সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩, ০৩:৫৯:৩২

জানুন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের সাফল্যের চাবিকাঠি!

জানুন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের সাফল্যের চাবিকাঠি!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। তার প্রতিষ্ঠিত বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী কোম্পানির মধ্যে একটি। সম্প্রতি মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার কেনা নিয়েও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছেন তিনি।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাফল্যের দেখা পেলেও ইলন মাস্কের হাতে কোনো জাদুর চেরাগ নেই। বরং টেসলাসহ তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং নিজের সাফল্যের জন্য তিনি বিভিন্ন অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন, যার সঙ্গে করপোরেট দুনিয়ার প্রচলিত নিয়মের খুব একটা মিল নেই। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে এ সব অলিখিত নিয়ম কঠোরভাবে নিজের প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগও করেন ইলন মাস্ক। বলা হয়, তার সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে তার নিজের তৈরি এসব নিয়মই।

প্রয়োজন নেই দীর্ঘ মিটিংয়ের: প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে দীর্ঘ মিটিংয়ের খুব একটা প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না মাস্ক। তার মতে, এতে সময়ের অপচয় হয়। এ ধরনের মিটিং নিয়মিত হওয়ার বদলে অনিয়মিতভাবে মাঝে মাঝে হওয়া ভালো বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা কীভাবে নিজেদের সময় কাটায় সে বিষয়টিকে ইলন মাস্ক প্রচণ্ড গুরুত্ব দেন। বিশেষ করে কর্মীদের কাজের দক্ষতা ও উপযুক্ততার ওপর তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন।

নিয়মের বদলে প্রাধান্য দেন যুক্তি আর কাণ্ডজ্ঞানকে: কর্মক্ষেত্রে নিয়মের বদলে যুক্তি আর কাণ্ডজ্ঞানকে প্রাধান্য দেন ইলন মাস্ক। তার মতে, প্রত্যক্ষ ক্ষেত্রেই কোম্পানির নিয়ম কাজ করবে, বিষয়টি এমন নাও হতে পারে। এর বদলে পরিস্থিতি অনুযায়ী যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্তই প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশি মঙ্গলজনক।

গুরুত্ব দেন সোজাসুজি কথা ও সহজবোধ্যতাকে: ইলন মাস্ক করপোরেট সুলভ আচরণ এবং গুরুগম্ভীর শব্দ ব্যবহার অপছন্দ করেন। প্রতিষ্ঠানের দাফতরিক কাজে সময় নষ্ট হয়, এমন কোনো শব্দ বা আচরণ পছন্দ করেন না মাস্ক। এ ব্যাপারে মাস্ক নিজেই বলেন, ‘টেসলায় কোনো সফটওয়্যার কিংবা অন্যান্য বিষয়ে গুরুগম্ভীর কিংবা সহজে বোঝা যায় না, এমন শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। পরবর্তীতে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়, এমন সব কিছুই যোগাযোগের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। টেসলার গাড়ি কীভাবে চালাতে হয়, তা বোঝাতে গ্রাহকদের গুরুগম্ভীর এবং কঠিন শব্দ মুখস্ত করাতে চাই না আমরা।’

আস্থা রাখেন কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে: ইলন মাস্ক কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ওপর বিশ্বাস রাখেন। এক্ষেত্রে কথিত করপোরেট সংস্কৃতিকে তিনি বিশেষ ভাবে এড়িয়ে চলেন। কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে করপোরেট দুনিয়ার প্রচলিত চেন অব কমান্ডেরও খুব একটা পরোয়া করেন না তিনি। বরং চেন অব কমান্ড অনুসরণ করতে গেলে একটি তথ্য জায়গামতো পৌঁছাতে অহেতুক বেশি সময় লেগে যায় বলে মনে করেন তিনি।

তার মতে, করপোরেট নিয়ম অনুযায়ী, কর্মী পর্যায় থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ধাপের ম্যানেজারদের অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্তাদের কাছে তথ্য পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকটা সময় খামোখাই নষ্ট হয়। এর বদলে যার সঙ্গে যে বিষয়ে প্রয়োজন তার সঙ্গে সে বিষয়ে সরাসরি যোগাযোগের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন মাস্ক। এক্ষেত্রে তিনি পেশাগত ব্যবধান এবং পদমর্যাদাকে দূরে সরিয়ে রাখেন। তথ্যের অবাধ প্রবাহকেই প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে মাস্ক বলেন, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সমস্যা দূর করতে সব স্তরের মধ্যে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি।

ইলন মাস্ক আরও বলেন, সাধারণত দেখা যায়, একজন কর্মীকে প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো বিষয় জানাতে হলে প্রথমে তার নিজের ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজারকে জানাতে হয়। ম্যানেজারকে তা ডিরেক্টরকে জানাতে হয়। ডিরেক্টর আবার ভাইস প্রেসিডেন্টকে জানান। সেই ভাইস প্রেসিডেন্ট জানান অন্য ডিপার্টমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্টকে। সেই ভাইস প্রেসিডেন্ট আবার নির্দেশনা দেন তার অধঃস্তন ডিরেক্টরকে। ডিরেক্টর আবার কথা বলেন তার ম্যানেজারের সঙ্গে এবং সেই ম্যানেজার আবার যে কর্মী কাজটা করবেন তাকে নির্দেশটা পৌঁছে দেন। এতে আসলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। এর বদলে সরাসরি তার সঙ্গেই কথা বলতে হবে যিনি কাজটা সম্পাদন করবেন।

বিশ্বাস করেন মত প্রকাশের স্বাধীনতায়: নিজের প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্যান্য পাবলিক প্ল্যাটফর্মে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের অবাধ প্রবাহের ওপর বিশ্বাস রাখেন ইলন মাস্ক। এর উদাহরণ হিসেবে তার টুইটার কিনে নেওয়ার বিষয়টিকে উল্লেখ করা যায়। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগিং সাইটটি কিনে নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি মূলত মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার বিষয়টিকেই উল্লেখ করেন। ইলন মাস্কের মতে, টুইটারের বর্তমান কর্তৃপক্ষ যে সব নীতিমালা আরোপ করেছে, তা এর ব্যবহারকারীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে খর্ব করে।

টুইটার কেনা নিয়ে যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত হয়েছেন ইলন মাস্ক। তবে এ বিষয়টি বাদ দিলে বলা যায়, কর্মীদের সামর্থ্য ও দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা, অপ্রয়োজনীয় মিটিংসহ সময়ক্ষেপণকে পরিহার করা এবং কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের নিজের এসব অলিখিত নিয়মের মাধ্যমেই টেসলাকে আজকের টেসলায় পরিণত করেছেন ইলন মাস্ক।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে