এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : কোটি কোটি বছর ধরে প্রতিদিন সকালে সূর্য উঠছে। আলো ছড়াচ্ছে পৃথিবীতে। সূর্য ছাড়া মানুষ বা প্রাণিজগতের কোনো সদস্যের পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব। কিন্তু আমরা কি জানি, প্রতিদিনের দেখা এই বস্তুটি আসলে কী দিয়ে তৈরি? কোন কোন উপাদান আছে সূর্যের বুকে?
সূর্যপৃষ্ঠের প্লাজমা উত্তপ্ত হলে চার্জযুক্ত কণারা বেরিয়ে আসে সূর্যের আকর্ষণ কাটিয়ে, এর নামই সৌরবায়ু। নাসা
সংক্ষেপে বললে, সূর্য হলো গ্যাস ও প্লাজমা দিয়ে গঠিত অনেক বড় বল। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য অনুযায়ী, সূর্যের ভেতরের বেশিরভাগটাই হাইড্রোজেন। পরমাণুর সংখ্যা হিসাবে এর পরিমাণ প্রায় ৯২ শতাংশ। সূর্যের কোর বা কেন্দ্রে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ায় হিলিয়ামে রূপান্তরিত হয়। এ সময় বেরিয়ে আসে বিপুল শক্তি। সেই শক্তি চলে যায় সূর্যের বায়ুমণ্ডলে। তারপর তাপ ও আলো হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে সৌরজগতে।
সৌরপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে হাইড্রোজেন গ্যাস উত্তপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরমাণুগুলো ভেঙে যায়, তৈরি হয় চার্জযুক্ত কণা। এভাবে হাইড্রোজেন গ্যাস পরিণত হয় প্লাজমায়।
সূর্যের কেন্দ্রে মহাকর্ষীয় শক্তির প্রভাবে প্রচণ্ড চাপ ও তাপমাত্রা তৈরি হয়। এ অঞ্চলটির তাপমাত্রা প্রায় ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ায় পরিণত হয় হিলিয়ামে। এ সময় কিছু নিউট্রিনো বেরিয়ে আসে। সেই সঙ্গে শক্তি রূপে নিঃসৃত হয় গামা রশ্মি।
আর সৌরপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে হাইড্রোজেন গ্যাস উত্তপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরমাণুগুলো ভেঙে যায়, তৈরি হয় চার্জযুক্ত কণা। এভাবে হাইড্রোজেন গ্যাস পরিণত হয় প্লাজমায়।
প্লাজমা উত্তপ্ত হলে জমা হয় প্রচুর শক্তি। তখন চার্জযুক্ত কণাগুলো সূর্যের মধ্যাকর্ষণ বল কাটিয়ে পালিয়ে যেতে পারে। মানে উড়ে যেতে পারে মহাকাশে। একে বলা হয় সৌরবায়ু। নির্দিষ্ট পরিস্থিতে এই চার্জযুক্ত কণাগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত করলে সৃষ্টি হতে পারে অরোরা বা মেরুজ্যোতি। সূর্যপৃষ্ঠের প্লাজমা উত্তপ্ত হলে চার্জযুক্ত কণারা বেরিয়ে আসে সূর্যের আকর্ষণ কাটিয়ে, এর নামই সৌরবায়ু নাসা
হাইড্রোজেন নিয়ে তো অনেক কথা হলো। তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যের গঠন গবেষণা করে মোট ৬৭টি রাসায়নিক উপাদানের তালিকা করেছেন। সূর্যের গঠনে আরও রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে। তবে এখনই সেগুলো শনাক্ত করা কঠিন। নাসার গর্ডাড ফ্লাইট সেন্টারের তথ্যানুসারে, সৌরগঠনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে হাইড্রোজেন। এ কথা অবশ্য আগেই বলেছি। তবে এখানে পরমাণু সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, হিসাবটা করা হচ্ছে মৌলের ভর হিসাবে। এ হিসাবে প্রায় ৭১ শতাংশই হাইড্রোজেনের দখলে। এরপর সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় হিলিয়াম। প্রায় ২৭ শতাংশ। বাকি ২ শতাংশ অন্যান্য মৌল। এই ২ শতাংশের মধ্যে আছে মূলত কার্বন, নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন। পাশাপাশি নিয়ন, আয়রন বা লোহা, সিলিকন ও ম্যাগনেশিয়াম অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়।
লেখক: কাজী আকাশ, সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা
সূত্র: স্পেস ডট কম ও লাইভ সায়েন্স