এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বিজ্ঞানীরা বলছেন, জিনগত উপায়ে পরিবর্তিত হার্পিজ ভাইরাস ত্বক ক্যানসারের কোষগুলোকে আক্রমণ করে কয়েকজন রোগীকে সারিয়ে তুলেছে।
ওয়েলকাম কালেকশনজিনগত উপায়ে পরিবর্তিত হার্পিজ ভাইরাস ব্যবহার করে ত্বকের ক্যানসারের পরীক্ষামূলক চিকিৎসায় সাফল্য পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী। ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করার প্রচেষ্টায় ভাইরাসভিত্তিক ওষুধের কার্যকারিতা এই প্রথম প্রমাণ হলো। এতে ক্যানসারের চিকিৎসায় কোমোথেরাপির মতো পদ্ধতির বিকল্প চালু হওয়ার সম্ভাবনাও জোরালো হয়েছে।
লন্ডনের দি ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চের ওই বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রতিবেদন আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, নতুন ওষুধটি শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তাই ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলক কম। এটি ত্বক ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকার সময়সীমা তিন বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
গবেষকদের ওই সাফল্যের ফলে ত্বক ক্যানসারজনিত টিউমারের (মেলানোমা) চিকিৎসায় টি-ভিইসি (টেলিমোজিন ল্যাহেরপারেপভেক) ইনজেকশনটি মার্কিন ও ইউরোপীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেতে পারে। পরিণত মেলানোমায় আক্রান্ত ৪৩৬ জন রোগীকে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বাছাই করেন গবেষকেরা।
ওষুধ প্রস্তুতকারক মার্কিন প্রতিষ্ঠান অ্যামজেনের তৈরি টি-ভিইসি ইনজেকশনটি ওই রোগীদের সবাই অন্তত ছয় মাস ধরে ব্যবহার করেন। তাঁদের কয়েকজনের রোগটি ছয় মাসের বেশি সময় নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর যাঁদের ক্যানসার অপরিণত অবস্থায় রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ওষুধটির কার্যকারিতা তুলনামূলক বেশি। মেলানোমা কম পরিণত অবস্থায় রয়েছে—এমন ১৬৩ জন রোগীর ওপর টি-ভিইসি ইনজেকশন প্রয়োগ করে দেখা যায়, তাঁদের বেঁচে থাকার গড় সময়সীমা ৪১ মাস। কিন্তু অন্য ওষুধ গ্রহণকারী রোগীদের ক্ষেত্রে ওই গড় সময়সীমা ২১ মাস ৫ দিন।
দি ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চের গবেষক কেভিন হ্যারিংটন বলেন, ক্যানসারের চিকিৎসায় টি-ভিইসির মতো ভাইরাসভিত্তিক ওষুধ প্রয়োগ করে সাফল্য পাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত আনন্দের। এই ওষুধগুলো ক্যানসার কোষ বা টিউমারের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী আক্রমণ গড়ে তোলে। ফলে কোষগুলো সরাসরি মরে যায় এবং এগুলোর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
টি-ভিইসি নামের ওষুধটি তৈরির জন্য হার্পিজ ভাইরাস থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ জিন অপসারণ করা হয়। ফলে এটি মানবদেহের সুস্থ কোষের ওপর আক্রমণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং কেবল ক্যানসার কোষকে আক্রমণ করতে পারে। বর্তমানে প্রচলিত ক্যানসারের চিকিৎসা-পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও অস্ত্রোপচার উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এগুলো প্রয়োগ করে সেরে ওঠার পরও রোগীর শরীরে নতুন করে ক্যানসার কোষ তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়ে যায়। নতুন পদ্ধতিটি কেবল ত্বক ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলেও বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এটির আদলে শরীরের অন্যান্য অংশের ক্যানসারের চিকিৎসাও বের করা যাবে।
যুক্তরাজ্যে যত ধরনের ক্যানসার দেখা যায়, সেগুলোর মধ্যে মারাত্মক ত্বক ক্যানসার (মেলানোমা) পঞ্চম শীর্ষস্থানে রয়েছে। প্রতিবছর দেশটিতে কমপক্ষে ১৩ হাজার মানুষের শরীরে রোগটি শনাক্ত করা হয়। আর এতে আক্রান্ত হয়ে সেখানে বছরে অন্তত দুই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
দি ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক পল ওয়ার্কম্যান বলেন, ভাইরাসগুলোকে আমরা সাধারণত মানবজাতির শত্রু মনে করি। কিন্তু মানবদেহের কোষকে আক্রমণ করে মেরে ফেলার যে ক্ষমতা তাদের রয়েছে, সেটিকে কাজে লাগিয়েই ক্যানসার রোগের সম্ভাবনাময় চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
কেবল যুক্তরাজ্যে নয়, মানুষের চিকিৎসায় টি-ভিইসির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকায়ও। অধ্যাপক কেভিন হ্যারিংটন আরও বলেন, সরাসরি ক্যানসার কোষের ওপর ভাইরাসভিত্তিক চিকিৎসা বা ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। ফলে কেমোথেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসার তুলনায় নতুন পদ্ধতিটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।
সূত্র: এএফপি ও টেলিগ্রাফ।