এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বাঙালিদের ইলিশের প্রতি ভালোবাসা চিরন্তন! তাই জলের এই রুপোলি শস্যের দাম যতই বেশি হোক না কেন, সব কষ্ট সহ্য করেও বাঙালি গৃহকর্তরা বাজারে গিয়ে একটা পছন্দসই ইলিশ কিনে বাড়ি ফিরবেনই। আর তারপর রান্না ঘরে তৈরি হবে শর্সে ইলিশ বা ইলিশ ভাঁপা। আর এইসব মুখোরোচক পদ মুখে তুলতে পারলেই মানব জীবন সার্থক! সত্যিই, এই স্বাদের যে ভাগ হয় না।
তবে আজকাল এহেন এক লোভনীয় মাছের পদ খাওয়ার সময়ও অনেকে ভয়ে ভয়ে থাকেন। কারণ বাজারে একটা ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে নিয়মিত ইলিশ খেলে নাকি বাড়তে পারে প্রেশার থেকে শুরু করে সুগার এবং কোলেস্টেরল। আর সেই কারণেই অনেক স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা দুরু দুরু বুকে ইলিশের পদ চেখে দেখেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল, জনমানসে প্রচলিত এই ধারণার আদৌ কি কোনও ভিত্তি রয়েছে? নাকি গোটা বিষয়টাই ভুঁয়ো? আসুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ শর্মিষ্ঠা রায় দত্তের থেকে। তিনিই আমাদের এই বিষয়টি নিয়ে বিশদে জানালেন।
প্রোটিনের ভাণ্ডার: যে কোনও মাছের মতোই ইলিশে রয়েছে প্রোটিনের ভাণ্ডার। তাই পেশির গঠন থেকে শুরু করে ইমিউনিটি বৃদ্ধির কাজে এই মাছের জুড়ি মেলা ভার। এই প্রসঙ্গে শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত জানালেন, ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছ থেকে প্রায় ২১ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত ইলিশ খেলে যে দেহে প্রোটিনের ঘাটতি মিটে যাবে, তা তো বলাই বাহুল্য। সুতরাং ট্যাঁকের জোর থাকলে মাঝেমাঝে ইলিশ খেতেই পারেন।
ওমেগা থ্রি সহ একাধিক ভিটামিন ও খনিজের খনি: শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত জানালেন, ইলিশ মাছে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা থ্রি। আর এই উপাদান কিন্তু হার্ট ও ব্রেনের স্বাস্থ্য রক্ষার কাজে একাই একশো।
এছাড়া এই মাছে মজুত রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন ডি-এর ভাণ্ডার। আর এই সমস্ত ভিটামিন কিন্তু মুখের ঘা সারানো থেকে শুরু করে ত্বকের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা এবং বিপাকের হার বাড়ানো সহ একাাধিক জরুরি কাজেও সিদ্ধহস্ত।
পাশাপাশি ইলিশে আছে আয়রন, সেলেনিয়াম এবং ক্যালশিয়ামের প্রাচুর্য। আর এই সমস্ত উপাদান হাড়ের জোর বাড়ানোর কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সুস্থ থাকতে মাঝেমধ্যে ইলিশ পাতে রাখতে ভুলবেন না।
কোলেস্টেরল ও ব্লাড প্রেশার থাকলে একটু সমঝে: আসলে ইলিশে একটু বেশি পরিমাণে কোলেস্টেরল মজুত রয়েছে। তাই যাঁরা ইতিমধ্যেই কোলেস্টেরলের মতো সমস্যায় আক্রান্ত, তাঁরা এই মাছটা একটু সমঝে খান। সামান্য লোভ সামলে মাসে ১০০ গ্রাম ইলিশ খেলেই আপনারা সুস্থ থাকতে পারবেন। অপরদিকে যাঁদের ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি রয়েছে, তাঁরা কিন্তু মাসে এক-আধবারের বেশি ইলিশ খেলে ফেঁসে যাবেন! তাই সাবধান হন।
ডায়াবিটিসে সামলে: শর্মিষ্ঠা রায় দত্তের মতে, ডায়াবিটিস রোগীদেরও কিন্তু ইলিশ খেতে হবে সমঝে। নইলে রক্তে শর্করার মাত্রা হু হু করে বাড়তে পারে। আর সুগার বাড়লে যে কিডনি, চোখ, স্নায়ু সহ একাধিক অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে, তা আর নিশ্চয়ই আলাদা করে বলতে হবে না! তাই এইচবিএ১সি লেভেল ৬.৫-এর উপরে থাকলে ইলিশ না খাওয়াই মঙ্গল। আর যাঁদের এইচবিএ১সি ৬.৫ বা তার নীচে রয়েছে, তাঁরা মাসে ২০০ গ্রাম ইলিশ খেতে পারেন।
সুস্থ থাকলে মানা নেই: কোনও ক্রনিক রোগের ফাঁদে না জড়িয়ে থাকলে সপ্তাহে এক-আধবার ইলিশ খেতেই পারেন। এতেই শরীর সুস্থ থাকবে এবং বিভিন্ন ছোট-বড় রোগের ফাঁদও এড়িয়ে চলা যাবে। তবে ইলিশ রান্নার সময় সতর্ক হন। খুব বেশি তেল, মশলা দিয়ে রান্না করলে কিন্তু লাভের বদলে ক্ষতির আশঙ্কাই বাড়বে। তাই এই দিকটা অবশ্যই খেয়াল রাখুন। তাহলেই কিন্তু সুস্থ থাকার পথ প্রশস্থ হবে।-এই সময়
Disclaimer: প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।