজ্ঞ ডা. হ্যান্স সেমের অভিমত, টেনশন প্রশমনে ওষুধ গ্রহণ অপেক্ষা দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন অধিক ফলদায়ী।
লেখক নিজে দীর্ঘদিন ধরে এসব নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন, অভিজ্ঞতা ও অনুভব হলো, টেনশন ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত হতে আজই 'প্রাণায়াম ও মেডিটেশনের' সাহায্য নিন এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য পজিটিভ অ্যাটিচিউড গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিন। যত সৃষ্টিমূলক কাজে নিয়োজিত থাকা যাবে, ব্যর্থতাকে বাদ দেয়া যাবে, অতীতকে বিদায় জানানো যাবে, ততই টেনশনমুক্ত থাকা যাবে। শুধু তাই নয়, অশুদ্ধ প্রতিযোগিতা ও অহেতুক দুশ্চিন্তা দুটোই টেনশনের জন্ম দেয়। সুতরাং যতটা সম্ভব এসব থেকে বিরত থাকাই হবে টেনশনমুক্ত জীবনের আধার। কথায় আছে যত অভ্যাস করা যাবে ততই সুফল পাওয়া যাবে, সুস্থ থাকা যাবে। টেনশনমুক্ত জীবনের জন্য করণীয়- জীবনের প্রত্যেকটি ঘটনা কোনো না কোনোভাবে আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। তাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ লাভের বিষয় উপলব্ধি করার প্রয়াস নেয়া দরকার। অতীতের ভুলে ডুবে থাকা উচিত নয়।
অজানা ভবিষ্যতের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হওয়াও উচিত নয়। সবাইকে সুখ দিলে মন প্রফুল্ল থাকবে। সুখ দিন, সুখ নিন। প্রাণ খুলে হাসুন। খুশির মতো এমন ভিটামিন আর হয় না। চিন্তা, চিন্তা নয় চিতা সমান। মেডিটেশন চিন্তামুক্ত জীবনের আধার। ক্রোধ আর ঈর্ষা, সন্দেহ আর অবিশ্বাস এ যমজ ভাই-বোনকে আজই বিদায় দিন। টেনশন চলে যাবে। মানুষের সব ধরনের উপলব্ধির উৎস হলো মন। সুপ্ত অথবা জাগ্রত অবস্থায় যে বিচার চলে তার জন্মদাতাও এই মন। এ মনের বিচার ধারার প্রবাহ অনুসারে ফলপ্রাপ্ত হয় মাত্র মানুষে পারে না এমন কাজ নেই। এমনকি নিজের মনকেও ইচ্ছা করলে বশ করা যায়। ফলে মনকে যেমনভাবে ব্যবহার করতে চাই করতে পারা যায়। শুধু পদ্ধতিটা জানা থাকা দরকার।-বিডিপ্রতিদিন
লেখক : অধ্যাপক, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, হলিস্টিক হেলথ্ কেয়ার সেন্টার, পান্থপথ, ঢাকা।