বিশ্বে বিনামূল্যে ইন্টারনেট দেবেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ফেসবুক প্রতিষ্ঠা মার্ক জুকারবার্গের একটি সফল উদ্যোগ ফেসবুক।
এবার ফেসবুকের চেয়েও বড় এক মিশনে নেমেছেন তিনি। বিশ্বের সবখানে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা করে দিতে চান ।
মার্ক জুকারবার্গের সফলতার এক মূলমন্ত্রের কথা সবারই জানা। সম্প্রতি সবাইকে সেই গোপন কথাটি নিজেই বলেছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা। খুব পুরোনো একটি মন্ত্রের কথাই বলেছেন তিনি। জীবনে যত বাধা-বিপত্তিই আসুক না কেনো স্বপ্নপূরণের পথে কখনো হাল ছেড়ো না। সফলতা আসবেই।
২০০৪ সালে হার্ভার্ডের ডরমিটরিতে বসে জুকারবার্গ তৈরি করেছিলেন বর্তমানে প্রায় ১৫০ কোটি মানুষের সামাজিক যোগাযোগের এই জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক। ফেসবুকের বর্তমান সফলতার পেছনে তাঁর এই হাল না ছাড়া মূলমন্ত্রই কাজ করেছে বলে সম্প্রতি ফেসবুকে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে জানিয়েছেন জুকারবার্গ।
ফেসবুকে জুকারবার্গকে প্রশ্ন করা হয়, ফেসবুকের সানফ্রান্সিসকোর অফিসে বসে কতক্ষণ কাজ করেন তিনি? দৈনিক ১০ ঘণ্টা নাকি আরও বেশি? জুকারবার্গ জানিয়েছেন, অফিসে কতক্ষণ কাজ করেন তা কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে। তিনি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ ঘণ্টা অফিসে থাকেন।
মার্ক জুকারবার্গের বর্তমান পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সবখানেই বিনা খরচে ইন্টারনেট আনার প্রকল্প ইন্টারনেট ডট ওআরজি এগিয়ে নিতে কাজ করছেন তিনি। ইউরোপ মহাদেশেও বিনা খরচে ইন্টারনেট আনা হবে বলে জানান জুকারবার্গ। এ ছাড়াও অন্যান্য দেশে এই প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে কাজ চলছে।
জুকারবার্গ জানান, ফেসবুকের বিনামূল্যের ইন্টারনেট প্রকল্প ইউরোপেও চালু হবে। শুধু ইউরোপ নয়, যাঁদের ওয়েবে যুক্ত হওয়ার দরকার এমন সবার কাছেই এই সেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। বিশ্বের ইন্টারনেট সুবিধা বঞ্চিত দুই তৃতীয়াংশ মানুষের কাছে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতেই তাঁর এই উদ্যোগ। এই প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে ভারত, জাম্বিয়া ও কলাম্বিয়াতে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা মিলছে। তাঁর তৈরি ইন্টারনেট ডট ওআরজি উদ্যোগটি মূলত বেসিক ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা নিয়ে কাজ করে।
জুকারবার্গবলেন, একেবারেই কোনো কিছু না থাকার চেয়ে নেটের জগতে সামান্য সংযোগ সুবিধা ও শেয়ার করার সক্ষমতা অনেক ভালো।
ফেসবুকের প্রশ্নোত্তর পর্বে জুকারবার্গকে প্রশ্ন করেন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী হিসেবে খ্যাত স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন। তিনি মার্ক জুকারবার্গকে প্রশ্ন করেন, বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষকে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার ধারণার সঙ্গে আমিও একমত। কিন্তু এতে সবচেয়ে বড় কী সুবিধা হবে বলে আপনি মনে করেন?’
জুকারবার্র্গ এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাস করার কারণে বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ উদ্যোক্তা ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় নেই। ইন্টারনেট ডট ওআরজি চালু হলে তাঁদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা উন্নত বিশ্বের কাছে, ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছাতে পারবে। আমরা যখন সারা বিশ্বে সংযোগ সুবিধা নিয়ে কথা বলছি, অধিকাংশ মানুষই এ থেকে কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে তা জানতে চাইবেন। আমার কাছে মনে হয়, বিনা মূল্যে ইন্টারনেট পেলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য-তথ্য, চাকরি-বাকরির তথ্য হাতের নাগালে আসবে। অনেকেই ধারণা করছেন, প্রতি ১০০ কোটি মানুষকে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় আনা গেলে তার মধ্যে ১০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্ত করা যাবে।
কিন্তু যাঁরা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন তাঁরা এ ক্ষেত্রে কী সুবিধা পাবেন? জাকারবার্গ বলেন, বিশ্বে অসংখ্য মেধাবী উদ্যোক্তা আছেন যাঁদের কাছে দারুণ সব ধারণা রয়েছে এবং তা দিয়ে পৃথিবী বদলে ফেলতে চান। কিন্তু তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সেই বেসিক টুল নেই। যদি জনসংখ্যার কথা বলেন, এ ধরনের দুই তৃতীয়াংশ উদ্যোক্তার ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। যখন তাঁরা ইন্টারনেট সংযোগের দুনিয়ায় আসবেন, আমরা তিনগুণ বেশি ভালো ধারণা পাব এবং নতুন সেবা তৈরি করতে পারব যা বিশ্বের সকলকে সুবিধা দেবে।
লক্ষ্য সম্পর্কে জুকারবার্গ জানান, আমাদের মিশন যেকোনো বিষয়ে অভিজ্ঞতা নিতে মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। যদি আপনার কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ না থাকে, কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সুযোগ না থাকে কিংবা অ্যানালগ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোনো কিছু তৈরির সুযোগ না থাকে তবে এরকম একটি মাধ্যম তৈরি করে তাদের স্বপ্নপূরণে সক্ষম করে তোলাটাও আমাদের লক্ষ্য।
নিজের বই পড়ার মিশন সম্পর্কে জুকারবার্গ বলেন, বর্তমানে পিটার হুবারের লেখা ‘অরওয়েলস রিভেঞ্জ’ বইটি পড়ছেন তিনি। জুাকারবার্গ বই পড়ার মিশন নিয়েও নেমেছেন। ‘আ ইয়ার অব বুকস’ নামে ভারচুয়াল বুক ক্লাবও রয়েছে তাঁর।
সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার