এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : চাঁদ নিয়ে নানা রূপকথা, লোককথা প্রচলিত রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই। চাঁদ যেমন সাধারণ মানুষের কাছে সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ধরা দিয়েছে, তেমনি বিজ্ঞানীদের কাছেও এক রহস্যময় বস্তু হিসেবে ধরা দিয়েছে, যার অনেক কিছুই এখনো অজানা-অচেনা। তাই বিশ্বের একাধিক দেশ চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছে গবেষণার জন্য। পাঠিয়েছে মানুষও। উদ্দেশ্য একটাই, চাঁদের বিষয়ে আরও আরও নতুন তথ্য জানা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা চাঁদের গঠনের বিষয়ে এক নতুন তথ্য আবিষ্কার করেছেন।
অনেক আগে অ্যাপোলো মিশনের রেখে আসা ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি দেখতে পেয়েছেন, চাঁদ মূলত একটি নিরেট গোলক এবং এর গাঠনিক উপাদান যথেষ্ট ঘন। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই আবিষ্কার চাঁদের অভ্যন্তর কেমন—নিরেট নাকি গলিত পদার্থ দিয়ে পরিপূর্ণ—সেই বিতর্কের অবসান ঘটাবে। পাশাপাশি চাঁদের গঠনের ইতিহাসও জানা যাবে এ থেকে।
চাঁদের গঠনবিষয়ক এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচারে। ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, চাঁদ যে উপাদান দিয়ে গঠিত, তাঁর ঘনত্ব আমাদের পৃথিবীর ধাতু লোহা বা আয়রনের প্রায় সমান। সাধারণত, কোনো গ্রহ বা উপগ্রহের অভ্যন্তরীণ গঠন কেমন তা নির্ণয় করা হয় সাইজমিক ডেটা বা ভূকম্পনজনিত তথ্য-উপাত্ত থেকে। বিশেষ করে ভূকম্পনের ফলে সৃষ্ট শব্দতরঙ্গ যেভাবে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে এবং আসার পথে সেই গ্রহ বা উপগ্রহের অভ্যন্তরের পদার্থের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে প্রতিফলিত হয়, সেটা থেকে সেই গ্রহ বা উপগ্রহের গাঠনিক উপাদান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। এই তথ্য-উপাত্ত থেকে এমনকি চাঁদের অভ্যন্তরীণ গঠনের বিস্তারিত চিত্রও আঁকা সম্ভব।
বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, চাঁদের কেন্দ্রভাগের গঠন অনেকটাই পৃথিবীর কেন্দ্রভাগের মতো। বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, চাঁদের কেন্দ্রভাগটি নিরেট পদার্থ দিয়ে তৈরি এবং এর ঠিক বাইরে তরল পদার্থের একটি আবরণ রয়েছে। চাঁদের কেন্দ্রভাগের ব্যাসার্ধ প্রায় ২৫৮ কিলোমিটার এবং এর ঠিক বাইরে অবস্থিত যে আবরণ রয়েছে, তার ব্যাসার্ধ ৩৬২ কিলোমিটার।
বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে দেখেছেন, চাঁদের কেন্দ্রভাগের গাঠনিক উপাদানের ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৭ হাজার ৮২২ কিলোগ্রাম, যা পৃথিবীর ধাতু লোহার ঘনত্বের প্রায় সমান।
মজার ব্যাপার হলো, ২০১১ সালেও নাসার মার্শাল প্ল্যানেটারি সায়েন্সের বিজ্ঞানী রেনে ওয়েবারের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানীও এ বিষয়ে প্রায় একই তথ্য জানিয়েছিলেন। তাঁরা সে সময় জানিয়েছিলেন, চাঁদের কেন্দ্রভাগের ব্যাসার্ধ প্রায় ২৪০ কিলোমিটার এবং চাঁদের কেন্দ্রভাগের গাঠনিক উপাদানের ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ৮ হাজার কিলোগ্রাম।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আজ থেকে ৩২০ কোটি বছর আগে যখন চাঁদ গঠিত হয়েছিল, তখন এই উপগ্রহটির একটি শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের সেই চৌম্বকক্ষেত্র বিলীন হয়ে গেছে। সাধারণত কোনো একটি গ্রহ বা উপগ্রহের কেন্দ্রভাগের গতির কারণেই চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। তাই এই আবিষ্কার হয়তো বিজ্ঞানীদের জানতে সহায়তা করবে, কেন চাঁদের চৌম্বকক্ষেত্র গায়েব হয়ে গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের গবেষক আর্থার ব্রাউড। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল চাঁদের চৌম্বকক্ষেত্রের বিবর্তনসংক্রান্ত বিষয়টিকে প্রশ্নের মুখোমুখি করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রভাগের অস্তিত্ব বিষয়ে জানতে পারায় বিষয়টি আমাদের জন্য সহজ হয়েছে। এই আবিষ্কার সৌরজগৎ সৃষ্টি প্রথম ১০০ কোটি বছরে চাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন মহাকাশীয় বস্তুর সংঘর্ষের সময়রেখা সম্পর্কে যথেষ্ট অন্তর্দৃষ্টি সামনে হাজির করেছে।’