শুক্রবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৯:২০:৪৯

উদ্ভাবন হলো উচ্চফলনশীল আঠাবিহীন বারোমাসি জাতের কাঁঠাল

উদ্ভাবন হলো উচ্চফলনশীল আঠাবিহীন বারোমাসি জাতের কাঁঠাল

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আঠাবিহীন কাঁঠালের একটি জাত উদ্ভাবনের দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ফল গবেষণা বিভাগের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, এই জাত উচ্চফলনশীল ও বারোমাস ফল দেবে। কলমের চারা রোপণের মাত্র দেড় বছরে গাছে ফল ধরবে। জাতটির নাম দেওয়া হয়েছে বারি কাঁঠাল-৬।

বারির বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত জুন মাসে জাতটি অবমুক্ত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড। এই জাত উদ্ভাবনের ফলে দেশে পেয়ারা, লটকন, আমের মতো কাঁঠালেরও বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হবে।

দেশে কাঁঠালের বর্তমান যেসব জাত আছে, সেগুলোর বীজ রোপণের ৭-৮ বছর পর ফল ধরা শুরু হয়। বারির উদ্যানতত্ত্ব ও গবেষণা কেন্দ্র এর আগে বারি কাঁঠাল-১, ২ ও ৩ নামের পৃথক উচ্চফলনশীল জাত অবমুক্ত করেছিল। কিন্তু সেগুলো তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি।

উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম জানান, আম, লিচু, পেয়ারা, লটকন, মাল্টাসহ জনপ্রিয় অনেক ফলের চারা সহজে কলম পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। ফলন আসে দু-এক বছরের মধ্যে। সহজ চাষাবাদ এবং বড় বাজার সৃষ্টি হওয়ায় কয়েক দশক ধরে মৌসুমি ফল হিসেবে আম একক আধিপত্য ধরে রেখেছে। কিন্তু জাতীয় ফল হলেও কাঁঠালের অবস্থা ভিন্ন।

আনারুল ইসলাম আরও বলেন, সব শ্রেণির মানুষের কাছে কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা সত্ত্বেও এর প্রসারে প্রধান বাধা ছিল উন্নত জাতের চারা। দেশে সনাতনী কায়দায় বীজ থেকে তৈরি চারা দিয়ে কাঁঠালের চাষ হয়ে আসছে। এ পদ্ধতিতে চারা লাগানোর ৭-৮ বছর পর ফল আসে। ফলে স্বাদ, মিষ্টতা ও ঘ্রাণ ঠিক থাকে না।

এসব কারণে চাষিরাও বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল চাষে আগ্রহী ছিলেন না। তবে নতুন উদ্ভাবিত জাতের মাধ্যমে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। বারি কাঁঠাল-৬-এর উদ্ভাবক বারির ফল বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান। নতুন জাতের উদ্ভাবন সম্পর্কে তিনি জানান, ২০০৯ সালে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উন্নত আগাম জাতের কাঁঠালের মাতৃজাত সংগ্রহ করে কলম চারা উৎপাদনে প্রথম সফলতা মেলে। ২০১৮ সালে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে উচ্চফলনশীল বারোমাসি কাঁঠালের কলম চারা উৎপাদনে গবেষণা শুরু হয়।সফলতা আসে ২০২১ সালে। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা রামগড় থেকে ১৫টি চারা সংগ্রহ করে প্রদর্শনী মাঠে রোপণের পর মাত্র দেড় বছরেই ১৩টিতে ফলন পাওয়া গেছে।

জিল্লুর রহমান আরও বলেন, নতুন জাতের একেকটি কাঁঠালের গড় ওজন ৩ দশমিক ৯৩ কেজি। বাইরের অংশ দেখতে হলুদাভ সবুজ। ভেতরে পাল্প (শাঁস) শক্ত, উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের ও আঠাবিহীন। মিষ্টতার পরিমাণ ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৬ টন।

বারির মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এ বছর ‘এক দেশ, এক অগ্রাধিকার’ পণ্য হিসেবে বাংলাদেশের জন্য কাঁঠালকে বাছাই করেছে। কাঁঠাল পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি অর্থকরী ফল। দেশে প্রায় ১৭ লাখ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয়; যা থেকে বছরে আয় হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। কাঁঠাল থেকে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে