এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : অনলাইনে কোনো কাজ করতে গিয়ে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে গিয়ে ধীরগতির ইন্টারনেটের শিকার হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক যত কাজ, তার সবই কোনো না কোনো সময় শ্লথগতির ইন্টারনেটের কবলে পড়েছে। হোক সেটি ইউটিউবের ছোট কোনো ভিডিও কিংবা স্কাইপে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো সাক্ষাৎকার।
রাউটারের গতি
ইন্টারনেটের এ ধরনের আচরণের পেছনে বহুবিধ কারণ থাকতে পারে। তবে, অনেক সময়ই দেখা যায়, মূলত রাউটারের কারণে ইন্টারনেটের গতি ধীর হয়ে যাচ্ছে। আজ তাই ওয়াইফাই রাউটারের গতি বাড়ানোর ১০টি সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করা যাক।
রাউটারের অবস্থান
আপনি ঘরের ঠিক কোথায় রাউটারটি রাখছেন, সেটি চারপাশে কোন ধরনের বস্তুতে পরিবেষ্টিত, এসবই প্রভাব ফেলতে পারে আপনার ইন্টারনেটের গতিতে। পুরু দেয়াল, মেঝে বা আসবাবের ফাঁক গলে রাউটার নেটওয়ার্কের ছড়িয়ে পড়াটা কিন্তু মোটেও সহজ কোনো কাজ নয়। এমনকি ব্লুটুথ স্পিকারের মতো তারবিহীন যন্ত্রের তরঙ্গও রাউটারের পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই সর্বোত্তম হলো, রাউটারটিকে প্রয়োজনীয় ডিভাইসের যতটা সম্ভব কাছাকাছি এবং উঁচুতে রাখা। মেঝে কিংবা বদ্ধ কোন জায়গায় রাউটারকে না রাখার ব্যাপারেই বিশেষজ্ঞদের মত।
ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড পরিবর্তন
সহজ কথায় রাউটারের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড পরিবর্তনের অর্থ হলো, নেটওয়ার্ক ট্রাফিকের জন্য অন্য একটি পথ ব্যবহার করা। আধুনিক রাউটারগুলোয় সাধারণত ২ ধরনের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড দেখা যায় ২.৪ এবং ৫ গিগাহার্টজ। প্রথমটিতে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বেশি হলেও এটি বেশ দূরের ডিভাইসেও ওয়াই-ফাই পৌঁছে দিতে সক্ষম। তবে, তাতে ইন্টারনেটের গতি অনেকটাই কমে আসে। দ্রুতগতির ইন্টারনেটের জন্য বিশেষজ্ঞরা ৫ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এতে আবার নেটওয়ার্কের পরিসর ছোট হয়ে আসে।
যদি রাউটারের অবস্থান ডিভাইসের কাছাকাছি হয়, তবে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পেতে আপনি রাউটারটিকে ৫ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সিতে নিয়ে যেতে পারেন। তবে, অনেকেই দুটি ফ্রিকোয়েন্সি চালু রাখবার পরামর্শ দেন। কেন না, পুরনো অনেক ডিভাইস কেবল ২.৪ গিগাহার্টজেই কাজ করে। রাউটারের সেটিংস ম্যানুয়ালে সাধারণত এটির নির্দেশনা দেওয়া থাকে।
অ্যান্টেনার অবস্থান
ইন্টারনেটের গতির ক্ষেত্রে রাউটারের অ্যান্টেনার অবস্থানও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টেনাগুলো সাধারণত উলম্বভাবে সবদিকে সমানভাবে নেটওয়ার্ক সরবরাহ করে। তাই আপনার ওয়াইফাই সিগনালকে যদি ওপরে কিংবা নিচে পৌঁছাতে হয়, তবে চেষ্টা করুন অ্যান্টেনাকে আনুভূমিকভাবে রাখার। আর যদি ওয়াইফাই কেবল একটি তলাতেই দরকার পড়ে, তবে অ্যান্টেনাকে উল্লম্বভাবে রাখুন। এ ছাড়া, এখন শক্তিশালী অ্যান্টেনা আলাদা করেও কিনতে পাওয়া যায়৷ নেটওয়ার্কের মান বাড়াতে চাইলে সেটিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ওয়াইফাই এক্সটেন্ডার
যদি মনে হয় আপনার ওয়াইফাই রাউটার বাসাজুড়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক বজায় রাখতে পারছে না, তবে দ্বারস্থ হতে পারেন ওয়াই-ফাই এক্সটেন্ডার বা রিপিটারের। ওয়াই-ফাই এক্সটেন্ডার রাউটারের সিগন্যালের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে নেটওয়ার্কের পরিসর বাড়ানোর জন্য সিগন্যালের পুনরাবৃত্তি ঘটায়। রাউটারের বিভিন্ন দোকান বা অনলাইন থেকে এই যন্ত্রটি কেনা সম্ভব। মূল্য এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে।
পুরনো তারবিহীন প্রোটোকল নিষ্ক্রিয় করা
802.11ax প্রোটোকলের ওয়াই-ফাই রাউটারগুলো তুলনামূলকভাবে দ্রুতগতির হয়। তবে পুরানো প্রোটোকল ব্যবহার করছে এমন ডিভাইস, যেমন 802.11b, রাউটারের সংযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো নেটওয়ার্ককে ধীর করে দেয়।
রাউটারের হালনাগাদ
রাউটারকে নিয়মিত হালনাগাদ করাও ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির একটি উপায়। এই হালনাগাদের মধ্যে রয়েছে রাউটার প্রস্তুতকারক কোম্পানিটির বাজারে আনা সবশেষ সফটওয়্যার এবং ফার্মওয়্যার ব্যবহার করা।
নিয়মিত নেটওয়ার্কের নাম ও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন
খুব সহজেই অন্যের ব্যক্তিগত ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে পড়া যাচ্ছে, এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে টেক-বিশেষজ্ঞদের মত হলো ঘন ঘন ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের নাম ও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা। এতে একদিকে নেটওয়ার্কটি যেমন সুরক্ষিত থাকবে, অন্যদিকে অযাচিত কোন ডিভাইসের কারণে ইন্টারনেটের গতিও ধীর হবে না।
ভিন্ন চ্যানেলের ব্যবহার
এমন বহু অ্যাপ রয়েছে যার সাহায্যে আপনি নিজ ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের জন্য সবচেয়ে কম ট্রাফিক সংবলিত চ্যানেলটি খুঁজে বের করতে পারেন। রাউটারের সেটিংসের সাহায্যে সেই চ্যানেলের সঙ্গে রাউটারের নেটওয়ার্ক যুক্ত করে এর গতি বহুলাংশে বাড়িয়ে তোলা সম্ভব।
বাড়তি সংযোগ না দেওয়া
রাউটারের গতি বাড়াতে অদরকারি ডিভাইসগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যেতে পারে। অতিরিক্ত ডিভাইস নেটওয়ার্কের পথ বাধাগ্রস্ত করে। অযাচিতভাবে কেউ আপনার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে সেটিও খুঁজে বের করে বাদ দেওয়া সম্ভব।
রিস্টার্ট এবং রিবুট
রাউটারের গতিবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এটি অত্যন্ত প্রচলিত একটি পন্থা। টেক বিশেষজ্ঞরাও একদম প্রাথমিক ট্রাবলশুটিংয়ের ধাপ হিসেবে রাউটার রিস্টার্ট এবং রিবুটকে বিবেচনা করেন।