যে গ্রামের মৃতদেহ খুবলে খায় শকুনে
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আকাশের বুকে ঢেউ ভাঙার মতো পাহাড়। নীল-সাদার মেঘে ভেসে-ওঠা সবুজ বরণ। চারপাশে আর চারদিকে পাহাড় ঘেরা। সেই পাহাড়ের কোল চুয়েবয়ে চলেছে অজুত-সহস্র জলরাশি।
পাহাড়ি ঝরনার মতে সে নয়। পুরো কোলজুড়ে আপন বেগে পাগলপারা। ভুল ভাঙে কাছে গেলে। উপত্যকার মরীচিকা! হয়তো তাই। তবুও স্রোতই তো। সেই যে প্রাণের স্রোত।
পাহাড়ের কোলে এ এক গ্রাম। প্রকৃতি তার রূপরসগন্ধ যেন উজাড় করে দিয়েছে। তার ওপর খোদকারিতে আরো অপরূপা। হাজারে হাজারে বাড়ি। একঘরে পড়শি বসত করে। তবে গাঁয়ের পাশের আরশিনগর নয়। চীনের শেংদু থেকে ৩৭০ মাইল। ১২,৫০০ ফুট উঁচুতে শান্ত, নিরিবিলি গ্রাম। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ-বসতি। ৪০ হাজার বুদ্ধ সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনী আছেন সেখানে।
নানা ভাষাভাষির হলেও যাদের ঘর এক, পরিধান এক, ধর্ম এক, একসঙ্গে শিক্ষা। একসঙ্গে প্রার্থনা। দেশ-কালগণ্ডির সীমাবদ্ধতা নেই। কেউ এসেছেন পাশের তিব্বত থেকে, কেউ চীনেরই, কারো আগমন আবার মালয়েশিয়া থেকে।
কারো বা আসা তাইওয়ান, হংকং নয়তো সিঙ্গাপুর থেকে। উদ্দেশ্য একটাই, তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের পাঠ। সেই পাঠের জন্য এখানে গড়ে উঠেছে একটা প্রতিষ্ঠান, যার নাম লারুং গর বুদ্ধ অ্যাকাডেমি। এই অ্যাকাডেমিকে কেন্দ্র করেই চারপাশে বুদ্ধ-বসতি।
গা ঘেঁষাঘেঁষি পড়শি হলেও সেখানে একটা শৃঙ্খলা আছে। পড়শির বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী পাশাপাশি এক একটা জেলা। এ গ্রামের সবাই যে পড়ুয়া তা কন্তিু নয়। সেখানে কিছু তিব্বতীয় বাস করেন বংশপরম্পরায়। কিন্তু তারাও সেখানে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো নয়। সুন্দরভাবে মিলেমিশে রয়েছেন।
সব ঘর, সবার ঘরই প্রায় একরকম। তিনটে করে ঘর। কারো ঘরে আলাদা করে শৌচাগার নেই। বাড়ির অদূরে, নির্দিষ্ট জায়গায় একসঙ্গে, সবার জন্য শৌচাগার। বাড়ির রং-ও এক। লাল-খয়েরির মিশেল মিলন মহান যেন। ভোরে মন্দের প্রার্থনা, সবাইকে বেঁধে রেখেছে একসুরে।
এত পরিপাটি, তবু খুব বেশি আগের নয়, গত শতকের আশির দশকের প্রথমেই। এখানকার আবাসিকদের কাছে এ গ্রাম স্বর্গ। মৃত্যুর পর এখানে আলাদা করে শেষকৃত্যও হয় না। পাহাড়ের পাথুরে মাটি। যে মাটি খুঁড়ে সমাধিস্থ সম্ভব নয়।
তাই মৃত্যুর পর পাহাড়চুড়োয় রেখে আসা হয় মরদেহ। খুবলে খায় শকুনে। টেনে নিয়ে যায় কোনো বন্যপশু। এতে মন খারাপ হয় না। কারণ ওরা বিশ্বাস করেন, মৃত্যুর পর শরীর শূন্য কুম্ভের মতো। তাই সংরক্ষণ করে রাখার মানেও তারা পান না। তবে ছবির মতো গ্রামে কিন্তু টিভি নিষিদ্ধ। কোনো ঘরেই টিভি নেই। দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আইফোনে।
চাইলে যে কেউ-ই যেতে পারেন বদ্ধগ্রামে। বাইরের অতিথিদের জন্য দুটো আবাসও রয়েছে। পাহাড় বেয়ে কুড়ি ঘণ্টার কষ্টপথ হলেও এমনই তার হাতছানি, এলে কিন্তু ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না। আপন হতে আপনজন করে নিতে সময় লাগে না। তথ্যসূত্র : এই সময়