এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : সারা পৃথিবীর তাবড় পুষ্টিবিজ্ঞানীদের কথায়, দুধ হল একটি সুষম পানীয়। এতে রয়েছে পুষ্টির ভাণ্ডার। তাই নিয়মিত দুধ খেলে যে একাধিক রোগের ঘাত-প্রতিঘাত এড়িয়ে চলা যাবে, তা তো বলাই বাহুল্য।
তবে এহেন উপকারী এক পানীয়কে নিয়েও বিতর্ক কম নেই। এই যেমন আমাদের মতো শহুরে মানুষের কাছে গোরুর দুধ অত্যন্ত উপকারী। আমাদের মতে, এই পানীয়ের কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু অপরদিকে গ্রাম বাংলার একাংশের কাছে ছাগলের দুধই কিন্তু অমৃত পানীয়। তাই তাঁরা গোরুর দুধকে বাদের খাতায় রেখে দিয়ে নিয়মিত ছাগলের দুধ গলাধঃকরণ করেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এই দুই ধরনের দুধের মধ্যে কোনটা বেশি উপকারী? কোনটা খেলে মিটবে পুষ্টির ঘাটতি? এইসব প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়ার তাগিদেই আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। তিনিই আমাদের এই দুই ধরনের দুধ সম্পর্কে বিশদে জানালেন।
১. গোরুর দুধের বিকল্প নেই: ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আমাদের মধ্যে অধিকাংশেরই গোরুর দুধের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়। আর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত এই দুধ পান করলেই কিন্তু দেহের পুষ্টির ঘাটতি মিটতে সময় লাগে না। আসলে গোরুর দুধে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন। আর এই প্রোটিন কিন্তু শরীর সহজেই গ্রহণ করে নেয়। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ, ক্যালশিয়াম সহ একাধিক উপকারী উপাদান। তাই বড়দের শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে এবং শিশুর বিকাশের জন্য রোজ গোরুর দুধ খাওয়াটা মাস্ট। এতেই উপকার মিলবে হাতেনাতে।
২. ছাগলের দুধেরও জুড়ি মেলা ভার: ঈশানী জানালেন, গোরুর দুধের পাশাপাশি ছাগলের দুধও কিন্তু অত্যন্ত উপকারী। এই পানীয়েও রয়েছে প্রোটিনের ভাণ্ডার যা কিনা মাসল সেল বৃদ্ধিতে কার্যকরী। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ এবং ক্যালশিয়ামের মতো অত্যন্ত উপকারী কিছু উপাদান। তাই নিয়মিত ছাগলের দুধ খেলে যে দেহে শরীর ও স্বাস্থ্যের হাল ফিরবে, তা তো বলাই বাহুল্য। তাই সুযোগ থাকলে এই পানীয়ও গলায় ঢালতে পারেন।
৩. গোরু না ছাগলের দুধ বেশি উপকারী? গোরু এবং ছাগলের দুধের মধ্যে লড়াই একদম তুল্যমূল্য বলে জানালেন ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, গোরুর দুধে ফোলেট, রাইবোফ্ল্যাভিন এবং ভিটামিন বি১২ সামান্য বেশি মাত্রায় থাকে। অপরদিকে ছাগলের দুধে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং পটাশিয়ামের মাত্রা থাকে গোরুর দুধের তুলনায় কিছুটা বেশি। তাই গোরু ও ছাগলের দুধের যুদ্ধে কাউকেই এগিয়ে রাখা সমীচীন নয়।
৪. মিলিয়ে মিশিয়ে খান: দুধে অ্যালার্জি না থাকলে গোরু বা ছাগলের দুধ মিলিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে সপ্তাহে ৪ দিন গোরুর দুধ খেলে ৩ দিন ছাগলের দুধ খান। এতেই দেহের পুষ্টির ঘাটতি মিটে যাবে। আর জেনে রাখুন, যে কোনও সুস্থ ব্যক্তি দিনে ১০০ থেকে ১৫০ এমএল বা ১ কাপের মতো দুধ অনায়াসে খেতে পারেন। এতেই আপনার সুস্থ থাকার পথ প্রশস্থ হবে।
৫. ক্রনিক রোগে একটু সমঝে: তবে ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল বা হাই প্রেশারের মতো অসুখ থাকলে ফ্যাট যুক্ত দুধ খাওয়া যাবে না। বরং এই পরিস্থিতিতে ফ্যাটলেস ডবল টোনড দুধ খেতে হবে। তাহলেই রোগের করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে পারবেন। এছাড়া যাঁরা কোনওদিন ছাগলের দুধ খাননি, তাঁরা হুট করে বেশি পরিমাণে এই পানীয় গলায় ঢালবেন না। এমনটা করলে পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। তাই ছাগলের দুধ সমঝে খাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
Disclaimer: প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।