এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আধুনিক বিশ্বের অন্যতম আলোচিত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। হুইলচেয়ারই ছিল প্রয়াত এই পদার্থবিদের নিত্যসঙ্গী। তবে অসাধারণ এ প্রতিভাবান বিজ্ঞানীর কাছে তার হুইলচেয়ার কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং হুইলচেয়ারে বসেই মৃত্যুর কিছুদিন আগে মানবসভ্যতা নিয়ে বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন।
হকিংয়ের শীর্ষ ৫ ভবিষ্যদ্বাণীর একটি তালিকা করেছে কেমব্রিজ নিউজ। মিরর ও নিউইয়র্ক পোস্টের পৃথক প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
পৃথিবী ধ্বংস হবে আগুনের গোলায়
স্টিফেন হকিং পৃথিবী ধ্বংসের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, ‘৬০০ বছরের কম সময়ের মধ্যেই আমরা সবাই মারা যাব। কারণ, পৃথিবীতে মানুষ বেড়ে যাবে এবং আমাদের যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হবে, এতে পুরো পৃথিবী পুড়ে লাল হয়ে যাবে।’ অর্থাৎ পৃথিবী আগুনের গোলায় পরিণত হবে।
চীনের বেইজিংয়ে টেনসেন্ট উই সামিটে তিনি এ তত্ত্ব দেন। ওই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা তাদের ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন। হকিং বলেন, ‘২৬০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর মানুষের কাঁধে কাঁধ ঠেকে যাবে। তাদের যে বিদ্যুৎ লাগবে, এতে পৃথিবী লাল গোলা হয়ে যাবে।’
হকিং জানান, পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে মার্কিন টিভি সিরিজ ‘স্টার ট্রেক’ থেকে ধারণা নিতে হবে। যেখানে কেউ যায়নি-এমন কোথাও বা ভিনগ্রহে দ্রুত জায়গা খুঁজে নিতে হবে এবং আলোর গতিতে যোগাযোগের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।
রোবটরা দখল করবে দুনিয়া
অধ্যাপক স্টিফেন হকিংয়ের আরেকটি ভবিষ্যদ্বাণী হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষকে হটিয়ে দেবে। উইয়ার্ড ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হকিং বলেছিলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে আমাদের যেমন সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত, তেমনি এটা মনে রাখতে হবে যে তারা হবে বিপজ্জনক।’
হকিং আরও বলেন, ‘আমার ভয় হচ্ছে, তারা সত্যিই মানুষকে হটিয়ে দেবে। মানুষ যদি কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি করতে পারে, তবে কেউ এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করে বসবে, যে তাকেই সরিয়ে দেবে। এটি জীবনের আরেকটি রূপ হবে এবং বুদ্ধির দিক থেকে এটি মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে।’
পারমাণবিক প্রযুক্তি ও মানুষের আগ্রাসনে ধ্বংস হবে পৃথিবী
বর্তমানে বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেকগুলো দেশের হাতেই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। যেকোনো সময় বেধে যেতে পারে যুদ্ধ। ৭৫তম জন্মদিনে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, ‘মানুষের ভেতর লোভ ও আগ্রাসন তৈরি হয়েছে। সংঘর্ষ কমার কোনো লক্ষণ তাতে নেই। সমরাস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম পৃথিবীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার স্বপ্ন দেখতে হলে মহাকাশে স্বাধীন কলোনি স্থাপন করতে হবে।’
অন্য গ্রহে জায়গা খুঁজতে হবে দ্রুত
মানব প্রজাতির বিলুপ্তি এড়াতে প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজে লাগাতে হবে এবং আরও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ অর্জন করতে হবে বলে মন্তব্য করেনে স্টিফেন হকিং। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা বসবাসের জন্য অন্য গ্রহ খুঁজে না পাই, জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মহামারী এবং যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত আমাদের বিলুপ্ত করে দেবে।’
বিবিসির প্রামাণ্য তথ্যচিত্র ‘এক্সপিডিশন নিউ আর্থ’-এর জন্য দেয়া সাক্ষাৎকারে হকিং জানিয়েছিলেন, ‘তিনি বিশ্বাস করেন যে, আমাদের গ্রহটি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যেখান থেকে ফেরার আর কোনো উপায় নেই।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জলবায়ু পরিবর্তন
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক ছিলেন স্টিফেন হকিং। প্যারিসে জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে ট্রাম্প যখন সই করতে অনীহার কথা জানান, তখন সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন হকিং।
সে সময় বিবিসিকে হকিং বলেন, ‘জলবায়ু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে আসার সিদ্ধান্ত পৃথিবীকে ধ্বংসের কিনারে ঠেলে দেবে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী শুক্র গ্রহের মতো হয়ে যাবে, যেখানে তাপমাত্রা ২৫০ ডিগ্রি ছুঁয়ে যাবে, সালফার বৃষ্টি হবে। আমাদের সামনে এখন অন্যতম বড় বিপদ এই জলবায়ু পরিবর্তন। আমরা পদক্ষেপ নিলে এ বিপদ প্রতিরোধ করতে পারি।’
ট্রাম্পের সমালোচনা করে হকিং বলেন, ‘জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ট্রাম্প আমাদের এ সুন্দর পৃথিবীটার পরিবেশের ক্ষতি করছে, আমাদের ও শিশুদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের মুখে দাঁড় করাচ্ছে।’