সাদিসা তাজদাদ: সফল মানুষের সকালের রুটিনের অন্যতম অংশ হলো সকালের নাস্তা এবং ব্যায়াম। ব্যক্তিত্বের উন্নতি সাধন, সৃজনশীলতার প্রকাশ এবং কাজে মনোযোগ দেওয়ার জন্য সকালের সময়টাই উত্তম।
সকালে ওঠার অভ্যাস আপনাকে কাজের প্রতি আগ্রহী এবং উদ্যামী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। সফল মানুষের সকালের ১০টি অভ্যাস সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
১. সকালে নাস্তা খাওয়া
সকালে স্বাস্থ্য-সম্মত আপনার দেহে জ্বালানী হিসেবে কাজ করে। এটি শুধু আপনার শরীরে শক্তিই সরবরাহ করে না, সেইসঙ্গে এটিবিপাককে উন্নত করে এবং আপনার ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। সকালের নাস্তা ভালো হলে মন ভালো ও উৎফুল্ল থাকে। তাজা ফলের সঙ্গে ওটমিল বা অ্যাভোকাডো এবং ডিমের সঙ্গে টোস্ট খেতে পারেন। সুস্বাদু এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
২. কফি বাদ দিন
কফি কখন খাবেন? বিজ্ঞানীদের মতে কফি দিনের বেলা খাওয়া উত্তম। প্রচলিত আছে যে, সকালে কফি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।
• শক্তি হ্রাস করে: কফি খাওয়ার পরে প্রথমে সাময়িক উৎফুল্ল লাগে কিন্তু পরবর্তীতে তা ক্লান্তির কারণ হতে পারে। কারণ এতে ক্যাফেইন থাকে।
• নার্ভাসনেস বেড়ে যাওয়া: ক্যাফিন সেবন উদ্বিগ্নতা এবং নার্ভাসনেস বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে মাথাব্যথা এবং নার্ভাসনেস দেখা দেয়।
• মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের শোষণ হ্রাস: ক্যাফেইন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের শোষণে বাধা দেয়।
• কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে: ক্যাফেইন কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে, যার ফলে বলিরেখা বেড়ে যায় এবং ত্বকের আরও অন্যান্য সমস্যা দেখা যায়।
সকালে পানি খাওয়ার সুবিধা অনেক। যেমন,
• রিহাইড্রেশন: সকালে পানি পান করার ফলে রাতে হারানো ফ্লুয়িডের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।
• মেটাবোলিজম বাড়ায়: সকালে পানি পান করা মেটাবোলিজমকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে, সেইসঙ্গে আপনার শরীরের ক্যালোরি পোড়াতেও সহায়তা করে।
• এনার্জি মাত্রা বাড়ানো: এনার্জির মাত্রা বাড়ানোর জন্য এবং বজায় রাখার জন্য পানি অপরিহার্য। সকালে পানি পান করার অভ্যাস বাড়াতে এবং ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে।
• হজম শক্তি বাড়ানো: খালি পেটে পানি পান করলে তা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। বিশেষ করে গরম পানি খাদ্য হজমে সাহায্য করে।
• ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করা: ত্বকেকে হাইড্রেটেড রাখে সেইসঙ্গে ত্বকের নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। শুষ্কতা কমায় এবং ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
৫. বই পড়া
সকালে বই পড়া একটি ভালো অভ্যাস। সকালে বই পড়া দিয়ে দিন শুরু করলে তা আপনার জ্ঞান, সৃজনশীলতা এবং আত্মিক শান্তি বাড়াতে সাহায্য করে। যেকোনো ধরনের বই আপনার জ্ঞান বাড়াতে সাহায্য করে। বই পড়া আপনার দৈনন্দিন জীবনে জ্ঞান বিকাশের সাহায্য করে।
৩. পোষা প্রাণীর সঙ্গে হাঁটা
পোষা প্রাণীদের সাথে সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। পোষা প্রাণীর সাথে সকালের হাঁটলে তা আপনার এবং পোষা প্রাণী উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক। এটি স্বাস্থ্যের উন্নতি করার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও বাড়ায়। হাঁটার অভ্যাস আপনার হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করতে সাহায্য করে, যার ফলে সারাদিন শক্তির মাত্রা বাড়ায়। সকালে এই অভ্যাস স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে, কারণ প্রাণীদের সাথে সময় কাটালে তা অক্সিটোসিন, হরমোন নিঃসরণে সহায়তা করে। সকালের তাজা বাতাস এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে মানসিক প্রফুল্লতা দেয় এবং ইতিবাচক চিন্তা করতে সাহায্য করে। নিয়মিত সকালে হাঁটার অভ্যাস আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে। সেইসঙ্গে জয়েন্টের ব্যাথা কমাতে এবং দেহকে ফিট রাখতেও সাহায্য করে।
৪. কোল্ড থেরাপি
এটি এমন থেরাপি যা ক্রায়োথেরাপি বা কোল্ড-ওয়াটার থেরাপি নামেও পরিচিত, এই থেরাপির উদ্দেশ্যে হলো শরীরকে ঠান্ডা রাখা।
• বিপাকের উন্নতি এবং ওজন হ্রাস: ঠান্ডা তাপমাত্রা বিপাককে গতিশীল করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে। ঠান্ডা এক্সপোজার বা ব্রাউন ফ্যাটকে সচল করেঅ এটি এক ধরনের ফ্যাট যা তাপ উৎপন্ন করে এবং ক্যালোরি পোড়ায়।
• ঘুম ভালো হয়: কোল্ড থেরাপিতে ঘুম ভালো হয়। ঠান্ডা প্রভাব তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা ভালো ঘুমের জন্য অত্যাবশ্যক।
• এনার্জি মাত্রা এবং সতর্কতা বাড়ানো: ঠান্ডা পানির থেরাপি এনার্জি মাত্রা বাড়াতে এবং সতর্কতা বাড়াতে সহায়তা করে।
• দ্রুত পেশীর ব্যাথা কমায়: কোল্ড থেরাপি পেশীর ব্যথা কম করতে সাহায্য করে এবং তীব্র শরীর ব্যথাও কমায়।
মনে রাখবেন, কোল্ড থেরাপি সবার জন্য না এবং যেকোনো নতুন থেরাপি শুরু করার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেয়া উচিত।
৫. মোবাইল ফোনকে না বলুন
ফোন ব্যবহারে কিছু অসুবিধা হতেই পারে। আমরা অনেকেই সবসময় ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকি ঘুম থেকে উঠেই। যেটা উচিত না একদমই। দুশ্চিন্তা কমাতে সারাক্ষণ ফোন, ইমেইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। তাতে আপনিই সুস্থও থাকবেন। ফোন কম ব্যবহার করলে আপনার স্বাস্থ্যও ঠিক থাকবে।