এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : একটি মুরগির বয়স সর্বোচ্চ কত হতে পারে? ভাবছেন ছয়-সাত বছর। কিন্তু যদি শোনেন ২১ বছরের বেশি বয়স তার, তখন কেমন লাগবে? আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যের একটি খামারে বড় হওয়া মুরগি পিনাটের বেলায় এটাই সত্যি। স্বাভাবিকভাবেই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের হিসাবেও সে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বয়সী মুরগি।
২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারি সবচেয়ে বেশি বয়সী মুরগি হিসেবে গিনেস বুকে যখন নাম ওঠে, তখন পিনাটের বয়স ২০ বছর ২৭২ দিন। তবে তাঁর রেকর্ডটি এই মুহূর্তে বেঁচে থাকা সবচেয়ে বেশি বয়সী মুরগির। এখন ২১ পেরিয়ে, পৃথিবীর এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি বয়সী মুরগি হিসেবে রেকর্ড বুকে জায়গা করে নেওয়া মাতিলদার রেকর্ডটি নিজের করে নেওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মার্সি পার্কার ডারউইন স্বামী বিলের সঙ্গে মিশিগানের যে খামারটিতে থাকেন, সেখানে তাঁদের সঙ্গী মুরগি ছাড়াও আছে কুকুর, বিড়াল, ময়ূর, হাঁস প্রভৃতি। এটি একটি ‘নো কিল ফার্ম’, অর্থাৎ এখানে কোনো প্রাণী হত্যা করা হয় না।
কিন্তু পিনাটের বেঁচে থাকাটাই মস্ত বড় এক বিস্ময়। ২১ বছর আগে মার্সি পার্কার একটি মুরগির পরিত্যক্ত করা আপাতত পচা মনে হওয়া কিছু ডিম অ্যালিগেটরের একটি পুকুরে ফেলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় এগুলোর মধ্য থেকে ক্ষীণ একটি চিৎকার শুনতে পান।
‘আমি দ্বিতীয়বার কিচিরমিচির শুনতে পেলাম। সেই সঙ্গে বুঝতে পারলাম যে ছানাটি বেঁচে আছে এবং তার খোসা থেকে বেরিয়ে আসার মতো ডিম দাঁত (অস্থায়ী একধরনের দাঁত) আছে বলে মনে হচ্ছে না।’ স্মৃতিচারণা করেন খামারের মালিক মার্সি পার্কার ডারউইন, ‘আমি আস্তে আস্তে তাকে খোসা ছাড়িয়ে বের করে আনলাম। তারপর দেখা গেল ছোট্ট ভেজা সেই বস্তু আমার হাতে বসে আছে।’
বাচ্চাটিকে মা মুরগির কাছে নিয়ে গেলেন ডারউউন। কিন্তু সে এটাকে গ্রহণ করল না। অতএব বাচ্চাটাকে একটি বাতির সাহায্যে তাপ দিলেন। একই সঙ্গে কীভাবে নিজে নিজে খেতে ও পান করতে হয় শেখালেন।
ছানাটি শুরুতে অন্য মুরগির বাচ্চাদের তুলনায় ছোট ছিল। কখনো এক পাউন্ডের বেশি হয়নি ওই সময় তার ওজন, যা খামারের অন্যান্য মুরগির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। তাই মার্সি তার নাম রেখেছেন পিনাট বা চিনাবাদাম। মিশিগানের এই নারী কখনোই কল্পনা করেননি যে শরীরে বাদামি ফুটকির মুরগিটি মার্সি ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে থাকবে। তাঁরা গত মে মাসে পিনাটের জন্মদিন উদ্যাপন করেন। আগের মতোই সুস্থ এবং চঞ্চল আছে মুরগিটি। একটা সময় পর্যন্ত নিয়মিত ডিম দিয়েছে এবং বাচ্চা-কাচ্চার মাও হয়েছে সে।
মার্সি জানান, মুরগি পছন্দ করেন এমন এক বন্ধু টড গিলিহান গিনেস রেকর্ডের জন্য আবেদন করতে উৎসাহ দেন তাঁকে। ওই বন্ধু মাতিলদা নামের একটি মুরগি সম্পর্কে জানতেন, যেটি ১৪ বছর বয়সে রেকর্ডটির মালিক হয় ২০০৪ সালে, দুই বছর পর এটি মারা যায়। কিন্তু পিনাট ওই রেকর্ড অতিক্রম করে আরও বেশ কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে। অতএব মার্সি আবেদন করতে রাজি হলেন। যা হোক, একটি মুরগির বয়স প্রমাণ করা খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। যেখানে একটি মুরগি সাধারণত পাঁচ থেকে আট বছর বাঁচে।
‘আমার কাছে বন্ধু ও ভাতিজা-ভাতিজিদের সঙ্গে কিছু ছবি (পিনাটের) ছিল। অনেক বছর আগে ওটার সঙ্গে ছবিগুলো তুলেছিল তারা। এই ছবিগুলো ছিল আমাদের বড় প্রমাণ।’ ডারউইন বলেন।
পিনাট এখন রেকর্ড বুকে নাম ওঠা ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বয়সী মুরগির জায়গা দখলের দিকে এগোচ্ছে ধীরে ধীরে। মোটামুটি ২১ বছর চার মাসের মতো বয়স তার এখন, এদিকে রেকর্ডটি যার দখলে, সেই মাফি ২০১১ সালে মারা যায় ২৩ বছর ১৫২ দিন বয়সে।