এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : পড়াশোনা শেষ হলেই আমরা শুরু করি চাকরির খোঁজ। অনেকে তো পড়াশোনার পাশাপাশিই চালাতে থাকেন চাকরি। জীবনের প্রয়োজনেই কারও কারও তা করতে হয়। আর এই চাকরি পাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে অবধারিতভাবে চাকরিদাতার মুখোমুখি হতে হয় ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকারে।
চাকরির ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকারে কিছু ভুল করলে আপনাকে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগেই বাদ দিয়ে দিতে পারে কর্তৃপক্ষ। এবার তেমনই কিছু ভুলের বিষয়ে আলোচনা হবে। ইন্টারভিউতে এসব ভুল করলে চাকরি পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে যাবে যে কারও জন্য। আসুন, তবে জেনে নেওয়া যাক চাকরির ইন্টারভিউতে সচরাচর হয় এমন কিছু ভুল সম্পর্কে।
১. পৌঁছাতে হবে আগে: ইন্টারভিউয়ের একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে। ওই সময়ের বেশ আগেই চাকরিপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার অফিসে পৌঁছে যাওয়া উচিত। ইন্টারভিউয়ের সময় শুরু হয়ে যাওয়ার পর যদি সাক্ষাৎকারগ্রহীতা দেখেন, চাকরিপ্রার্থীই এসে পৌঁছাননি, তবে শুরুতে একটি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে। এতে ইন্টারভিউও এগোবে নেতিবাচকভাবেই। তাই ইন্টারভিউ শুরুর অন্তত ১৫–২০ মিনিট আগে সুনির্দিষ্ট অফিসে উপস্থিত থাকলে ভালো। রাস্তায় নানা হুজ্জতও থাকতে পারে। সেই অনুযায়ীই বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নির্ধারণ করতে হবে।
২. উদ্বেগ কমান, থাকুন শান্ত: অনেকে সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন ঠিকমতো না শুনেই হড়বড় করে উত্তর দিতে থাকেন। কাজটি একেবারেই করা যাবে না। কেউ কেউ সাক্ষাৎকার শুরুর সময় বেশ উদ্বিগ্ন থাকেন। সেই উদ্বেগে হারিয়ে ফেলেন উপযুক্ত শব্দ। ফলে শুরু হয় কথায় আটকে যাওয়া। তাই নিজের মনকে শান্ত রাখতে হবে। উদ্বেগ এলেও তা নিয়ন্ত্রণে রেখে সাক্ষাৎকারের উপযোগী হয়ে উঠতে হবে। মনে রাখতে হবে, শুরুতে খেই হারালেই কিন্তু সর্বনাশ।
৩. থাকতে হবে ফিটফাট: কথায় আছে, ‘আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী’। এটি অবশ্যই আদর্শ বিষয় নয়। তবে দুনিয়াটা এখন এমনই। তাই চাকরির ইন্টারভিউয়ে অবশ্যই ফিটফাট হয়ে যেতে হবে। পরতে হবে রুচিশীল ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই পোশাক। এর পাশাপাশি শরীরী ভাষাতেও থাকতে হবে চনমনে। ইন্টারভিউয়ে যদি ক্লান্ত ভাব দেখান, তবে চাকরিদাতা আপনাকে চাকরি দিতে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহী হবেন না।
৪. আত্মবিশ্বাসে নয় ঘাটতি: হয়তো ইন্টারভিউয়ে ঠিক সময়েই উপস্থিত হলেন। পোশাকেও থাকলেন ফিটফাট। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির কারণে ঠিক মতো ইন্টারভিউ দিতেই পারলেন না। সেক্ষেত্রে চাকরিও আর পাওয়া হবে না। তাই নিজেকে যেন অপ্রস্তুত মনে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতেই হবে। স্পষ্টভাবে দিতে হবে চাকরিদাতার করা প্রশ্নের উত্তর। দেওয়া উত্তরের ব্যাখ্যাও চাইতে পারেন সাক্ষাৎকারগ্রহীতা। সেজন্যও প্রস্তুতি রাখতে হবে। ধীরস্থিরভাবে সাক্ষাৎকার মোকাবিলা করতে হবে।
৫. কোন ইন্টারভিউয়ে কেমন গুরুত্ব: ইন্টারভিউ নানা ধরনের হয়। কখনও সরাসরি একক সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। আবার কখনো প্যানেল বসিয়ে নেওয়া হয় ইন্টারভিউ। আবার অনানুষ্ঠানিক এবং গ্রুপ ইন্টারভিউও নেওয়া হয় কখনো কখনো। যেমনই হোক না কেন, সমান গুরুত্ব দিতে হবে যে কোনো সাক্ষাৎকারে। প্রস্তুতিতেও কম-বেশি করা যাবে না। যেমন, করোনা মহামারির পর থেকেই ইন্টারনেটে ভিডিও ইন্টারভিউয়ের চল বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ শুরুর আগেই অপেক্ষাকৃত নীরব স্থান বেছে নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। আগেই পরীক্ষা করে নিতে হবে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের সংযোগ। ভিডিও ইন্টারভিউতেও কিন্তু শরীরী ভাষা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ইন্টারভিউ যে ধরনেরই হোক না কেন, আপনাকে থাকতে হবে সদা প্রস্তুত।
৬. কী করবেন, ভেবে বলবেন: ইন্টারভিউয়ে কিছু গৎবাঁধা প্রশ্ন করাই হয়। যেমন: নিজের সম্পর্কে বলুন বা যে পদে নেওয়া হবে তাতে কীভাবে ভূমিকা রাখবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে ব্যক্তিগত ক্ষেত্র নিয়েই প্রশ্নগুলো করা হয়। কিন্তু এসবের উত্তর যদি শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন, তবে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি। বরং আপনি যে একজন টিম প্লেয়ার, সেটি প্রকাশ করলে ভালো হবে। কীভাবে কোন কাজ করতে চান, সেই বিষয়েও ইঙ্গিত দিতে হবে কিছুটা হলেও। অর্থাৎ আপনার কর্মপদ্ধতি ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা দিতেই হবে। নইলে চাকরিদাতা আপনার যোগ্যতাই বুঝতে পারবেন না ঠিকভাবে। তাই যে পদের বিপরীতে ইন্টারভিউ দিতে গেছেন, চাকরি পেলে তাতে কেমন ভূমিকা কীভাবে রাখবেন – সেটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। নইলে চাকরি কিন্তু সোনার হরিণ হয়েই থেকে যাবে! তথ্যসূত্র: দ্য মুজে, সিএনবিসি ও ফোর্বস