মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:২৭:৫৬

চাঁদের পুকুর!

চাঁদের পুকুর!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : পশ্চিম চীনে গোবি মরুভূমির প্রান্তে মরুদ্যান শহর দুনহুয়াং, লাখ দু'য়েক মানুষের বাস। বালিয়াড়ি অঞ্চলে চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পর্যটন। মূল সমস্যা পানির, কেননা হ্রদ ও নদীনালা শুকিয়ে যাচ্ছে।  মিংশা – মানে বালির গান – পশ্চিম চীনের মরুদ্যান শহর দুনহুয়াং-এর দক্ষিণের বালিয়াড়িগুলিকে ঐ নামেই ডাকা হয়।

শহরের প্রান্তে বালিয়াড়িগুলি টুরিস্টদের খুব প্রিয়। উটে চড়া আর স্লেজে চড়ে বালির উপর দিয়ে নীচে নামা ছাড়া এখানে আর একটি দ্রষ্টব্য আছে।

বালিয়াড়ি এলাকার ঠিক মাঝখানে বাকা চাঁদের মতো একটি হ্রদ, যা দু'হাজার বছর যাবৎ মাটির নীচে কোনো অদৃশ্য উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে আসছে। এই হ্রদটি বহুদিন ধরে ফটোগ্রাফার সুন কুয়ানহুয়া-র ছবির বিষয়বস্তু:

আগে হ্রদটা আরো অনেক বড় এবং গভীর ছিল – প্রবীণেরা বলেন, দশ মিটার অবধি গভীর, কোনো মানুষ তার তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। ইতিমধ্যে হ্রদটা অনেক ছোট হয়ে এসেছে – আর অগভীর; জলের উচ্চতা এখন মাত্র তিন মিটার।

দুনহুয়াং-এ ফলের বাগান
তবে পানি কমে আসছে। খামারচাষি চিন জিয়ান-এর পিচ ফলের বাগান এখনও সবুজ, কিন্তু মাত্রাধিক কৃষিকাজ আর টুরিস্টদের ভিড়ে ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রা ক্রমেই কমে আসছে। চিন বলেন:

সাধারণত আমরা মাসে একবার কিংবা দু'বার পানি পাই। পানি ব়্যাশন করা হয় কিনা। যাতে গাছগুলো বড় বেশি না বাড়ে আর বেশি পানি না খায়, সেজন্য আমরা বসন্তে গাছগুলোকে ছেঁটে দিই। রাসায়নিক সারেও কাজ হয়।

প্রতি কিলো শুকনো পিচের জন্যে চিন জিয়ান পান প্রায় ছয় ইউরো মতন। অর্থাৎ বছরে তাঁর আয় মোট ৫০ হাজার ইউয়ান, বা চার হাজার ইউরো।

মরুভূমি আরো কাছে চলে আসছে – বছরে চার মিটার করে বাড়ছে। তা সত্ত্বেও যে কেন চাষবাসের কাজে ক্রমেই আরো বাধা আরোপ করা হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারেন না চিন:

সরকার আমাদের বাধা দিচ্ছে। বালিয়াড়ির কাছে আমার আরো জমি আছে, কিন্তু তা আমি চাষবাস কিংবা পশুপালনের জন্য ব্যবহার করতে পারব না। কেননা আমাদের অতি কম পানি দেওয়া হয়।

মরুভূমির জাহাজ
কাজেই চিন এবার পর্যটন শিল্পের দিকে নজর ফিরিয়েছেন – এবং একটি উট কিনেছেন। চিন জিয়ান ও তাঁর পরিবারবর্গ খামারের প্রাঙ্গণে দশটি গোল তাবু খাড়া করেছেন। এগুলো টুরিস্টদের ভাড়া দেওয়া হবে। দুনহুয়াং-এর প্রায় দু'লাখ বাসিন্দাদের অনেকে সপ্তাহান্তে মরুভূমির চার্ম উপভোগ করতে আসেন। পিচফলের বাগানে পিকনিকের পর টুরিস্টরা যান বালিয়াড়িতে হাঁটাচলা করতে।

অবশ্য মরুদ্যানে আরো বেশি মানুষ আসার অর্থ আরো পানি খরচ: এই সমস্যার বস্তুত কোনো সমাধান নেই। একটা সমস্যা সমাধান করার মানে আরেকটি সমস্যা সৃষ্টি।

চাঁদে অবতরণের ৪০ বছর
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চন্দ্রপৃষ্ঠে মার্কিন পতাকা স্থাপন করছেন নিল আর্মস্ট্রং এবং এডউইন অল্ড্রিন। লুনার মডিউলে থাকা ১৬ এমএম মুভি ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছিল এই ছবি। ১৯৬৯ সালে তোলা এ্যাপোলো ১১ অভিযানের তিন নভোচারী। বাম দিক থেকে নিল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স এবং এডউইন ই অল্ড্রিন। আব্রাহাম লিংকনের ২০০তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২০০৯ সালের ১৮ জুন বক্তৃতা করছেন প্রাক্তন নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং। চাঁদে অবতরণকারী প্রথম মানুষ হিসেবে কৃতিত্বের অধিকারী আর্মস্ট্রং।

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই এ্যাপোলো ১১ অভিযানের সময় চাঁদের বুকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা উত্তোলনের পর পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নভোচারী এডউইন ই অল্ড্রিন। ঐ অভিযানে চাঁদের বুকে প্রথম অবতরণে অল্ড্রিনের সাথি ছিলেন নিল আর্মস্ট্রং। কমান্ড মডিউল পরিচালনায় ছিলেন নভোচারী মাইকেল কলিন্স। এই অভিযানের মধ্য দিয়ে মহাকাশ অভিযানে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদের নরম ধুসর বুকে এ্যাপোলো ১১ এর নভোচারীদের একজনের পদচিহ্ন। ঐ অভিযানের কমান্ডার নিল এ আর্মস্ট্রং এবং এয়ার ফোর্স কর্নেল এডউইন ই অল্ড্রিন প্রথম চাঁদের বুকে পদার্পণ করেছিলেন। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে তাঁরা পরদিন ২১ জুলাই পৃথিবীতে ফিরে আসেন। ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই মানুষের প্রথম চাঁদে অবতরণের ৪০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হচ্ছে এই বছর।

লানঝু-র গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন প্রফেসর কুইজান জুন: তাঁর গবেষণার বিষয় হলো মানুষ আর মরুভূমির পারস্পরিক প্রভাব। জুন বলেন:

মূল সমস্যাটা হলো পানি সরবরাহ। আগে শুলে আর দাংহে, এই দু'টি নদী ছিল। আজ দু'টিই উধাও হয়েছে। দুনহুয়াং-এর মানুষজন শত শত বছর ধরে কৃষিকাজ চালিয়েছেন, কাজেই ভূগর্ভস্থ পানি অনেকটা নেমে গেছে। সেটাই হবে আগামীতে মূল মাথাব্যথা।''

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই লুনার মডিউল থেকে তোলা নভোচারী মাইকেল কলিন্সসহ এ্যাপোলো কমান্ড মডিউলের দৃশ্য। এর একটু আগেই নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং এবং এডউইন অলড্রিন লুনার মডিউলে করে এ্যাপোলো ১১ থেকে আলাদা হয়ে যান। পেছনে চাঁদের পৃষ্ঠতল। ইডাহোর পোকাটেলোতে অবস্থিত ক্রেটার্স অব দ্য মুন ন্যাশনাল মনুমেন্ট এ ১৯৯৯ সালের ২২ মে নাসার প্রাক্তন নভোচারী জো এঙ্গেল (বামে) এবং জিন কেরনান (মাঝে) ৩০ বছরের পুরনো ছবির প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন। সাথে রয়েছেন ইডাহো রাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পিট কেনারুসা। চাঁদের বুকে হাঁটার কৃতিত্বের অধিকারী সর্বশেষ নভোচারী কেরনান।

প্রফেসর কুইজান জুন-এর ছাত্র-ছাত্রীরা মাটির বিভিন্ন নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখছেন। বালিতে পানির অনুপাত চার শতাংশের কম হলে বাতাসে বালিয়াড়ির ক্ষয় হতে থাকবে। এর অর্থ, বালিয়াড়িগুলি স্থিতি হারাবে এবং ‘হটতে' শুরু করবে।

বাতাস চলার করিডর মরুভূমির অগ্রগতি রুখবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রথমে খড়ের গাদা দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মরুদ্যান শহরের কাছে খড় এখন দুষ্প্রাপ্য। কাজেই নতুন বেড়াগুলো প্লাস্টিকের। বেড়াগুলোর মধ্যে আবার ঘাস বা ঝোপঝাড় গজালে মাটির ক্ষয় কিছুটা রোখা যাবে।

কিংবদন্তি বলে, ৭০ কিলোমিটার দূরের ইয়াং-গুয়ান শহরটি নাকি একটি বালির ঝড়ে লুপ্ত হয়। দুনহুয়াং-এরও যাতে সেই দশা না ঘটে, সে জন্য সরকার ৬৫ কোটি ইউরো মূল্যের দশ বছরের এক পরিকল্পনা সৃষ্টি করেছেন।-ডয়েচ ভেলে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে