এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : সব বাবা মাই তাদের সন্তানের জন্য যথাসাধ্য পরিশ্রম করেন। তাদের খেলনা কিনে দিতে অনেকে একটু বেশি পরিশ্রমও করেন আবার অনেকে শিশুদের খেলনা দিয়ে বড় করতে নারাজ, নিয়মানুবর্তিতা এবং স্থির লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শিশুকে সেই পথেই পরিচালিত করেন। এর ঠিক বিপরীত চিত্রও দেখা যায়।
খুব অল্প সংখ্যক বাবা মা তার সন্তানের আনন্দের জন্য সব উজাড় করে দেন এবং শিশুদের নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকে নিতে সাহায্য করেন। সব বাবা মায়েরই স্বপ্ন থাকে সুসন্তান হিসাবে গড়ে তোলার। কিন্তু শিশুকে গড়ে তোলার সময় তারা এমন কিছু ভুল করে বসেন যার জন্য ভবিষ্যতে তাদের অনুশোচনা করতে হয়।
শিশুর প্রথম কয়েক বছর জাদুর মত কেটে যায়। এই বয়সগুলো তাদের হেসে খেলে কাটানোর সময়। আর এই সময়েই তার পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ ঘটে এবং ভবিষ্যতে সে বাবা মা, পরিবার, সমাজ এবং পৃথিবীর জন্য কী করবে তার ভিত্তি স্থাপন হয়। এই সময় তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভবিষ্যৎ জীবনের উপর দাগ কেটে দেয়।
এর অনেকাংশের জন্য তাদের প্রতি বাবা মায়ের আচরণ প্রবল ভাবে প্রভাব বিস্তার করে। আসুন দেখে নেই সন্তানের প্রতি বাবা মায়ের যে ১০টি আচরণের কথা যা ভবিষ্যতে অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
১. শিশুদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি না দেওয়া: শিশু থেকে বড় হয়ে ওঠার জন্য তাদের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সান্নিধ্য খুবই প্রয়োজন। তাই তাদের সাথে বাবা মায়ে যোগযোগ বাড়ানো জরুরি। যদি তা না করা হয় তাহলে তারা একাকীত্বে ভোগে এবং নিজের ক্ষুদ্র মন যা ভালো মনে করে তাই করতে শুরু করে। যেহেতু তারা জীবন সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানে না সেহেতু তারা এমন কিছু ভুল করে বসে যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২. শিশুদের আলিঙ্গন না করা: গবেষকরা দেখেছেন, শিশুদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের জন্য বাবা মায়ের আলিঙ্গন খুব জরুরি একটি বিষয়। অজ্ঞতা কিংবা কাজের চাপে শিশুকে আলিঙ্গন করতে ভুলে যান অনেক বাবা মা। এতে তাদের মধ্যে শূন্যতাবোধ সৃষ্টি হয়।
৩. শিশুদের সাথে ছবি না তোলা: ছবি তোলা আর এমন কি! চাইলেই এখন ছবি তোলা যায়। শুধু ছবি কেন? ভিডিও করতেও কি খুব কষ্ট করতে হয়? ছোট্ট এই কাজটি শিশুর মানসিক পূর্ণতা তৈরিতে সাহায্য করে এবং বাবা মায়ের প্রতি তার ভালোবাসা আরো গভীর করে তোলে। শৈশবের এসব স্মৃতি পরবর্তী জীবনে বাবা মায়ের প্রতি তাকে আরো দায়িত্বশীল করে তোলে।
৪. শিশুর প্রথম কথা লিখে রাখেন না: সুন্দর একটি স্মৃতি তাদের জীবনকে আরো আনন্দময় করে তুলতে পারে। প্রথম বুলি লিখে রাখলে তার প্রতি আপনি কতটা যত্নশীল ছিলেন তা প্রকাশ পায়। খুব কঠিন কোনো কাজ না এটি। তবুও অনেক বাবা মাই এই বিষয়টি উপলব্ধি করেন না। অথচ একটু মনোযোগী হলেই তা করা সম্ভব।
৫. শিশুর সৃজনশীলতার প্রতি নজর না দেওয়া: আমরা বলছি না যে তার সৃজনশীলতার প্রতি নজর দিলে সে বড় চিত্র শিল্পী কিংবা কোনো নাম করা গায়ক হয়ে উঠবে। কিন্তু তার সৃজনশীল কাজকে উৎসাহিত করলে ভবিষ্যতে এর সুফল সে পাবে। সে রুচিশীল এবং নান্দনিক হয়ে গড়ে উঠবে। কিন্তু যদি তা না করেন তাহলে সে বিকৃত মানসিকতা নিয়ে বড় হবে যার ফলাফল আপনাদেরই ভোগ করতে হবে।
৬. শিশুদের প্রতি কঠোর আচরণ করেন: শিশুরা ফেরেশতা নয় যে ভুল করবে না। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে নিতেই একদিন সে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠে। কিন্তু রূঢ় আচরণ কোনো শিশুই নিতে পারে না এবং তার কোমল মনে বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। তাই তাকে তিরস্কার না করে একটু কৌশলী আচরণ করে তার ভুল ধরিয়ে দিন। অন্যথায় তিক্ততা বাড়তে বাড়তে একসময় আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
৭. শিশুর চাওয়াকে গুরুত্ব না দেওয়া: আপনি নিজেও এই কথা শুনে বড় হয়েছেন, ‘তোমার এটা করার বয়স হয়নি, বড় হলে করো।’ এই কথাগুলো শিশুকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য প্রত্যেক বাবা মাই বলেন। কিন্তু শিশুর চাওয়া এখানে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। সে হিনমন্য স্বভাব নিয়ে বেড়ে ওঠে। যে শিশু হীনমন্যতায় বড় হয় তার দ্বারা সবচেয়ে বড় ভুলগুলো সংগঠিত হয়। তাই তার চাওয়া অযৌক্তিক হলেও শুনুন, তাকে বুঝিয়ে দিন কেন সে এখনই এই কাজগুলো করার যোগ্য নয়।
৮. শিশুদের যথেষ্ট আনন্দের ব্যবস্থা করেন না: কোমলমতি শিশুদের মন সবসময় আনন্দ খুঁজে বেড়ায়। তারা খেলতে চায়, হাসতে চায়, বেড়াতে যেতে চায়। দুঃখ ভারাক্রান্ত শৈশব নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশুরা আনন্দের মাঝে বেড়ে ওঠা শিশুদের চেয়ে ভবিষ্যতে অনেক পিছিয়ে থাকে। কারণ তার মানসিক বিকাশ পরিপূর্ণ হয় না তাদের। এজন্য তাদের আচার আচরণ এবং গতি প্রকৃতি স্বাভাবিক হয় না। তারা আপনার সাথেও খারাপ আচরণ করতে পারে। এমনও হতে পারে আপনাকে সে ছেড়েই চলে যাবে।
৯. অন্যের কথায় কান দেন তারা: সমাজে বারো রকম মানুষের বারো রকম চাওয়া। আর তা যদি আপনার শিশুর উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় তাহলে আপনাকে তা প্রতিহত করতে হবে। কারণ সন্তান আপনার, যারা অযথা উপদেশ দিয়ে বেড়ান তাদের কথায় কান দেবেন না। যদি তাদের কথা শুনে শিশুকে বড় করতে চান তাহলে শিশু তার স্বকীয়তা হারাবে। ভবিষ্যৎ জীবনে যার ফলাফল ভয়াবহ। সে সময় এই উপদেশ দাতারা আপনার সাথে থাকবেন না কিন্তু ভয়াবহতার মুখোমুখি আপনাকেই হতে হবে।
১০. শিশুর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কাছে থাকেন না: এমন অনেক বিষয় আছে যা আমাদের কাছে গুরুত্ববহন না করলেও শিশুদের কাছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাবা মা তার সবচেয়ে আপন মানুষ হিসাবেই জেনে আসে সে। তাই জন্মদিন, ঈদ, পুজো, জাতীয় বিভিন্ন দিবসে তারা বাবা মায়ের সাথে আনন্দ উদযাপন করতে চায়। কিন্তু তার জন্য বিশেষ সময়গুলোতে যদি তাদের কাছে না পাওয়া যায় তাহলে তারা অসহায় বোধ করে। এক ধরনের একাকীত্ব তাকে ঘিরে ধরে এবং বড় হলেও তা কাটে না। যা তাকে আগ্রাসী করে তোলে এবং আপনার প্রতি সে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। বিশ্বাস হারানো পিতা মাতার পরিণতি যারা বরণ করেছেন তারাই শুধু ভালো জানেন।