এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ঘটনা মাস ছ’য়েক আগের৷ অন্যান্য দিনের মত সবার সঙ্গে কথাটথা বলে রাতে আর পাঁচটা দিনের মতোই শুতে গিয়েছিলেন বছর বাহান্নর তমাল রায়৷ কিন্তু পরের দিন আর ঘুম থেকে ওঠেননি তিনি৷
চিকিত্সক জানান, হৃদযন্ত্র আচমকা বিকল হয়ে যাওয়ার ফলেই এ বিপত্তি ঘটেছে৷ তবে শহর কলকাতায় এ ধরনের ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়৷ প্রত্যেক বছর শহরে এমন মৃত্যুর ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে৷
কান-নাক-গলা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে রাতে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার বদাভ্যাস৷ ঘুমের মধ্যে আচমকা থমকে যায় হৃদযন্ত্রের স্পন্দন৷ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলে সেই ব্যক্তির মৃত্যু অবধারিত৷
শনিবার শহরে যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজে আয়োজিত এক কর্মশালা ‘নাক ডাকা’ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে এই সতর্কবার্তাই শোনালেন দেশের নানাপ্রান্তের ইএনটি বিশেষজ্ঞরা৷
কর্মশালা আয়োজক অ্যাসোসিয়েশন অফ ওটোল্যারিংগোলজিস্টের রাজ্য শাখার ইএনটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামীদিনে এই সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে৷ কারণ ফাস্ট-ফুড জীবনযাত্রার জন্য নাক ডাকার সমস্যা আরো বাড়ছে৷
কর্মশালায় উপস্থিতি বিশেষজ্ঞদের আক্ষেপ, এ রাজ্যে পাশাপাশি দেশেও চিকিত্সকরা ‘নাক ডাকা’ সমস্যা নিয়ে তেমনভাবে সচেতন নন৷ ফলে সাধারণ মানুষকেও এ নিয়ে সতর্ক করার কাজে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে৷
কর্মশালায় অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন বিশিষ্ট ইএনটি বিশেষজ্ঞ সীমাব শেখ৷ তিনি বলেন, চিকিত্সকদের উচিত বেশি করে নাক ডাকার নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা৷ সবাই পরিকাঠামো নেই বলে অন্যত্র রেফার করেই দায়িত্ব ঝেড়ে ফেললে ভুল হবে৷ প্রত্যেকের নিজ-নিজ পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রোগটির চিকিত্সা শুরু করা উচিত৷
কর্মশালায় উপস্থিত অন্য এক ইএনটি বিশেষজ্ঞ সৌরেন পাঁজা দাবি করেন যে, শহরের জন্যসংখ্যার ৩০ শতাংশ এই ‘নাক ডাকা’ রোগে আক্রান্ত৷ এর মধ্যে পুরষদের সংখ্যাটাই বেশ৷ তিনি বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষ হাইপারটেনশন আক্রান্ত৷ অধিকাংশই স্থুলতাজনিত রোগে ভোগেন৷ এর ফলে সমস্যা একটু একটু করে মারণ পরিস্থিতিতে পৌঁছে যায়৷
একইরকমভাবে অ্যাসোসিয়েশন অফ ওটোল্যারিংগোলজিস্টের রাজ্য শাখা সচিব এবং কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, সামান্য বদভ্যাস মরণ হতে পারে ভবিষ্যতে৷ তাই প্রথম থেকেই এর প্রতিকার করা জরুরি৷ সামান্য খাদ্যাভাস এবং জীবনশৈলী পরিবর্তন করলেই ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব এই মারণব্যাধি৷
তিনি বলেন যে, ইএনটি বিশেষজ্ঞদের ‘নাক ডাকা’ যে কতটা ক্ষতিকারক তা সাধারণ মানুষকে যেমন বুঝিয়ে উঠতে পারেন না তেমনই নিজেরাও উপেক্ষা করেন৷ তাই ‘সাইলেন্ট কিলার’ হিসেবে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি নাক ডাকাও অল্প দিনের মধ্যে প্রথম সারিতে স্থান করে নেবে বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের৷ সূত্র : এই সময়